মেয়েদের বিয়ের আইনসিদ্ধ বয়স কমিয়ে আনা হলে তা ‘একটি ভুল পদক্ষেপ হবে’ মন্তব্য করে ওই পরিকল্পনা থেকে সরকারকে সরে আসার আহ্বান জানিয়েছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)।
Published : 13 Oct 2014, 02:58 PM
মানবাধিকার সংস্থাটি বলছে, বাংলাদেশ বিয়ের বয়স কমাতে আইন সংশোধন করলে তা হবে বাল্যবিয়ের হার কমিয়ে আনার অঙ্গীকারের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
এইচআরডব্লিউর নারী অধিকার বিষয়ক পরিচালক লিজেল গেনহলজ সোমবার এক বিবৃতিতে বলেন, “বাংলাদেশে মেয়েদের বিয়ের বয়সের আইনসিদ্ধ সীমা কমিয়ে ১৬ বছর করা হলে তা হবে ভুল দিকে একটি ভয়ংকর পদক্ষেপ।”
ছেলে-মেয়ে সবার ক্ষেত্রেই বিয়ের বয়স ১৮ করার আহ্বান জানিয়ে শিশুদের কল্যাণের বিষয়টি সরকারের সিদ্ধান্তের প্রধান বিবেচ্য হওয়া উচিৎ বলে মত দেওয়া হয়েছে এইচআরডব্লিউর বিবৃতিতে।
বর্তমান আইনে বাংলাদেশে মেয়েরা বিয়ের যোগ্য হয় ১৮ বছর বয়সে, জাতিসংঘের শিশু অধিকার সনদ অনুযায়ী ওই বয়সেই শৈশব শেষ হয়।
সম্প্রতি লন্ডনে কন্যাশিশু সম্মেলনে যোগ দিয়ে বাল্যবিয়ের হার কমিয়ে আনার বিষয়ে নিজের অঙ্গীকারের কথা জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বাংলাদেশে বিয়ের বয়স পরিবর্তনের অর্থ দাঁড়াবে এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতা সরে আসা।
বাল্যবিয়ের হারের দিক দিয়ে ভারতীয় উপমহাদেশে বাংলাদেশে রয়েছে সামনের কাতারে, যা মাতৃমৃত্যুর হার বৃদ্ধিরও অন্যতম কারণ।
সম্প্রতি বাল্যবিয়ে বন্ধের জন্য দুই বছর কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রেখে নতুন আইন করার প্রস্তাবে সায় দেয় সরকার।
তবে ওই প্রস্তাবে অনুমোদনের সময় সামাজিক বাস্তবতার নিরিখে বিয়ের বয়স কমানো যায় কি না- তা পর্যালোচনা করতে বলেছে মন্ত্রিসভা।
গ্রীষ্মপ্রধান দেশগুলোতে ছেলেমেয়েরা কম বয়সে বয়োপ্রাপ্ত হয়- এই বাস্তবতা বিবেচনা করে আইন মন্ত্রণালয়কে প্রস্তাবটি পর্যালোচনা করতে বলা হয় মন্ত্রিসভার বৈঠকে।
গত ২ সেপ্টেম্বর এক আলোচনা সভায় স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেক সরকারের পরিকল্পনার পক্ষে যুক্তি দিয়ে বলেন, বয়স হওয়ার আগেই ঘর ছেড়ে পালিয়ে বিয়ের প্রবণতার কারণে মেয়েদের বিয়ের বয়স দুই বছর কমানোর বিষয়টি সামনে এসেছে।
তবে প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্যে বিস্ময় প্রকাশ করে অধিকার কর্মী ও বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার কর্মীরা বলেছেন, মেয়েদের বিয়ের বয়স কমালে তা হবে ‘খুবই ভুল’ পদক্ষেপ। এটা নিয়ে যদি শুধু আলোচনাও হয় তবুও দেশে ও বিশ্বজুড়ে ‘ভুল বার্তা’ যাবে।
‘বাল্য বিবাহ নিরোধ আইন ২০১৪’ পাস করার আগে আরো কিছু বিষয় বিবেচনার সুপারিশ করেছে এইচআরডব্লিউ।
এতে বলা হয়েছে, খসড়া আইনে বিবাহকারী, বিয়ে পরিচালনাকারী ও অভিভাবকের জন্য একই শাস্তির সুপারিশ করা হয়েছে। এর বদলে শাস্তির বিধি এমন হওয়া উচিৎ যাতে এর পেছনের মূল ব্যক্তিদের শাস্তির আওতায় এনে বাল্য বিয়ে রোধ করা যায়।
বিয়ের ক্ষেত্রে উভয়পক্ষের সম্মতির বিষয়টি নিশ্চিত করা, দাম্পত্য ধর্ষণের বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া, ভিকটিমদের আইনি সুরক্ষা দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করা এবং অভিযোগ জানানোর প্রক্রিয়া আরো সহজ করার বিষয়গুলো আইনে অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করেছে এইচআরডব্লিউ।