পুলিশ কর্মকর্তা মাহফুজুর রহমান এবং তার স্ত্রী স্বপ্না বেগমকে হত্যাকাণ্ডের মামলায় এখন বিচারের মুখোমুখি তাদের মেয়ে ঐশী রহমান।
Published : 06 May 2014, 12:22 PM
তবে বিচারকের জিজ্ঞাসায় নিজেকে নির্দোষ দাবি করে ন্যায়বিচার চেয়েছেন এই তরুণী। আর তার আইনজীবীরা দাবি করেছেন, দায় থেকে অব্যাহিত চেয়ে ঐশীর আবেদনের শুনানির জন্য পর্যাপ্ত সময় দেয়া হয়নি।
ঐশীর সঙ্গে তার দুই বন্ধু মিজানুর রহমান জনি ও আসাদুজ্জামান রনির বিরুদ্ধেও মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে অভিযোগ গঠন হয়েছে।
তিন আসামির উপস্থিতিতে অভিযোগ গঠনের পর বিচারক মো. জহুরুল হক আগামী ৫ জুন সাক্ষ্য গ্রহণ শুরুর দিন ঠিক করেছেন।
এই মামলার অন্য আসামি ঐশীদের গৃহকর্মী খাদিজা আক্তার সুমি অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় তার বিচারের ভার প্রথম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতকে দেয়া হয়েছে।
শিশু আদালত হিসেবে সেখানে তার বিচার হবে। বিচারক জাকিয়া পারভীন আগামী ২০ মে সুমীর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের জন্য দিন ঠিক করেছেন।
কাঠগড়ায় দাঁড়ানো কারাবন্দি তিন আসামিকে অভিযোগ পড়ে শোনানো হলে ঐশীর মতো অন্য দুজনও নিজেদের নির্দোষ দাবি করে আদালতের কাছে ন্যায়বিচার চান।
এই মামলায় রাষ্ট্রপক্ষেরও প্রস্তুতি ছিল না দাবি করে আসামি পক্ষের আইনজীবী মাহবুব হাসান রানা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কোনো প্রকার প্রস্তুতি না থাকা সত্ত্বেও লিখিত অভিযোগ না লিখেই দায়সারা গোছের একটি অভিযোগ পড়ে শোনানো হয় আসামিদের।”
তবে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অতিরিক্ত পিপি শাহ আলম তালুকদার সাংবাদিকদের বলেন, “অভিযোগ গঠনে আইনের কোনো ব্যত্যয় হয়নি। বিচারক আইন অনুযায়ীই সঠিক আদেশ দিয়েছেন।”
ঐশীকে অব্যাহতি দেয়ার আবেদন জানিয়ে তার কৌঁসুলি মাহবুব শুনানিতে বলেন, এ মামলাটি সঠিক ও যথাযথভাবে তদন্ত না করেই অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে। নিহতদের আত্মীয় ইফতেখারুল আলমের ১৬১ ধারায় তদন্ত কর্মকর্তা জবানবন্দি নিলেও অভিযোগপত্রে তাকে সাক্ষী করা হয়নি।
বিচারক তখন এই আইনজীবীকে থামিয়ে বলেন, এটা আসামির অব্যাহতির পক্ষে কোনো যুক্তি নয়।
পরে ঐশীর পক্ষে জামিন চাওয়া হলে শুনানি শেষে তা নাকচ করে দেন বিচারক।
পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) কর্মকর্তা মাহফুজ ও তার স্ত্রী স্বপ্নাকে হত্যার মামলায় গত ৯ মার্চ এই চারজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ।
পরে ঢাকা মহানগর হাকিম মো. মারুফ হোসেন অভিযোগপত্র গ্রহণ করে মামলার পরবর্তী কার্যক্রম পরিচালনার জন্য মহানগর দায়রা জজ আদালতে পাঠান।
পরে তাদের স্কুলপড়ুয়া মেয়ে ঐশী থানায় আত্মসমর্পণ করেন। এরপর পুলিশ ঐশীদের বাড়ির গৃহকর্মী খাদিজা আক্তার সুমী এবং ঐশীর বন্ধু রনি ও জনিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
মামলায় গৃহকর্মী সুমীকে সহায়তাকারী এবং দুই বন্ধুকে ঐশীর আশ্রয়দাতা হিসেবে দেখানো হয়েছে।
ও লেভেলের ছাত্রী ঐশীকে গ্রেপ্তারের পর তার বয়স নিয়ে আলোচনা উঠলে আদালতের নির্দেশে ঢাকা মেডিকেলে পরীক্ষা করে পুলিশ জানায়, ঘটনার সময় তার বয়স ১৮ বছরের বেশিই ছিল।
ঐশী ও তার বন্ধুরা বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। শিশু গৃহকর্মী সুমী রয়েছে গাজীপুরে কিশোরী উন্নয়ন কেন্দ্রে।
পুলিশ বলছে, সুমী খুনের সঙ্গে জড়িত না হলেও ঐশীকে সহায়তা করেছে।
পুলিশের বিশেষ শাখার কর্মকর্তা মাহফুজ স্ত্রী, দুই সন্তান ও গৃহকর্মীকে নিয়ে চামেলীবাগের ওই ফ্ল্যাটে থাকতেন।
যে দিন তাদের লাশ পাওয়া গিয়েছিল, তার আগের দিন বাড়ি থেকে ছোট ভাই ও গৃহকর্মীকে নিয়ে বেরিয়ে যান ঐশী।
পরদিন ভাইকে বাড়িতে ফেরত পাঠালেও নিজে আসেননি ঐশী। পরে সুমীকে নিয়ে থানায় ধরা দেন তিনি।
ঐশীর কাছে পাওয়া গয়না এবং বাসায় খুলে রেখে যাওয়া তার রক্তমাখা পোশাকে পাওয়া নমুনার ডিএনএ পরীক্ষায় হত্যাকাণ্ডে তার সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
তদন্ত কর্মকর্তার ভাষ্য অনুযায়ী, ঐশী তার বাবা-মাকে কফির সঙ্গে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে অচেতন করেছিল, পরে ছুরিকাঘাতে হত্যা করে।
গত ২৪ অগাস্ট ঐশী নিজেই ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।