আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী এলিট ফোর্স হিসেবে পরিচিত র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) কাজের ধরন ও আচরণ কেমন হওয়া উচিৎ সে বিষয়ে তাদের প্রশিক্ষণ নিতে হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
Published : 24 May 2014, 08:11 PM
এছাড়া বাহিনীটির নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ কোনটি তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তারা।
তারা বলছেন, দেশের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীগুলোকে ‘রাজনীতিকরণ’ থেকে বিরত থাকতে হবে।
রাজধানীর একটি হোটেলে ‘আইনের শাসন; নাগরিক অধিকার ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা: সাম্প্রতিক ভাবনা’ শীর্ষক এক গোলটেবিল আলোচনায় শনিবার এসব কথা বলেন আলোচকরা।
বৈঠকের আয়োজন করে বেসরকারি সংস্থা ইনস্টিটিউট অব কনফ্লিক্ট, ল অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ।
সাবেক আইজিপি নুরুল হুদা বলেন, “অনেকের মধ্যে ধারণা হয়ে গেছে যে, যা কিছু আইনের মধ্যে থেকে মোকাবেলা করা যাবে না, তা আইন বহির্ভূতভাবে মোকাবেলা করতে হবে।
“অপারেশন ক্লিনহার্ট বা ক্রসফায়ারে জনগণের সমর্থন আছে। কারণ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে থাকা, যে কোনো অপরাধে অপরাধীর বিচার না হয়ে খালাস পেয়ে যেতে দেখা, এসব থেকে বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যার প্রতি জনগণের সমর্থন চলে আসে। কিন্তু সভ্যসমাজ হিসেবে এটা কখনোই এনকারেজ করতে পারেন না আপনি।”
তিনি আরো বলেন, “আমাদের ঐতিহাসিক প্রেক্ষিত দেখতে হবে। কী অবস্থায় আপনি এই বাহিনী তৈরি করেছিলেন তা দেখতে হবে। দেশের রাজনৈতিক নির্বাহী যিনি আছেন, তিনি আসলে প্রকৃত রিফর্ম চান কি না তা দেখতে হবে।
“কোনো ঘটনায় পুলিশের কাছে গেলে তারা বলে র্যাবের কাছে যান। এটা এজন্য যে, তাদের কাজ করতে দেয়া হচ্ছে না। তাই তাদের মধ্যে একটা প্রবণতা চলে এসেছে কাজ না করার। আমি মনে করি না যেসব কাজ র্যাব করতে পারছে, সেসব কাজ পুলিশকে দিয়ে করানো সম্ভব নয়।”
তিনি বলেন, “রিফর্ম বলতে এখানে পেশাদারিত্ব দরকার। এটা বায়বীয় কিছু না। পেশাদারিত্ব আনতে হলে নিয়োগ স্বচ্ছ হতে হবে। আচরণ বিষয়ে প্রশিক্ষণ হতে হবে। বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে তদন্ত করার সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে।”
তিনি আরো বলেন, “এসব বাহিনীর কেউ অপরাধ করলে দেখা যায় তাদের ফৌজদারি শাস্তি হয় না। হয় তাকে ‘ক্লোজ’ করা হয়, অথবা বদলি করে দেয়া হয়।পাহাড়ি এলাকায় বদলি করে দিয়ে বলা হয় ‘পানিশমেন্ট ট্রান্সফার’ দেয়া হচ্ছে।
“আমরা দেখেছি ফেনীর ঘটনাটা সবার সামনেই ঘটেছে। টেলিভিশনে জনসাধারণের মোবাইলে রেকর্ড করা ফুটেজ আমরা দেখেছি। কিন্তু তারা কেউ সামনে এসে কিছু বলবে না, তাদের সুরক্ষা কে দিবে?”
“সর্বোচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তিরা রিফর্ম চাইলেও এর দায়িত্ব যাদের হাতে দেয়া হয় তাদের আনুগত্যের দিকে খেয়াল রাখা হলেও, যোগ্যতার দিকে খেয়াল রাখা হয় না। যোগ্যতা ও অঙ্গীকারের সমন্বয়ই এক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।”
তিনি আরো বলেন, “সেনাবাহিনী থেকে শুরু করে প্রতিটি জায়গায় আনুগত্যের বিষয়টি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। সেখানে পেশাদারিত্বের ব্যাপারটি গুরুত্ব পাচ্ছে না।”
তিনি আরো বলেন, “পুলিশ মনে করছে তারা কাজ করতে পারছে না, তাদের কাজ করতে দেয়া হচ্ছে না। তাহলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার কাজটা কে করছে? সেনাবাহিনী এ কাজের জন্য তৈরি করা হয়নি।
“ফেনীর ঘটনাটি প্রকাশ্যে ঘটলেও সেখানে পুলিশ ছিল না, আমরা জেনেছি বেশ দেরি করে সেখানে পুলিশ গিয়েছে। আমাদের পুলিশ কি চাইলে পারতো না সেখানে সময়মতো উপস্থিত হতে? পুলিশ সেটা করছে না, কারণ তাদের ফাংশান করতে দেয়া হচ্ছে না।”
তার মত, “আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বিরাজনীতিকরণ করতে হবে। রাজনীতিবিদদের আমি অনুরোধ করবো পুলিশ বাহিনীকে রাজনীতিকরণ করবেন না।”
২০০৯ সালে প্রণীত র্যাব আইনে ২০১৩ সালে আনা সংশোধনের কথা উল্লেখ করে একাত্তর টিভি’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোজাম্মেল বাবু প্রস্তাব করেন, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ, মাদক নিয়ন্ত্রণসহ বড় ধরনের অপরাধগুলো দমনের জন্য র্যাবের মতো বিশেষ বাহিনী ব্যবহার করা যেতে পারে। বাকি কাজগুলোর জন্য পুলিশ বাহিনীই যথেষ্ট।
এ আয়োজনে অন্যদের মধ্যে এফবিসিসিআই’র সাবেক সভাপতি আনিসুল হক, বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্পাদক নঈম নিজাম, ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত, জানিপপ চেয়ারম্যান নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ, অধ্যাপক আব্দুল মান্নান, অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আলী শিকদার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনায় ছিলেন ব্যারিস্টার তানিয়া আমির।