সন্ত্রাসমুক্ত নগর, ফরমালিনমুক্ত খাবার আর উন্নত চট্টগ্রাম গড়ার অঙ্গীকার নিয়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ইশতেহার ঘোষণা করেছেন বিএনপি সমর্থিত মেয়রপ্রার্থী মনজুর আলম।
Published : 23 Apr 2015, 04:15 PM
বৃহস্পতিবার বন্দরনগরীর এস এস খালেদ সড়কের রীমা কমিউনিটি সেন্টারে চট্টগ্রাম উন্নয়ন আন্দোলন আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তার ইশতেহার ঘোষণা করা হয়।
গত পাঁচ বছর চট্টগ্রামের মেয়রের দায়িত্বে থাকা মনজুর অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকলেও তার পক্ষে ইশতেহার পড়ে শোনান চট্টগ্রাম উন্নয়ন আন্দোলনের আহ্বায়ক অধ্যাপক আবুল কালাম আযাদ।
জলাবদ্ধতা নিরসনে পরিকল্পনার পাশাপাশি নগরীর পর্যটন সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো, প্রতি ওয়ার্ডে সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনাসহ মোট ৫৪টি প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয় ভোটারদের।
২০১০ সালের নির্বাচনে বিএনপিসমির্থত প্রার্থী মনজুর আলম ৫৬ দফা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদে ভাগ করা সেসব প্রতিশ্রুতির মধ্যে প্রধান ছিল জলাবদ্ধতা নিরসন।
এবারও নির্বাচনের মাত্র চার দিন আগে ‘নগরীকে জলাবদ্ধতামুক্ত করতে সর্বাত্মক উদ্যোগ’ নেওয়ার অঙ্গীকার এসেছে মনজুরের ইশতেহারে।
এতে বলা হয়, “উন্নয়ন একটি চলমান প্রক্রিয়া। এর শুরু আছে, শেষ নেই। তবে অপরিকল্পিত ও অসমন্বিত উন্নয়ন কার্যক্রম অভিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়।”
চট্টগ্রাম মহানগরীর আগ্রাবাদ, সিডিএ, হালিশহর, বাকলিয়া ও বহদ্দারহাট এলাকায় নেওয়া স্লুইস গেট প্রকল্প অবিলম্বে বাস্তবায়ন করারও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন সাবেক মেয়র।
তার ইশতেহারে জলাবদ্ধতা নিরসনে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের নেওয়া ড্রেজিং প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়ন এবং একনেকে অনুমোদন পাওয়া ২৯৭ কোটি টাকায় নগরীর বহদ্দারহাট থেকে কর্ণফুলী পর্যন্ত নতুন খাল খনন প্রকল্প বাস্তবায়নের কথা বলা হয়েছে।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (সিসিসি) উদ্যোগে নগরীর প্রতিটি ওয়ার্ডে সুপেয় পানি সরবরাহের জন্য একটি করে প্রকল্প বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করেছেন মনজুর।
এছাড়া বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় উপযুক্ত প্রকল্প গ্রহণ এবং নগরীর পর্যটন সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে মিরসরাই পর্যন্ত পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতের উন্নয়নের ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।
যানজট রোধে ব্যবস্থা
বন্দরনগরীর যানজট রোধে বিশ্বের উন্নত শহরের মতো বাইপাস সড়ক নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়ার কথা ইশতেহারে বলা হয়েছে।
এছাড়া জাইকা অনুমোদিত আউটার সার্কুলার রোড বাস্তবায়নে সিটি করপোরেশনের সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।
সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে দুটি থেকে বাড়িয়ে ছয়টি ফ্রি বাস সার্ভিস চালু করার আশাও দেন মনজুর।
ইশতেহারে পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারীদের বাটালি হিলের পুর্নবাসন প্রকল্পের আদলে নগরীর অন্যান্য এলাকায় পুর্নবাসন করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।
ইউনূসের আদলে কর্মসংস্থানের উদ্যোগ
আবার মেয়র হলে নোবেলজয়ী ড. ইউনূস প্রস্তাবিত সামাজিক ব্যবসার আদলে সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানে বিশেষ প্রকল্প নেওয়ার ঘোষণা দেন মনজুর আলম।
নতুন হোল্ডিং ট্যাক্স নয়
ইশতেহারে নতুন করে হোল্ডিং ট্যাক্স না বাড়িয়ে আদায় ব্যবস্থাকে সহজ করার ওপর জোর দিয়েছেন মনজুর আলম। এছাড়া ট্রেড লাইসেন্স ব্যবস্থা আরও সহজ করা হবে বলে উল্লেখ করা হয়।
সেবা নিয়ে অভিযোগ জানাতে নগরবাসীর জন্য প্রতি ওয়ার্ডে অভিযোগ বক্স খোলা হবে, যেগুলির প্রেক্ষিতে পদক্ষেপ নিয়ে নাগরিক সেবা নিশ্চিত করা হবে বলে ইশতেহারে উল্লেখ রয়েছে।
নাগরিক সেবা আরও সহজ করার কথাও এতে বলা হয়েছে।
আরও আয়বর্ধক প্রকল্প
মনজুর তার ইশতেহারে সিটি করপোরেশনের জন্য আরও আয়বর্ধক প্রকল্প নেওয়ার কথা বলেছেন।
আধুনিক ব্যায়ামাগার, পুরুষ ও মহিলাদের জন্য স্বল্প খরচে সুইমিং পুল করার কথাও বলা হয়েছে।
নিম্ন আয়ের মানুষদের জন্য আবাসন
নিম্ন আয়ের মানুষ বিশেষ করে গার্মেন্টস শ্রমিক, রিকশা, সিএনজি ও ভ্যানগাড়ির চালক, ট্রাক-বাস শ্রমিকদের জন্য দীর্ঘমেয়াদী কিস্তির মাধ্যমে আবাসন সুবিধার উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
আবার মেয়র হলে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বহুতল ভবন করে আবাসনের ব্যবস্থা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন মনজুর।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ওয়াই-ফাই চালু
ইশতেহারে প্রযুক্তির সমন্বয় ঘটিয়ে নগরীতে ডিজিটাল পাঠাগার ও গবেষণাগার স্থাপনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন মনজুর আলম।
শিক্ষার্থীদের জ্ঞানভাণ্ডার সমৃদ্ধ করতে সিটি করপোরেশন পরিচালিত স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ওয়াই-ফাই ইন্টারনেট ব্যবস্থা চালুর কথা বলেছেন তিনি।
এছাড়া সিসিসিতে কয়েকটি বিভাগে অটোমেশন চালু করা হয়েছে উল্লেখ করে পুনরায় নির্বাচিত হলে তথ্য প্রবাহের অবাধ ব্যবহার নিশ্চিত করতে সব বিভাগকে অটোমেশনের আওতায় আনা হবে।
নতুন ১০টি মসজিদ-মন্দির-গীর্জা নির্মাণ
আবার নির্বাচিত হলে চট্টগ্রাম শহরের বিভিন্ন এলাকায় নতুন পাঁচটি মসজিদ নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়।
অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের জন্য পাঁচটি মন্দির, প্যাগোডা ও গির্জা নির্মাণে সহযোগিতা দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে।
নতুন দুটি কবরস্থান ও একটি শ্মশানও করা হবে বলে ইশতেহারে বলা হয়েছে।
এছাড়া ফোরকানিয়া শিক্ষাকে প্রসারিত করতে ওয়ার্ড পর্যায়ে আরও শিক্ষক নিয়োগ ও শিক্ষাভাতা দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মনজুর আলম তার ইশতেহারে বলেন, সিটি করপোরেশনের কাজকে দলবাজি, চাঁদাবাজি ও স্বজনপ্রীতিমুক্ত করে স্বচ্ছতা-জবাবদিহিতার বিশ্বজনীন স্বীকৃত নীতিমালার আলোকে কার্যক্রম পরিচালনা করতে চান।
নগরজীবনে ‘আলো চাই, জল চাই, চাই মুক্ত বায়ু, চাই বল, চাই স্বাস্থ্য, আনন্দোজ্জ্বল পরমায়ু’এই বিশ্বাসে অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ চট্টগ্রাম মনজুর আলমের আজীবনের লালিত স্বপ্ন বলে ইশতেহারে তিনি উল্লেখ করেন।
ইশতেহার ঘোষণা অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান ও মনজুরের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান সমন্বয়কারী আবদুল্লাহ আল নোমান, নগর বিএনপির সভাপতি ও প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বিএনপির বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম আকবর খন্দকার, এলডিপি চেয়ারম্যান কর্নেল (অব) অলি আহমদ, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন, বিএনপিনেতা এস এম ফজলুল হক, সাবেক সাংসদ সরওয়ার জামাল নিজাম, কেন্দ্রীয় সদস্য মাহবুবুর রহমান শামীম, নগর সহ-সভাপতি শামসুল আলম, হেফাজত ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাঈনুদ্দিন রূহী ও উন্নয়ন আন্দোলনের সদস্য সচিব এস ইউ এম নুরুল ইসলাম ইশতেহার ঘোষণা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।