পটুয়াখালীর পায়রায় গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের প্রস্তাবে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় সমুদ্র বন্দর ব্যবস্থাপনা কোম্পানি দুবাই পোর্ট ওয়ার্ল্ড।
Published : 26 Oct 2014, 03:33 PM
আবুধাবি সফরের দ্বিতীয় দিনের শুরুতে রোববার সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তার হোটেলে সাক্ষাত করেন দুবাইভিত্তিক প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান সুলতান বিন আহমেদ সুলায়েম।
বৈঠকে পায়রাতে একটি গভীর সমুদ্র বন্দর, মীরসরাই থেকে টেকনাফ পর্যন্ত মেরিন ড্রাইভ এবং একটি বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্মাণে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে দুবাই পোর্ট ওয়ার্ল্ডকে (ডিপি ওয়ার্ল্ড) আমন্ত্রণ জানান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। তার এ প্রস্তাবে ইতিবাচক সাড়া দেন ডিপি ওয়ার্ল্ডের চেয়ারম্যান।
শেখ হাসিনার সঙ্গে সুলতান আহমেদ বিন সুলায়েমের বৈঠকের পর এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, “ডিপি ওয়ার্ল্ডের বিভিন্ন দেশে পোর্ট নির্মাণের অভিজ্ঞতা আছে। ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কায় তাদের অভিজ্ঞতা আছে। এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।”
বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ সমুদ্রবন্দর ব্যবস্থাপনা কোম্পানি ডিপি ওয়ার্ল্ড বর্তমানে ছয় মহাদেশজুড়ে ৬০টির বেশি সমুদ্রবন্দর ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছে। এছাড়া ১০টি দেশে তাদের কার্যক্রম আরো বিস্তৃত ও নতুন প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। লন্ডন গেটওয়ে পোর্ট নির্মাণের অভিজ্ঞতাও রয়েছে তাদের।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব আবুল কালাম আজাদ বলেন, “বৈঠকে পায়রাকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে একটাই কারণে। সম্প্রতি পায়রাতে সমুদ্রবন্দর কার্যক্রম শুরু হয়েছে। একই সাথে ওখানে একটা নেভাল বেইস হবে।
“একটা বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে। ওখানে যে গভীরতা আছে, নদীতে ও সাগরের মোহনায় যে গভীরতা আছে- ওই গভীরতার কারণে ওখানে সমুদ্রবন্দর স্থাপনা প্রাথমিকভাবে মনে হয় খুবই ফিজিবল হবে।”
এছাড়া আঞ্চলিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে পায়রার গুরুত্ব তুলে ধরে এই জ্যেষ্ঠ সচিব বলেন, “নেপাল-ভুটানের সঙ্গে আমাদের যে ট্রানজিট এবং পদ্মা সেতু দিয়ে আমরা পূর্বদিকের সাথে মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডের যোগাযোগ স্থাপন করতে পারব। সে বিবেচনায় পায়রাতে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণে প্রধানমন্ত্রী ডিপি ওয়ার্ল্ডের সাথে কথা বলেছেন।”
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ডিপি ওয়ার্ল্ডের চেয়ারম্যানের বেশ দীর্ঘ বৈঠক হয়েছে জানিয়ে পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক বলেন, বাংলাদেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে ডিপি ওয়ার্ল্ডের বিনিয়োগের সুযোগ নিয়ে সেখানে আলোচনা হয়েছে।
ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা বিরোধের নিষ্পত্তিতে জলসীমায় বাংলাদেশের সার্বভৌম অধিকার প্রতিষ্ঠার কথা তুলে ধরে শহীদুল হক বলেন, “ব্লু ইকোনমির প্রেক্ষাপটে এর কনসেপ্ট বদলে গেছে। এজন্য প্রধানমন্ত্রী চিন্তা করছেন, আমাদের কোস্টলাইন ধরে একটি ফিজিবিলিটি স্টাডি হওয়া দরকার।
“প্রধানমন্ত্রী ডিপি ওয়ার্ল্ডের চেয়ারম্যানকে পোর্ট, স্পেশাল ইকোনমি জোন, ট্যুরিজম ও মেরিন ড্রাইভের জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। এজন্য পোটেনশিয়াল এক্সপ্লোর করার জন্য ডিপি ওয়ার্ল্ডকে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী।”
মীরসরাই থেকে টেকনাফ পর্যন্ত মেরিন ড্রাইভ নির্মাণে সমুদ্র থেকে ভূমি উদ্ধারের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে এক্ষেত্রে ডিপি ওয়ার্ল্ডের অভিজ্ঞতা উল্লেখ করেন পররাষ্ট্র সচিব।
“বিভিন্ন সময়ে সমুদ্র থেকে ভূমি উদ্ধার করে বন্দর ও অবকাঠামো নির্মাণে ডিপি ওয়ার্ল্ডের যে অভিজ্ঞতা রয়েছে তা বাংলাদেশের ক্ষেত্রে কতটুকু কাজে লাগবে- তাও আলোচনা হয়েছে।”
পায়রা সমুদ্র বন্দরের জায়গায় একটি গভীর সমুদ্র বন্দর স্থাপন করা যায় কি না সেজন্য সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের আগ্রহ থাকলে ডিপি ওয়ার্ল্ডকে প্রধানমন্ত্রী আমন্ত্রণ জানিয়েছেন বলে জানান পররাষ্ট্র সচিব।
“ডিপি ওয়ার্ল্ডের চেয়ারম্যান বলেছেন, তারা যেখানেই এ ধরনের পোর্ট ফেসিলিটিজের কাজ করেন সেখানেই এর পাশাপাশি একটা বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল করেন বিনিয়োগের জন্য। বন্দরকে সচল রাখার জন্য,” বলেন তিনি।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ডিপি ওয়ার্ল্ডের এই অবস্থানকে স্বাগত জানিয়েছেন বলেও জানান শহীদুল হক।
ডিপি ওয়ার্ল্ডের চেয়ারম্যানের সঙ্গে বৈঠকে নতুন বিমানবন্দর নির্মাণের কথাও হয়েছে বলে জানান তিনি।
এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, গভীর সমুদ্র বন্দর, মেরিন ড্রাইভ এবং বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্মাণে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণে ডিপি ওয়ার্ল্ড ‘পজিটিভ রেসপন্স’ করেছে।
“উনারা বলেছেন, উনাদের টিম অতি দ্রুত যাবে এবং তারা খুবই আগ্রহী।”
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ডিপি ওয়ার্ল্ডের চেয়াম্যানের বৈঠকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলীও উপস্থিত ছিলেন।