মাদারীপুর, শরীয়তপুর ও গোপালগঞ্জে দুইজন করে এবং সিলেট, হবিগঞ্জ, ঝিনাইদহ, বরগুনা ও ফরিদপুরে একজন করে মারা গেছেন।
Published : 06 May 2024, 10:17 PM
দেশের বিভিন্ন স্থানে কালবৈশাখী ঝড়ের সময় বজ্রপাতে ১১ জনের মৃত্যুরখবর পাওয়া গেছে।
এর মধ্যে মাদারীপুর, শরীয়তপুর ও গোপালগঞ্জে দুইজন করে এবং সিলেট, হবিগঞ্জ, ঝিনাইদহ, বরগুনা ও ফরিদপুরে বজ্রপাতে একজন করে মারা গেছেন।
জেলা প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
মাদারীপুর
মাদারীপুরে বজ্রপাতে দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। সোমবার বিকালে সদর উপজেলা ও কালকিনি উপজেলার কয়ারিয়া ইউনিয়নের রামারপোল গ্রামে এ ঘটনা ঘটে বলে সংশ্লিষ্ট থানার পুলিশ জানিয়েছে।
নিহতরা হলেন- জেলা শহরের আজমেরী মিষ্টান্ন ভাণ্ডারের কর্মচারী গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার কলাবাড়ি ইউনিয়নের শিমুলবাড়ি গ্রামের নগেন বল্লভের ছেলে সঞ্জিব বল্লভ (৩৫) এবং কালকিনি উপজেলার কয়ারিয়া ইউনিয়নের রামারপোল গ্রামের শ্রবণ প্রতিবন্ধী জসিম হোসেন (২০)।
মাদারীপুর সদর থানার এসআই আব্দুর রাজ্জাক জানান, বিকালে কাজ শেষে আড়িয়াল খাঁ নদে গোসল করতে যান সঞ্জিব ও দিগেন। এ সময় বজ্রপাতে তারা আহত হন। স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে মাদারীপুর সদর হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক সঞ্জিব বল্লভকে মৃত ঘোষণা করেন।
মাদারীপুর সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার আবু সফর হাওলাদার বলেন, হাসপাতালে নেওয়ার আগেই একজনের মৃত্যু হয়। অন্যজন চিকিৎসাধীন।
কালকিনি থানার ওসি সরকার আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, বিকালে বৃষ্টির সময়ে শ্রবণ প্রতিবন্ধী জসিম তার গোয়াল ঘরে গরু বাঁধতে গিয়ে বজ্রপাত আহত হন। তাকে কালকিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
শরীয়তপুর
শরীয়তপুরের জাজিরা ও ভেদরগঞ্জ উপজেলায় বজ্রপাতে দুই নারীর মৃত্যুর খবর জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট থানার পুলিশ।
নিহতরা হলেন- জাজিরা উপজেলার পূর্ব নাওডোবা ইউনিয়নের পাইনপাড়া আহমেদ মাঝিকান্দি গ্রামের আলতু মাঝির মেয়ে আমেনা বেগম (২৬) এবং ভেদরগঞ্জ উপজেলার সখীপুর থানার চরসেনসাস ইউনিয়নের বেড়াচাক্কি গ্রামে নেছার উদ্দিন মাঝির স্ত্রী কুলসুম বেগম (৩৮)।
পদ্মা দক্ষিণ থানার ওসি শেখ শরীফুল আলম জানান, দুপুরে বৃষ্টির মধ্যে আমেনা তার মাকে খুঁজতে মাঠে যান। এ সময় বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই মারা যান তিনি।
ভেদরগঞ্জ উপজেলার চরসেনসাস ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান বি এম আনোয়ার হোসেন বালা জানান, নেছার উদ্দিন সয়াবিন বাগানে কাজ করছিলেন। তাকে দুপুরের খাবার দিতে মাঠে যান কুলসুম বেগম। এ সময় হঠাৎ বজ্রবৃষ্টি শুরু হয়। এতে কুলসুম আহত হন।
তাকে ভেদরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন বলে জানান তিনি।
গোপালগঞ্জ
কাশিয়ানী ও কোটালীপাড়া উপজেলায় বজ্রপাতে দুজনের মৃত্যু হয়েছে।
সোমবার সন্ধ্যায় কাশিয়ানী উপজেলার হাতিয়ারা ইউনিয়নের পাথরগ্রামে এবং কোটালীপাড়া উপজেলার আমতলীতে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন খুলনার বটিয়াঘাটার ধান কাটা শ্রমিক সুকান্ত (৫২) এবং কোটালীপাড়া উপজেলার আমতলী গ্রামে কাশেম আলী শেখের ছেলে কৃষক আলমগীর শেখ (৫৫)।
কাশিয়ানী উপজেলার হাতিয়াড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দেবদুলাল বিশ্বাস বলেন, সুকান্ত কয়েকদিন আগে ধান কাটার জন্য পাথরগ্রামে এসেছিলেন। সন্ধ্যায় তিনি বজ্রপাতে মারা যান।
কোটালীপাড়া উপজেলার আমতলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাফেজা বেগম বলেন, সন্ধ্যায় বজ্রপাতে কৃষক আলমগীর শেখ মারা গেছেন।
সিলেট
সিলেটের কানাইঘাট উপজেলায় মাঠে গরু চরাতে গিয়ে বজ্রপাতে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে।
সোমবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে উপজেলার দীঘিরপার পূর্ব ইউনিয়নে এ ঘটনা ঘটে বলে জানান কানাইঘাট থানার ওসি জাহাঙ্গীর হোসেন।
নিহত মোহাম্মদ মাহতাব উদ্দিন (৪৫) উপজেলার দর্পণগর পশ্চিম করচটি গ্রামের রফিকুল হকের ছেলে। তিনি ওমান প্রবাসী ছিলেন।
ওসি জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, সকালে মাহতাব উদ্দিন সুরমা নদীর তীরে মাঠে গরু চরাতে যান। এ সময় হঠাৎ বজ্রপাত হলে তিনি ঘটনাস্থলেই মারা যান।
আইনি প্রক্রিয়া শেষে মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
ফরিদপুর
ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলায় বজ্রপাতে মুরাদ মল্লিক (৫৩) নামের এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে।
সোমবার বিকালে উপজেলার কামালদিয়া ইউনিয়নের মিরাপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে বলে জানান কামালদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ওয়ালিদ হাসান মামুন।
তিনি জানান, মুরাদ মল্লিক নিজ মরিচ ক্ষেতে কাজ করছিলেন। এ সময় বজ্রপাতের ঘটনাস্থলেই মারা যান তিনি।
হবিগঞ্জ :
হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলায় মাঠ থেকে গরু আনতে গিয়ে বজ্রপাতে এক মাদরাসা শিক্ষকের মৃত্যু হয়েছে।
সোমবার সকালে উপজেলায় সাতপাড়িয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে বলে জানান বাহুবল থানার ওসি মো. মশিউর রহমান।
নিহত দানিছ মিয়া (৫৫) ওই গ্রামের রহিম উল্লাহর ছেলে এবং উপজেলার চলিতাতলা মাদরাসার শিক্ষক ছিলেন।
ওসি মশিউর রহমান বলেন, সকালে ঝড়বৃষ্টি শুরু হলে দানিছ মিয়া বাড়ির পাশের জমি থেকে গরু আনতে যান। এ সময় বজ্রপাতের আঘাতে তিনি লুটিয়ে পড়েন। তাকে বাহুবল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
ঝিনাইদহ
ঝিনাইদহ সদর উপজেলায় মাঠে কাজ করার সময় বজ্রপাতে এক কৃষক মারা গেছেন।
সোমবার সন্ধ্যার পর উপজেলার দক্ষিণ শালিয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে বলে জানান ঝিনাইদহ সদর থানার ওসি মো. শাহিন উদ্দিন।
নিহত হাশেম আলি (৪৫) ওই গ্রামে আরাফাত হোসেনের ছেলে।
ওসি শাহিন উদ্দিন বলেন, মাগরিবের নামাজের পর হাশেম আলি ক্ষেত দেখতে মাঠে যান। তখন বজ্রবৃষ্টি শুরু হয়। বজ্রপাতে তিনি ঘটনাস্থলেই মারা যান। পরে স্বজনরা তার মরদেহ বাড়িতে নিয়ে যান।
বরগুনা
আমতলী উপজেলায় বিলে মাছ ধরতে গিয়ে এক কিশোরের মৃত্যু হয়েছে।
উপজেলার কুকুয়া ইউনিয়নের পূর্ব কুকুয়া গ্রামে সোমবার রাত পৌনে ৮টায় এ ঘটনা ঘটে।
নিহত হাফেজ আব্দুল্লাহ (১৫) ওই গ্রামের মো. জসিম উদ্দিনের ছেলে।
আব্দুল্লাহর শিক্ষক এরশাদ উল উলুম মাদ্রাসার পরিচালক হাফেজ মো. ফয়জুল্লাহ সাংবাদিকদের বলেন, আব্দুল্লাহ চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে কোরানে হাফেজ হয়। সন্ধ্যায় মাছ ধরার জন্য বাড়ির পাশে বিলে যায়। এ সময় বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।
পরে স্বজনরা গিয়ে তার লাশ উদ্ধার করে বাড়িতে নিয়ে আসে।