মুন্সীগঞ্জের মাওয়ায় পদ্মার তলদেশে খুঁজে পাওয়া ‘ধাতব বস্তু’ পিনাক-৬ কিনা তা নিশ্চিত করার কাজে মূল মনোযোগ দিয়ে চারটি জাহাজ ছাড়া নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড, বিআইডব্লিউটিএ ও ফায়ার সার্ভিসের নৌযান প্রত্যাহার করা হয়েছে।
Published : 10 Aug 2014, 02:38 PM
মুন্সীগঞ্জের জেলা প্রশাসক সাইফুল হাসান বাদল রোববার দুপুরে মাওয়া য় এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এই ঘোষণা দেন।
তিনি বলেন, শনিবার সাইড স্ক্যান সোনারে পদ্মার তলদেশে যে ধাতব বস্তুটির অস্তিত্ব ধরা পড়েছে তা পিনাক-৬ লঞ্চের কিনা- তা নিশ্চিত করতে সার্ভে ভেসেল জরিপ-১০ ও টাগ বোট কাণ্ডারি-২ কাজ চালিয়ে যাবে।
উদ্ধারকারী জাহাজ রুস্তম ও নির্ভীক ঘটনাস্থলে থাকবে। ধাতব বস্তুটিতে নোঙর আটকাতে পারলে জাহাজ দুটি সেটি টেনে তোলার চেষ্টা করবে।
এছাড়া নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড, বিআইডব্লিউটিএ ও ফায়ার সার্ভিসের যেসব নৌযান এতোদিন তল্লাশি অভিযানে অংশ নিচ্ছিল, সেগুলোকে ফিরিয়ে নেয়া হচ্ছে।
জেলা প্রশাসক বলেন, “জরিপ-১০, কাণ্ডারি-২, রুস্তম ও নির্ভীক মূল উদ্ধার কাজে থাকবে। অনান্য সংস্থা ও তাদের নৌযান প্রত্যাহার করা হয়েছে।”
তবে বিভিন্ন সংস্থার যে ডুবুরিরা উদ্ধার কাজে অংশ নিচ্ছিলেন, তারা কাজ চালিয়ে যাবেন।
জেলা প্রশাসক বলেন, “ডুবুরিরা সাধারণত এক থেকে দেড় নটিক্যাল মাইল স্রোতের মধ্যে কাজ করতে পারেন। কিন্তু এখন নদীতে ৫ থেকে ৬ নটিক্যাল মাইল বেগেরে স্রোত বইছে। এ অবস্থায় ডুবুরিদের পক্ষে সেখানে নামা সম্ভব নয়। নদীর স্রোত কমে এলে তারা পুরোদমে কাজ করতে পারবেন।”
উদ্ধার অভিযানের ষষ্ঠ দিন শনিবার দুপুরে দুর্ঘটনাস্থল থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে কাণ্ডারি-২ এর সাইড স্ক্যানার সোনারে নদীর নিচে ওই ধাতব বস্তুর অবস্থান ধরা পড়ে। সেটির আকৃতির সঙ্গে পিনাক-৬ এর আকৃতিতে মিল পাওয়ায় আশার সঞ্চার হয়।
কিন্তু নদীর ওপর থেকে নোঙ্গর নামিয়ে তলদেশে ওই ধাতব বস্তুতে আটকানো সম্ভব না হওয়ায় এখন পর্যন্ত সেখানে ডুবুরি পাঠানো সম্ভব হয়নি। জানা যায়নি সেটিই গত ৪ অগাস্টের দুর্ঘটনায় ডুবে যাওয়া লঞ্চ কি না।
ফলে তিন শতাধিক যাত্রী নিয়ে কাওড়াকান্দি থেকে মাওয়ায় যাওয়ার পথে ডুবে যাওয়া লঞ্চটির অবস্থান সনাক্ত করা যায়নি সাত দিনেও।
বৃষ্টি ও প্রবল স্রোতের কারণে শনিবার রাতে তল্লাশি অভিযান বন্ধ থাকার পর রোববার সকালে আবার নদীতে কাজ শুরু করেন উদ্ধারকর্মীরা।
রোববার মাওয়া ঘাট থেকে রওনা হওয়ার আগে কাণ্ডারি-২ এর ইনচার্জ ও চট্টগ্রাম বন্দরের প্রধান হাইড্রোগ্রাফার কমান্ডার মঞ্জুরুল করিম চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, “গতকালও বস্তুটি নড়াচড়া করছিল। এ কারণে আমরা সেটি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পাইনি। আজ আমাদের মূল উদ্দেশ্য হবে সেটি পিনাক-৬ কি না তা নিশ্চিত হওয়া।”
উদ্ধার অভিযানে থাকা নৌবাহিনীর একজন কর্মকর্তা জানান, পিনাক-৬ এর দৈর্ঘ্য সাড়ে ১৬ মিটার। আর সাইড স্ক্যান সোনার স্ক্রিনে যে ছবি পাওয়া গেছে তাতে পদ্মার তলদেশে পাওয়া নৌযানটির দৈর্ঘ্য ১৬ মিটার।
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে মঞ্জুরুল করিম বলেন, “যেখানে বস্তুটি পাওয়া গেছে, সেখানে পানির গভীরতা প্রায় ১৯ মিটার। স্ক্রিন রিডিংয়ে দৈর্ঘ্যে আধা থেকে এক মিটার হেরফের হতে পারে। আমরা আশা করছি, আজকের মধ্যেই নিশ্চিত হওয়া যাবে।”
এ দিকে লঞ্চডুবির পর এ পর্যন্ত নদীর ভাটিতে বিভিন্ন স্থান থেকে মোট ৪৬টি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে, যার মধ্যে ২৭টি স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
চেনার উপায় নেই এমন ১৫টি লাশ ডিএনএ নমুনা রেখে দাফন করা হয়েছে মাদারীপুরে।