একাত্তরে যুদ্ধাপরাধের দায়ে এটিএম আজহারুল ইসলামকে মৃত্যুদণ্ডকে কলঙ্ক মোচন মনে করছে জামায়াতে ইসলামীর এই নেতার বাড়ি রংপুরের বদরগঞ্জের মানুষ।
Published : 30 Dec 2014, 06:13 PM
“এমন সাজা তার প্রাপ্য ছিল, আজ বাতাসন গ্রামসহ বদরগঞ্জ উপজেলার কলঙ্ক মোচন হল,” রায়ের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন আজহারুলের গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক আকবর আলী।
বদরগঞ্জ উপজেলার লোহানীপাড়া ইউনিয়নের বাতাসন গ্রামে আজহারের বাড়ি। এই জামায়াত নেতার মামলার রায়ের আগে বিজিবি মোতায়েন ছিল বদরগঞ্জে।
একাত্তরে হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণের দায়ে মঙ্গলবার দেওয়া রায়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আজহারকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে।
রায়ের পাওয়ার পর বদরগঞ্জে আনন্দ মিছিল বের হওয়ার পাশাপাশি অনেককে মিষ্টি বিতরণ করতেও দেখা যায়।
একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধা এখন রিকশাচালক তমিজউদ্দিন বলেন, স্বাধীনতার পর আলবদর কমান্ডার আজহারকে অনেক খুঁজলেও পাননি। পরে তাকে রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত অবস্থায় দেখতে হয়েছে।
“আজ কলঙ্ক কিছুটা ঘুচল। তবে ফাঁসির রায় দ্রুত কার্যকর হলে পুরো কলঙ্কই মোচন হবে।”
বাতাসন গ্রামের আজহার আল বদর নেতা হিসেবে রংপুরের কারমাইকেল কলেজের চারজন অধ্যাপক ও একজন অধ্যাপকের স্ত্রীকে কলেজ ক্যাম্পাস থেকে তুলে নিয়ে হত্যা করেছিলেন একাত্তরে।
রায়ের পর ওই অঞ্চলের সবচেয়ে বড় এই কলেজের শিক্ষকরা শহীদ শিক্ষকদের স্মৃতিফলকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।
গণিত বিভাগের সহকারী অধ্যাপক চিত্তরঞ্জন রায়, দর্শন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সুনীল কুমার চক্রবর্তী, বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রামকৃষ্ণ অধিকারী, রসায়ন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. কালাচাঁদ রায় ও তার স্ত্রী মঞ্জুশ্রী রায়কে তখন হত্যা করা হয়।
কারমাইকেল কলেজ শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সুজন শাহ্ ই ফজলুল বলেন, “দেরিতে হলেও রায়ে আমরা কারমাইকেল কলেজ পরিবার অত্যন্ত খুশি হয়েছি। এই রায়ের মাধ্যমে ইতিহাসের দায়বদ্ধতা থেকে মুক্ত হল। এখন রায় দ্রুত কার্যকর হলে শহীদ শিক্ষকদের আত্মা শান্তি পাবে।”
রায়ের প্রতিক্রিয়ায় রংপুর জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার মোসাদ্দেক হোসেন বাবলু বলেন, জাতির দায়মুক্তির আরেকটি রায় হল। জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করার ক্ষেত্রে দেশ আরও এক ধাপ এগিয়ে গেল।
একাত্তরে বোন ও ভগ্নিপতিকে হারানো রংপুরের সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাবেক সভাপতি কাজী মোহাম্মদ জুন্নুন বলেন, “আজহারুল রংপুরকে কলঙ্কিত করেছেন। ন্যায়বিচারের ফলে আজ সেই কলঙ্ক মোচন হল।”
বদরগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আব্দুল লতিফ জানান, রায় ঘোষণার পর উপজেলার ট্যাক্সেরহাট, মোকসেদপুর, ধাপপাড়া ও ঝাড়ুয়ারবিল এলাকার মানুষ আনন্দ মিছিল বের করে উল্লাস করে। এসময় তারা একে অপরের মধ্যে মিষ্টি বিতরণ করে।
একাত্তরের ১৬ এপ্রিল দুপুর ১টার দিকে পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে নিয়ে আজহার বদরগঞ্জ থানার ট্যাক্সেরহাট, মোকসেদপুর ও ধাপপাড়াসহ একাধিক গ্রামে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ চালায়। তারা মোকসেদপুর গ্রামে গুলি চালিয়ে ১৪ জন নিরস্ত্র বাঙালিকে হত্যা করে।
পরের দিন দুপুর ১২টা থেকে ৫টার মধ্যে ঝাড়ুয়ারবিলের আশেপাশের গ্রামে হামলা চালিয়ে ১ হাজার ২০০ এর বেশি হিন্দুকে গুলি চালিয়ে হত্যা করা হয়।