কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে বাসে পেট্রোল বোমা হামলা তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি করেছে জেলা প্রশাসন, যে হামলায় সাতজন যাত্রী পুড়ে মারা যান।
Published : 03 Feb 2015, 08:08 PM
বিএনপি জোটের হরতাল-অবরোধের মধ্যে এই নাশকতায় জড়িতদের গ্রেপ্তার দাবিতে মঙ্গলবার বিকালে ঘটনাস্থল মিয়াবাজারে প্রতিবাদ সভা করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।
স্থানীয় সংসদ সদস্য রেলপথমন্ত্রী মুজিবুল হক ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে আওয়ামী লীগের ওই প্রতিবাদ সমাবেশে যোগ দেন।
এদিকে নিহত সাতজনকে সনাক্তের পর ছয়জনের লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এই ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে চৌদ্দগ্রাম থানার ওসি উত্তম চক্রবর্তী জানিয়েছেন।
মঙ্গলবার ভোররাতে মিয়াবাজারের জগমোহনপুরে মহাসড়কে কক্সবাজার থেকে ঢাকাগামী ওই বাসে পেট্রোল বোমা ছোড়া হলে আগুন ধরে পুড়ে মারা যান সাত যাত্রী। এতে অগ্নিদগ্ধ হন ২৫ জন, যার ১০ জনকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
রেলপথমন্ত্রী ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে স্থানীয় একটি হোটেলে পুলিশ ও প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। ওই বৈঠকে তিনি নির্দেশ দেন, যে কোনো মূল্যে দুর্বৃত্তদের গ্রেপ্তার করতে হবে।
জেলা প্রশাসক মো. হাসানুজ্জামান কল্লোল সাংবাদিকদের জানান, এই হামলা তদন্তে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট মো. গোলামুর রহমানকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
নিহতদের পরিবার ও আহতদেরকে সরকারিভাবে সহায়তা দেওয়া হবে বলেও জেলা প্রশাসক জানান।
পুলিশ সুপার টুটুল চক্রবর্তী বলেন, “দুর্বৃত্তদের গ্রেপ্তার করতে পুলিশের পাশাপাশি র্যাব-বিজিবি সর্বোচ্চ চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।”
নাশকতাকারীদের বিষয়ে তথ্য দিতে সবার প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, তথ্যদাতাদের পরিচয় গোপন রাখা হবে।
চৌদ্দগ্রাম থানার ওসি উত্তম চক্রবর্তী বলেন, এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
কয়েকদিন আগে চৌদ্দগ্রামে একটি কভার্ড ভ্যান পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় পুলিশ যে মামলাটি করেছিল, তাতে অবরোধ আহ্বানকারী খালেদা জিয়াকে হুকুমের আসামি করা হয়েছে।
আওয়ামী লীগের সমাবেশে মুজিবুল বলেন, “বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার নির্দেশে বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের সন্ত্রাসীরা এ নৃশংস ও বর্বরোচিত ঘটনা ঘটিয়েছে। তবে বোমা মেরে মানুষ হত্যা করে বেগম খালেদা জিয়া ক্ষমতায় যেতে পারবেন না।”
বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলের ডাকা লাগাতার অবরোধে নাশকতায় গত প্রায় এক মাসে অর্ধশতাধিক নিহত হয়েছেন, যার বেশিরভাগই পুড়ে মারা যান।
৫ জানুয়ারি অবরোধ শুরু হওয়ার পর এক ঘটনায় চৌদ্দগ্রামেই সর্বাধিক মৃত্যু হয়েছে। এর আগে গত ১৪ জানুয়ারি রংপুরে বাসে পেট্রোল বোমায় অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যান পাঁচজন।
নিহতদের পরিচয়
যশোর জেলা সদরের ঘোপ সেন্ট্রাল রোডের বাসিন্দা হাজী রুকনুজ্জামানের ছেলে গণপূর্ত বিভাগের ঠিকাদার নুরুজ্জামান পপলু (৫১), তার একমাত্র মেয়ে যশোর পুলিশ লাইন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী নাইমা তাসনিন মাইশা (১৫), কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার গাইনাকাটা গ্রামের মৃত ছিদ্দিক আহম্মদের ছেলে আবু তাহের (৩৮) ও একই গ্রামের সালেহ আহম্মদের ছেলে আবু ইউসুফ (৫৫), নরসিংদীর পলাশ উপজেলার বালুরচর পাড়ার জসিম উদ্দিন মানিকের স্ত্রী আসমা আক্তার (৩৮) ও তার ছেলে মাহমুদুল হাসান শান্ত (১৩) এবং শরীয়তপুর জেলার ঘোষেরহাট থানার দক্ষিণ গজারিয়া গ্রামের মৃত নজরখার পুত্র ওয়াসিম।
এদের মধ্যে ওয়াসিম ছাড়া বাকি ছয়জনের লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর হয়েছে বলে ওসি উত্তম চক্রবর্তী জানান।
স্বামী-সন্তান হারিয়ে নির্বাক মিতা
স্বামী ও মেয়ের সঙ্গে বেড়াতে কক্সবাজারে গিয়েছিলেন যশোরের মাফরুহা মিতা। কিন্তু বাসে পেট্রোল বোমায় তাদের হারিয়ে এখন একাই বাড়ি ফিরতে হচ্ছে তাকে।
স্বামী নুরুজ্জামান পপলু ও মেয়ে মাইশার সঙ্গে ওই বাসে থাকা মিতা নিজেও সামান্য আহত হন।
হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তাকে নেওয়া হয় চৌদ্দগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দেবময় দেওয়ানের বাসায়। দেবময় সাংবাদিকদের বলেন, ঘটনার আকস্মিকতায় মিতা এখনও শোকবিহ্বল।
পপলুর আত্মীয় মারুফ হোসেন বিপুল জানান, পপলুর ১ ছেলে ও ১ মেয়ে। ছেলে আসিফুজ্জামান মাথিন ঢাকায় একটি প্রাইভেট ইউনিভাসির্টিতে পড়ছেন।
পপলুর বন্ধু যশোহর পৌরসভার কাউন্সিলার শেখ মুকসিমুল বারী অপু বলেন, “পপলু ব্যবসায়িক কাজে কক্সবাজার যাওয়ার সময় তার স্ত্রী ও মেয়ে বেড়াতে নিয়ে যাওয়ার আবদার ধরে। তখন তাদের নিয়েই রওনা হয় সে।”
পপলু জাসদের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তার মৃত্যুতে দলের সভাপতি ও তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু শোক জানিয়েছেন।