নিজেকে নির্দোষ দাবি করে যুদ্ধাপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা এটিএম আজহারুল ইসলাম বলেছেন, মানবতাবিরোধী অপরাধে ট্রাইব্যুনালের দেওয়া তার এই রায় ‘ফরমায়েশি’।
Published : 30 Dec 2014, 04:35 PM
একাত্তরে হত্যা, গণহত্যা ও ধর্ষণের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধে এর আগে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া সব জামায়াত নেতাই রায়কে ‘ফরমায়েশি’ বলেছেন।
মঙ্গলবার ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান এম ইনায়েতুর রহিম মানবতাবিরোধী অপরাধের তিন অভিযোগে আজহারের মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণা করার পর কাঠগড়ায় থাকা জামায়াতের এই সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল দাঁড়িয়ে যান।
সামনের দিকে হাত উঁচিয়ে বিচারকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, “এটা ফরমায়েশি রায়। আমি নির্দোষ। আল্লার আদালতে আপনাদের বিচার হবে ইনশাল্লাহ।”
এ সময় কাঠগড়ার পাশে থাকা পুলিশ সদস্যরা তাকে জোর করে বসিয়ে দেন। সেখানেও একই কথার পুনরাবৃত্তি করেন তিনি।
পরে রায় ঘোষণা শেষ হলে তিন বার ‘আল্লাহু আকবার’ ধ্বনি তুলে মুক্তিযুদ্ধকালীন রংপুরের বদর কমান্ডার আজহার বলেন, “আল্লাহ আপনাদেরও বিচার করবে।”
একাত্তরে জামায়াতে ইসলামীর তখনকার ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র সংঘের রংপুর জেলা কমিটির সভাপতি আজহারের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের আনা ছয় অভিযোগের মধ্যে পাঁচটি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। হত্যা, গণহত্যা ও ধর্ষণের তিনটি অভিযোগে তাকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে আদালত।
রায় পড়ার সময় অস্থিরতার মধ্যে থাকা আজহার চেয়ারে নানাভাবে অবস্থান বদলালেও হাসির রেখা দেখা যায় ধর্ষণের অভিযোগ উপস্থাপনের সময়।
সকাল ৮টা ৫৫ মিনিটে আজহারকে ট্রাইব্যুনালে আনার পর রাখা হয়েছিল হাজতখানায়। সেখানে পরিবারের সরবরাহ করা খাবার খাওয়ার পাশাপাশি সংবাদপত্র পড়েন তিনি।
সকাল ১০টা ৫৮ মিনিটে কাঠগড়ায় নেওয়া হয় একাত্তরে রংপুর অঞ্চলের আল বদর কমান্ডার আজহারকে।
সাদা পাজামা, পাঞ্জাবি ও ঘিয়ে রঙের সোয়েটার পরিহিত এই জামায়াত নেতা কাঠগড়ায় রাখা চেয়ারে বসেই পায়ের ওপর পা তুলে দেন। আদালত কক্ষে ঢোকার সময় তার আইনজীবী তাজুল ইসলাম এগিয়ে গেলে তার সঙ্গে হাত মেলান তিনি।
বেলা ১১ টা ৮ মিনিটে ট্রাইব্যুনাল-১ এর তিন সদস্য বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম, বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন ও বিচারপতি মো. আনোয়ারুল হক এজলাসে আসেন।
আদালতে এসে ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বেশকিছু প্রারম্ভিক কথাবার্তা বলেন। এরপর বিচারপতি আনোয়ারুল হক রায় পড়া শুরু করেন।
বিচারক অভিযোগগুলো পড়ে শোনানো শুরু করলে এক পর্যায়ে পায়ের ওপর থেকে পা নামিয়ে বসেন তিনি।
১১টা ৪০ মিনিটের দিকে পঞ্চম অভিযোগে আসেন বিচারক। এই অভিযোগ ধর্ষণ সম্পর্কিত।
এই অভিযোগ পড়ার সময় হেলান দেওয়া আজহার সোজা হয়ে সামনের দিকে ঝুঁকে কান পাতেন এজলাসের দিকে। এক পর্যায়ে হাসির রেখা দেখা যায় তার মুখে। এরপর আবার হেলান দিয়ে পায়ের ওপর পা তুলে দেন তিনি।
পৌনে ১২টার দিকে বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন রায় পড়া শুরু করলে আবার এজলাসের দিকে মনোযোগ দেন আজহার। এসময় বিচারক সাক্ষ্যপ্রমাণ বিশ্লেষণ করছিলেন।
পুরো রায় পড়ার বেশির ভাগ সময় অস্থির ভাব দেখা যায় আজহারের মধ্যে। কখনও মুখে হাত, কখনও গালে হাত, কপালে হাত দিচ্ছিলেন। ঘনঘন পরিবর্তন করছিলেন বসার ভঙ্গীও। কয়েকবার নাক খুঁটতে, দাড়ি টানতেও দেখা গেছে তাকে।
সাড়ে ১২টার দিকে ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান এম ইনায়েতুর রহিম মানবতাবিরোধী অপরাধের তিন অভিযোগে মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণা করার পর কাঠগড়ায় থাকা জামায়াতের এই সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল দাঁড়িয়ে যান।
হাত উঁচিয়ে বিচারকদের উদ্দেশে কথা বলার এক পর্যায়ে কাঠগড়ার পাশে থাকা পুলিশ সদস্যরা তাকে জোর করে বসিয়ে দেন।
রায়ের পর তাকে আবার নিয়ে যাওয়া হয় ট্রাইব্যুনালের হাজতখানায়। সেখান থেকে নিয়ে যাওয়া হয় কারাগারে।