চট্টগ্রামকে ‘জলাবদ্ধতামুক্ত স্বপ্নের মেগাসিটি’ হিসাবে গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দিয়ে নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়রপ্রার্থী আ জ ম নাছির উদ্দিন।
Published : 22 Apr 2015, 12:26 PM
বুধবার বন্দরনগরীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউট মিলনায়তনে চট্টগ্রাম নাগরিক কমিটি আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে নাছির তার ইশতেহার তুলে ধরেন।
নির্বাচনী প্রচার শেষ হওয়ার পাঁচ দিন আগে ঘোষিত নাছিরের এ ইশতেহারের প্রথমেই ‘নগরবাসীর মতামতকে প্রাধান্য দিয়ে বিশেষজ্ঞ পরামর্শের ভিত্তিতে জলাবদ্ধতামুক্ত জনবান্ধব নগরী’ গড়ার অঙ্গীকার রয়েছে। সেই সঙ্গে এসেছে আরও ৩৫টি খাতভিত্তিক প্রতিশ্রুতি।
আগামী ২৮ এপ্রিল ঢাকার দুই সিটির সঙ্গে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্বাচন হবে, যাতে হাতি প্রতীক নিয়ে লড়ছেন নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাছির।
এ নির্বাচনে তার মূল প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী এম মনজুর আলম এখনো তার নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেননি।
১৯৯৫ সালে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ প্রণিত ‘মাস্টারপ্ল্যান’-এর সময়োপযোগী নবায়ন ও বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে নাছিরের ইশতেহারে বলা হয়, এর মাধ্যমেই চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা থেকে ‘মুক্তি সম্ভব’।
নাছির বলেন, “চট্টগ্রামকে ঘিরে সরকারের যে উন্নয়ন মহাপরিকল্পনা রয়েছে, আমি নির্বাচিত হলেই তা আরও পরিকল্পিতভাবে বাস্তবায়িত হবে। নগরবাসীর পরামর্শেই চলবে সিটি করপোরেশন।
“নগরীর ও জন-মানুষের উন্নয়নে নগরবাসীর মতামতই আমার কাছে মুখ্য। নির্বাচিত হলে দলের উর্ধে উঠে কার্যক্রম পরিচালনা করব।”
জলাবদ্ধতামুক্তিতে ছয় পরিকল্পনা
নির্বাচিত হলে বন্দরনগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ, পানি উন্নয়ন বোর্ড, সিডিএ, রেলওয়ে, পরিবেশ অধিদপ্তর, স্বাস্থ্য ও গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ, জেলা প্রশাসন, মহানগর পুলিশ ও ওয়াসাসহ সব প্রতিষ্ঠানকে নিয়ে কাজ করার ঘোষণা দেন নাছির।
এজন্য ‘বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে’ স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নেওয়ার কথা ইশতেহারে বলেছেন তিনি।
নাছির বলছেন, মেয়র হলে জলাবদ্ধতা নিরসনে আধুনিক খননযন্ত্র ব্যবহার করে খালের গভীরতা বাড়িয়ে চট্টগ্রামের খালগুলোকে আগের নাব্যতায় ফিরিয়ে নেওয়া হবে। বোর্ড গঠন করে খালে জমে থাকা আর্বজনা অপসারণ করা হবে।
বহদ্দারহাট থেকে কর্ণফুলী পর্যন্ত খালটি দ্রুত খনন এবং নতুন খাল খননের উদ্যোগ নেওয়ার কথাও ইশতেহারে বলেছেন এই আওয়ামী লীগ নেতা।
এছাড়া কর্ণফুলী নদীর সঙ্গে যুক্ত নগরীর প্রতিটি খালের মুখে স্লুইস গেট নির্মাণ করে জোয়ারের পানি নিয়ন্ত্রণ এবং জেগে ওঠা চর ড্রেজিং করে কর্ণফুলী নদীর পানি ধারণ ক্ষমতা বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি তিনি দিয়েছেন।
প্রশ্নোত্তরে জলাবদ্ধতা বিষয়ে নাছির বলেন, সিটি করপোরেশনের একার সক্ষমতা দিয়ে এসব সম্ভব নয়। সরকারের ‘বিশেষ সুনজর’ দরকার। সরকারদলীয় প্রার্থী হওয়ায় তার পক্ষেই এ প্রতিশ্রুতি ‘বাস্তবায়ন করা সম্ভব’।
“খাল-নালা দখলমুক্ত করতে আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হবে। দখলকারী যত শক্তিশালী হোক না কেন, চুল পরিমাণ ছাড় দেওয়া হবে না।”
জাতিসংঘের একটি শাখা কোটির সীমা ছাড়ানো জনসংখ্যার নগরীগুলোর নাগরিক সুবিধা ও নগর ব্যবস্থাপনা বিবেচনায় নিয়ে ‘মেগাসিটির’ তালিকা প্রকাশ করে জানিয়ে লিখিত বক্তব্যে নাছির বলেন, “চট্টগ্রাম এখনই হতে পারে বিশ্বের অন্যান্য মেগাসিটির মতো একটি আদর্শ গ্রিন মেগাসিটি, যদি এখানকার সম্পদ সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে পরিকল্পিত ও টেকসই উন্নয়ন করা যায়।
চট্টগ্রামের নাগরিক সুবিধার উন্নতিতে ‘যা দরকার সবই করার পরিকল্পনা’ রয়েছে জানিয়ে নাছির বলেন, “সমন্বয়হীনতার কারণে বিপুল সম্পদ ও অর্থের অপচয় হয়। তা রোধ করে কর হ্রাসের উদ্যোগ নেওয়া হবে।”
নির্বাচিত হলে ‘দলমত নির্বিশেষে উপদেষ্টা কমিটি করে’ তাদের পরামর্শ নিয়ে সিটি করপোরশন পরিচালনা করবেন বলেও তিনি অঙ্গীকার করেন।
তিনি বলেন, “মেগাসিটি একটা টার্গেট। কর্ণফুলীর তলদেশে টানেল হলে নদীর দুই পাড়ে শহর হবে। তখন জনসংখ্যা এক কোটি ছাড়িয়ে যাবে।”
‘টেকসই’ উন্নয়ন ও ‘ডিজিটাল’ চট্টগ্রাম
ইশতেহার ঘোষণা করে নাছির বলেন, উন্নয়ন ও সেবায় বরাদ্দ পাওয়া টাকার ‘যথেচ্ছ খরচ’ ও ‘প্রেশার গ্রুপের চাপে নতি স্বীকার’ না করে তিনি মানুষের কল্যাণে ব্যয় করতে চান।
“শুধু হাজার কোটি টাকার ফ্লাইওভার-টানেল ও ভবন-মার্কেট নির্মাণই টেকসই উন্নয়ন নয়। ৯৬ শতাংশ সাধারণ মানুষ যেন উন্নয়ন বঞ্চিত না হয় সেটা নিশ্চিত করাই টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্য।”
‘প্রেশার গ্রুপ’ কারা জানতে চাইলে নাছির বলেন, “কাউকে উদ্দেশ্য করে বলা হয়নি। এখানে অনাকাঙ্ক্ষিত অনেক কিছু ঘটে, তাই বলা হয়েছে।”
নতুন করে ফ্লাইওভার নির্মাণের বিপক্ষে কী না- এমন প্রশ্নে নাছির বলেন, “না, না । এগুলোরও প্রয়োজন আছে। তবে সবার উন্নয়ন দরকার।”
‘ডিজিটাল চট্টগ্রাম’ গড়তে ‘ই-গভর্নেন্স’, ‘ওয়ানস্টপ সেবা’, ‘স্মার্ট কার্ডে’ কর আদায় এবং পুরো নগরীকে ‘ওয়াইফাই জোনে’ পরিণত করার প্রতিশ্রুতি দেন নাছির।
এছাড়া শিক্ষার্থীদের জন্য বাস ভাড়ায় ছাড়, নারী ও শিশুদের জন্য আলাদা পরিবহন চালু, পাহাড় রক্ষা ও বনায়ন, পানি সংকট নিরসন ও জলাধার রক্ষা, কর্ণফুলী রক্ষা, করপোরেশনের শিক্ষা খাতের আওতা বাড়ানো, পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করা, স্বাস্থ্য সুরক্ষা, সড়ক সম্প্রসারণ, আবাসন সংকট নিরসনে প্রকল্প গ্রহণ, মাদক ও সন্ত্রাসমুক্ত সমাজ গড়া, সাবেক মেয়র মহিউদ্দিন আহমেদের সময় নেওয়া ‘আয় বর্ধক প্রকল্প’ আবার চালু করা এবং স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি রয়েছে ইশতেহারে।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী।
অন্যদের মধ্যে নাগরিক কমিটির চেয়ারম্যান ইসহাক মিয়া, চট্টগ্রামের সাংসদ আফসারুল আমীন, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, সাবেক হুইপ উপাধ্যক্ষ আবদুস শহীদ, ফেনীর সাংসদ নিজাম হাজারী, রামুর সাংসদ সাইমুম সরওয়ার কমল, সাংসদ সাবিহা মুছা, নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী, হাছান মাহমুদ, আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।