১৫ অগাস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যা এবং তারপর নিজের পরিবারের দুঃসহ স্মৃতি নিয়ে ভাবতে গিয়ে মানুষের মনস্তত্ত্ব নিয়ে আগ্রহী হয়ে ওঠেন প্রধানমন্ত্রীর মেয়ে সায়মা হোসেন পুতুল।
Published : 24 Aug 2014, 01:54 AM
স্কুলজীবনে অস্বাভাবিক মনস্তত্ত্বের একটি মেয়ের সঙ্গে পরিচয় এবং তার সঙ্গে সময় কাটানোর প্রভাবেই মনোবিজ্ঞান নিয়ে পড়ে মনোস্তত্ত্ববিদ হিসেবে নিজেকে গড়ে তোলার ব্যাপারে আরো আগ্রহী হয়ে উঠেন তিনি।
নিউরো ডেভেলপমেন্টাল ডিসঅর্ডার নিয়ে শনিবার একাত্তর টেলিভিশনে প্রচারিত ‘পলিসি ক্যাফে’ নামের একটি আলোচনা অনুষ্ঠানে সঞ্চালকের প্রশ্নের জবাবে স্মৃতিচারণ করে একথাই বলেন বঙ্গবন্ধুর নাতনী।
সায়মা বলেন, “১৫ অগাস্টের পর মা-খালাদের কান্নার স্মৃতি রয়েছে আমার। সেই থেকে মানুষকে বোঝার বিষয়ে একটি আগ্রহ কাজ করত। সেটি একটি বড় কারণ মনোস্তত্ত্ববিদ হিসেবে ক্যারিয়ার গড়ে তোলার ব্যাপারে। আরেকটি ঘটনাও রয়েছে।
“বিদেশে যখন বোর্ডিং স্কুলে পড়তাম, এইট-নাইনে পড়ার সময় একটা অভিজ্ঞতা হয়েছিল। আমাদের স্কুলে একজন সিনিয়র স্টুডেন্ট আসে, যার মা ছোট বয়সে সুইসাইড করে, ওর বাবা ওকে অ্যাবান্ডেন্ট করে যায়, এগুলো মেয়েটি আমাকে খুব কনফিডেনশিয়ালি বলেছিল।
“ওই মেয়েটার একটা অভ্যাস ছিলো নিয়মভঙ্গ করার, জোক হিসেবে। কিছু কিছু জিনিস জোক হিসেবে কয়েকদিন ভালো লাগতো, তারপরে আর ভালো লাগতো না। ওই মেয়েটার চিকিৎসা করার জন্যই হয়তো বা স্পেশালিস্ট হয়েছি।”
মনোস্তত্ত্ববিদ সায়মা যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘অটিজম স্পিকস’র পরামর্শক হিসেবে কাজ করেন। যিনি গত জুন মাসেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে ‘বিশেষজ্ঞ পরামর্শক প্যানেলে’ অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। ২৫ সদস্য বিশিষ্ট জাতিসংঘের ওই বিশেষজ্ঞ প্যানেলে চার বছর কাজ করবেন সায়মা।
নিজের পেশা বেছে নেয়ার ব্যাপারে সায়মা বলেন, “একটা পলিটিক্যাল পরিবারের মেয়ে হয়ে আমি কেন সাইকোলোজিতে পড়লাম? আমার মা চেয়েছিলো আমি ল বা সোসিওলজি পড়ব। সেসময় সাইকোলজি বিষয়ে এরকম অ্যাটিটিউড ছিল না। তিনি খুব বেশি একটা সাহস পাচ্ছিলেন না যে এটা পড়ে কী করব?
“আমার বিয়ে হলো, চলে গেলাম। ওখানে গিয়ে আমার হাসব্যান্ড খুব চেষ্টা করল যে কম্পিউটার সায়েন্স পড়ি। তখন আমি খুব ইনসিস্ট করি, যে না আমি সাইকোলজি পড়ব। এভাবেই এই পেশায় চলে এলাম।”
১৯৮১ সালে নিজেদের ঢাকায় আসার স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে শেখ হাসিনার মেয়ে সায়মা বলেন, “৮১ সালে তখন বাংলাদেশ খুব রিস্কি একটা ব্যাপার ছিলো, জীবনের কোন নিশ্চয়তা ছিলো না। আমাকে আর জয়কে খালার কাছে রেখে আসতে চেয়েছিলেন মা।
“এর মধ্যে আমার চিকেন পক্স হয়, যে কোন কারণে তখন বাংলাদেশে তিনি আসেন, তার সাথে আমিও আসি। ওই মেমোরিটা সারা জীবন মনে থাকবে কারণ এতো মানুষ ছিলো, সবাই ওনাকে দেখার জন্য এসেছিলো ।”
“প্লেন ল্যান্ড করার পরে একটা ট্রাক নিয়ে আসে, সেটার সাথে একটা মই ছিল। মা আমাকে বলেছিলো তুমি প্লেনে থাকো পরে তোমাকে নামিয়ে নিয়ে যাবে।”
“আমার মা ওই মই দিয়ে ট্রাকের উপরে নামলেন, তারপর মামা (কে তা বলেননি সায়মা) আমাকে দেখে জিজ্ঞাসা করলো ও ‘পুতুল’? বলে আমাকে নিয়ে আসল। আমি তখন মানুষের চাপে, কাউকে চিনি না একটা আতঙ্ক। তবে বিষয়টা অনেক মজার ছিল।”
সায়মা বলেন, “আমার চোখের সামনে শুধু এটাই ভাসে, মানুষের কতটুকু ভালোবাসা ছিল আমার নানার পরিবারের প্রতি।”
অনুষ্ঠানে সায়মা ওয়াজেদকে বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্ন করেন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী, পেশাজীবী এবং অটিজম নিয়ে কাজ করেন এমন বিশেষজ্ঞদের প্যানেল । তিনি তাদের সেইসব প্রশ্নের উত্তর দেন।
অনুষ্ঠানের শেষে তিনি কারো কাজ করার সামর্থ্য নিয়ে আগেই বিবেচনা না করে তাকে আগে মানুষ হিসেবে ভাবতে পরামর্শ দেন।
তিনি বলেন, “এভাবে থাকলে আমরা যে যেখানেই থাকি না কেন সবাইকে হেল্প করতে পারব।”
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নিয়মানুযায়ী, সায়েমা ওয়াজেদ যে বিশেষজ্ঞ প্যানেলটির অন্তর্ভুক্ত তারা সংস্থা প্রধানকে সরাসরি ‘যথাযথ,তাৎক্ষণিক এবং অনুরোধের প্রেক্ষিতে’ যেকোনো বিষয় সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নিতে পরামর্শ দিতে পারে।
পরিস্থিতি সম্পর্কে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধানকে জানানো এবং কৌশলগত পরামর্শও দেয় এই বিশেষজ্ঞ প্যানেল, তবে এর বিনিময়ে কোনো অর্থ বা পারিশ্রমিক পায় না।