প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তথ্য-প্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় বলেছেন, দেশের ‘বেশ নামকরা’ কিছু ব্যক্তি গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছেন, যাদের সঙ্গে বিদেশিরাও রয়েছেন।
Published : 11 Jul 2014, 11:14 PM
২০০৭ সালে ‘ষড়যন্ত্র’ করে যারা সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার এনেছিল, তারাই গত জানুয়ারির নির্বাচন ঠেকানোর চেষ্টা করেছিল বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
শুক্রবার রাজধানীর একটি হোটেলে ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আলোকে গণতন্ত্র ও ভবিষ্যত বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ।
তিনি বলেন, “দুঃখের বিষয়, আমরা দেখতে থাকি আমাদের দেশেই কিছু শ্রেণির লোকজন এখনো গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে; তারা ষড়যন্ত্র চালাতেই থাকে। ১৬ কোটি দেশের মধ্যে রাজাকার ও মীরজাফর সবসময়ই থাকবে। এখনো আমাদের মাঝে আছে। এখনো তারা চেষ্টা করে যাচ্ছে।”
“দেখা গেলো এই পাঁচই জানুয়ারির নির্বাচনের আগে তাদের বদ চেহারা, তাদের মাথা আবার উঁচু হলো। আবারও সেই ষড়যন্ত্র শুরু। তাদের দাবি একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন বন্ধ করতে হবে। একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন কিভাবে থামানো যায়? সেটা কি সম্ভব? সেটা কি গণতান্ত্রিক? না সেটা কখনো গণতান্ত্রিক হতে পারে না।”
সব ধরনের ষড়যন্ত্রকে পেরিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় জানিয়ে জয় বলেন, “বাস্তব কথা হচ্ছে যে, শুধু দেশের ভিতরেই না, আন্তর্জাতিকভাবেও সারাক্ষণ ষড়যন্ত্র চলতে থাকে।
“আমরা কি এই ষড়যন্ত্রের ভয়ে খাকবো? আমরা কি এই ষড়যন্ত্রে কানে দেব? না দেবো না। বাংলাদেশে কি হবে তা বাংলাদেশের মানুষ নির্ধারণ করবে।”
এসময় জয় তার শৈশবে বাংলাদেশে সামরিক শাসনের সময়ের ‘ভীতিকর’ নানা অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন।
তরুণ প্রজন্মের উদ্দেশে তিনি বলেন, “আপনারা এখন যে স্বাধীনতা নিয়ে বাস করছেন, আপনাদের মত আমার যখন বয়স ছিল; সেই সুযোগ আমাদের ছিল না। আমরা সেই বাংলাদেশ পাইনি স্বৈরাচারদের কারণে। যে দল এখন বাইরে বসে হাউকাউ করে; সেই দলের কারণে।”
বিভিন্ন বিষয়ে টেলিভিশন টকশোতে মতামত দেয়া কিছু ব্যক্তি ও রাজনীতিবিদের শিক্ষা-দীক্ষা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন জয়।
তিনি বলেন, “আরেকটি জিনিস আমি লক্ষ্য করেছি, হয়তো এক শ্রেণির মধ্যে খুবই অভাব আছে। আমি যেটা লক্ষ্য করছি এখন আশপাশে; টেলিভিশনের টকশো আর কিছু ‘ওপ-এড’ দেখে। যারা বেশি নিজের মতামত দেন, তাদের কথাবার্তা শুনে আমি যা বুঝতে পারলাম যে, বেসিক একটা অভাব হয়ে গেছে। সেটা যা বোঝা যাচ্ছে যে, হয়তো শিক্ষা। আমাদের যারা বাইরে বসে হাউকাউ করেন, তাদের নেতৃবৃন্দের শিক্ষা কতদূর তাতো আমরা জানি।
“এই যে বিজয়, ভারত পেয়েছে ৬ হাজার বর্গকিলোমিটার, আমরা পেয়েছি ১৯ হাজার। তবে এই অঙ্কটা হয়তো তারা বুঝতে পারছেন না।”
তালপট্টি দ্বীপ
দক্ষিণ তালপট্টি নিয়ে বিএনপি নেতাদের বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করে তাদের বঙ্গোপসাগরের ওই অংশ থেকে ঘুরে আসার পরামর্শ দিয়েছেন সজীব ওয়াজেদ জয়।
সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানই দক্ষিণ তালপট্টি দ্বীপ ভারতকে দিয়ে গিয়েছিলেন কি না- সে প্রশ্নও তুলেছেন তিনি।
জয় বলেন, ১৯৮০ সালে বাংলাদেশে যতোগুলো ম্যাপ করা হয়েছিল, তাতে তালপট্টি দ্বীপের উপস্থিতি ছিল না; যদিও
সে সময় তালপট্টি দ্বীপের অস্তিত্ব ছিল।
“১৯৮০ সালে করা যতগুলো ম্যাপ, সেই ম্যাপে কিন্তু তালপট্টিকে ভারতকে দিয়ে দেওয়া হয়েছে। তার মানে কি জিয়াউর রহমান তালপট্টি ভারতকে দান করে দিয়েছিলেন?”
বাংলাদেশ-ভারত সমুদ্রসীমা নিয়ে নেদারল্যান্ডসের পার্মানেন্ট কোর্ট অব আর্বিট্রেশনের (পিসিএ) গত মঙ্গলবার যে রায় প্রকাশ করেছে, তাতে সাগরে দক্ষিণ তালপট্টির সেই অংশটি পড়েছে ভারতের ভাগে।
এই রায়ে ভারত-বাংলাদেশ দুই পক্ষেরই জয় হয়েছে বলে সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হলেও বিএনপি নেতারা সরকারের সমালোচনা করে বিভিন্ন বক্তব্য দিচ্ছেন। তারা বলছেন, এই রায়ে বাংলাদেশ তালপট্টি হারিয়েছে, আর বঙ্গোপসাগরে অর্থনৈতিক সমুদ্রসীমায় ভারতের একচ্ছত্র কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
বিএনপি নেতাদের উদ্দেশ্যে জয় বলেন, “এখন যারা তালপট্টি নিয়ে কথা বলছেন, আমি তাদের অনুরোধ করবো- প্লিজ আপনারা একটু যান, আপনারা যারা বাংলাদেশকে ভালোবাসেন না, আপনারা একটু তালপট্টিতে যান, গিয়ে ওখানে আন্দোলন করেন। আশা করি আপনারা সাঁতার কাটতে জানেন।”
১৯৭০ সালের প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড়ের পর সাতক্ষীরার হাড়িয়াভাঙ্গা নদীর মোহনায় দক্ষিণ তালপট্টি দ্বীপের উৎপত্তি হয়, যার মালিকানা নিয়ে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে শুরু হয় বিতর্ক। ১৯৮১ সালে ভারত সামরিক বাহিনী পাঠিয়ে সেখানে নিজেদের পতাকা ওড়ায়। এরপর বিভিন্ন সময়ে দুই দেশের রাজনীতিতে তালপট্টি ঘুরে ফিরে আসে।
‘জিন্দাবাদ বললে পাকিস্তানে যাওয়া উচিৎ’
সুচিন্তা ফাউন্ডেশন আয়োজিত সেমিনারে বিএনপির জিন্দাবাদ শ্লোগানেরও সমালোচনা করেন জয়।
যারা ‘বাংলাদেশ জিন্দাবাদ’ শ্লোগান দেয়, তাদের পাকিস্তানে চলে যাওয়া উচিৎ বলে মন্তব্য করেন তিনি।
সজীব ওয়াজেদ বলেন, “আমরা স্বাধীনতার শক্তি, আমরা একাত্তর থেকে বলে আসছি- জয় বাংলা। তারা জয় বাংলা বলতে লজ্জা পায়। কেন? তারা কি বলে? বাংলাদেশ জিন্দাবাদ!
“বাংলা ভাষায় জিন্দাবাদ বলে কোনো শব্দ নেই। এটা হচ্ছে উর্দু শব্দ। আমার নিজেরও আশ্চর্য লাগে, যে পাকিস্তান আমাদের দেশে একাত্তরে ৩০ লক্ষ নিরীহ মানুষকে হত্যা করেছে, ১৯৫২ তে আমাদের শহীদেরা বাংলা ভাষা বলার জন্য প্রাণ দিয়েছিল। আজকে এই বাংলাদেশে, বাংলার মাটিতে কোন বাঙালি সেই উর্দু ভাষা কীভাবে বলে? তারা কি বাঙালি হতে পারে? আমি বলি তারা বাঙালি না। তারা পাকিস্তানি।”
এ সময় জয় আওয়ামী লীগ সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের কথাও তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, সবকিছু সংবিধান ও আইনের ভিত্তিতে করতে হবে। সংবিধানের বাইরে কিছু করলে সেটা গণতন্ত্র হয় না।
সুচিন্তা ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ এ আরাফাতের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের চেয়ারম্যান একে আজাদ চৌধুরী, সমকালের সম্পাদক গোলাম সারওয়ার, অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল আব্দুর রশিদ এবং সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আলী যাকের বক্তব্য দেন।
বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সাংবাদিকদের ঘনিষ্ঠতার কথা তুলে ধরেন গোলাম সারওয়ার। বর্তমান সরকারের সঙ্গে গণমাধ্যমের ‘দূরত্ব’ রয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এ প্রসঙ্গে জয় বলেন, “যখন মিডিয়া সম্পূর্ণ প্রাইভেট হাতে চলে যায়, যেটা আমাদের দেশে আছে, তখন মিডিয়ার সংখ্যা বাড়ে। তখন বিরাট একটা প্রতিযোগিতা সৃষ্টি হয়ে যায়। কার খবর মানুষ বেশি দেখবে, তাতে তার বিজ্ঞাপনী আয় বাড়বে- এটাই হয়ে যায় প্রতিযোগিতা, এটাই ব্যবসার বাস্তবতা।
“তবে এতে একটা সমস্যা দাঁড়িয়ে যায়। সেখানে সত্য-মিথ্যা একটু মিশে যায়। বাস্তব কথা হচ্ছে, খারাপ খবর কিন্তু মানুষ শুনতে বেশি পছন্দ করে, এটা কিন্তু বাস্তব। ভালো খবর কিন্তু সেনসেশনাল হয় না, খবর হয় না।”
জয় বলেন, “এটাই বাস্তব, সেখানে সাংবাদিকদের দূরত্বের বিষয় না। এখানে হচ্ছে ম্যানেজমেন্টের বিষয়। আমরা যারা রাজনীতি করি, আমাদের একটু সাংবাদিকদের ম্যানেজ করতে হয়।
“তবে সত্যের জয় হবেই। ’৭৫ এর পর থেকে আমরা মিথ্যে প্রচার শুনেছি। মিথ্যে প্রচার করে কিছুদিন চালানো যায়, চিরদিন চালানো যায় না।”