যুদ্ধাপরাধ মামলার দ্বাদশ রায়ে এসে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আইনজীবী ও সংবাদকর্মীদের ভিড় এবং উত্তেজনা আগের তুলনায় থিতিয়ে এসেছে, যা বিচারকেরও চোখ এড়ায়নি।
Published : 13 Nov 2014, 08:41 PM
বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম নেতৃত্বাধীন ট্রাইব্যুনাল-১ বৃহস্পতিবার ফরিদপুরের নগরকান্দার বিএনপি নেতা ও সাবেক পৌর মেয়র পলাতক জাহিদ হোসেন খোকনের যুদ্ধাপরাধ মামলার রায় ঘোষণা করে।
ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন ও বিচারপতি মো. আনোয়ারুল হকও এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
অপহরণ, আটক, নির্যাতন, হত্যা, গণহত্যা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের মতো অপরাধের দায়ে রায়ে খোকন রাজাকারের সর্বোচ্চ সাজার আদেশ হয়।
আগের ১২টি মামলায় জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ আট নেতা ও বিএনপির দুইজনসহ মোট ১৩ জনের বিচার হওয়ায় জনসাধারণের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ ও প্রত্যাশা ছিল। জামায়াত নেতাদের রায় ঘিরে হরতাল ও ব্যাপক নাশকতার ঘটনায় দেশজুড়ে উৎকণ্ঠাও ছড়ায়।
অন্যান্য রায়ের দিন পুরাতন হাইকোর্ট ভবনে ট্রাইব্যুনাল এলাকা ঘিরে কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা হলেও বৃহস্পতিবার কড়াকড়ি ছিল অনেকটাই শিথিল।
আগের রায়ের দিনগুলোতে প্রেসক্লাবের মোড়ে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে দোয়েল চত্বরে পুলিশের ব্যারিকেড দেওয়া হলেও এদিন তেমনটা দেখা যায়নি।
যুদ্ধাপরাধের আগের রায়ের দিনগুলোতে সকালে কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে আসামিদের কড়া নিরাপত্তার মধ্যে আদালতে নিয়ে আসা হয়। যুদ্ধাপরাধের মামলায় অভিযুক্ত খোকন তদন্তের শুরু থেকেই পলাতক থাকায় এদিন তাও করতে হয়নি।
আগের প্রতিটি রায়ের দিন মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ব্যানারে শতাধিক মুক্তিযোদ্ধাকে ট্রাইব্যুনালের মূল ফটকের বাইরে সকাল থেকেই স্লোগানমুখর থাকতে দেখা গেলেও বৃহস্পতিবার তাদের সংখ্যা ছিল কম।
রায় ঘোষণার সময় ট্রাইব্যুনালের এজলাসেও পর্যবেক্ষণকারীর ভিড় দেখা যায়নি। অন্যদিন পা ফেলার জায়গা না থাকলেও এদিন কিছু আসন খালিই থাকে। যারা উপস্থিত ছিলেন তাদের একটি বড় অংশই সংবাদকর্মী।
বেলা ১১টায় বিচারপতি ইনায়েতুর রহিম প্রারম্ভিক বক্তব্য শুরু করেন। এরপর বিচারপতি আনোয়ারুল হক ও বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন রায়ের দুটি অংশ পড়ে শোনান।
১০৯ পৃষ্ঠার এ রায়ের সংক্ষিপ্তসার পড়তে সময় লাগে ঘণ্টাখানেক। সবশেষে সাজা ঘোষণা করেন ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান।
নিজের অংশ পড়ার সময় বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেনও বলেন, “আমরা দেখতে পাচ্ছি আজ দর্শনার্থীর সংখ্যা অন্য দিনের চেয়ে কম।”
রায় ঘোষণার পরে ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণেও খুব বেশি উত্তেজনা ছিল না। অন্যান্য রায়ের পরে প্রসিকিউটর, আসামিপক্ষ ও পর্যবেক্ষণকারীদের মন্তব্য নিতে সাংবাদিকদের ব্যস্ত সময় কাটাতে হলেও এদিন নিজেদের মধ্যেই তাদের গল্পগুজব করতে দেখা যায়।
একাত্তরে জামায়াতে ইসলামীর সমর্থক খোকন পরে বিএনপির রাজনীতিতে যুক্ত হন, নির্বাচিত হন পৌর মেয়র। এ রায়ের পর জামায়াত কোনো হরতাল বা প্রতিক্রিয়া দেয়নি। বিএনপিও বরাবরের মতোই নিশ্চুপ।