ঐশী ‘খুনি’- বিশ্বাস হচ্ছে না চাচার

মাহফুজুর রহমান ও তার স্ত্রী স্বপ্না বেগম হত্যাকাণ্ডে তাদের ‘অপ্রাপ্তবয়স্ক’ মেয়ে জড়িত বলে দাবি করা হলেও তা মানতে নারাজ নিহত পুলিশ কর্মকর্তার ভাই মশিউর রহমান রুবেল।

কামাল হোসেন তালুকদারবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 August 2013, 11:34 AM
Updated : 8 July 2014, 10:46 AM

জিজ্ঞাসাবাদে ঐশী হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে বলে পুলিশ জানালেও এই হত্যামামলার বাদী রুবেলের ধারণা, তার ভাই ও ভাবি হত্যাকাণ্ডের মধ্যে অন্য কোনো ‘রহস্য’ রয়েছে।  

তিনি সোমবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিষয়টি রহস্যজনক। এত ছো্ট একটি বাচ্চা কিভাবে তার বাবা-মাকে এভাবে হত্যা করতে পারে। এর মধ্যে কোনো রহস্য লুকিয়ে রয়েছে।”

গত শুক্রবার ঢাকার চামেলীবাগে নিজের ফ্ল্যাট থেকে মাহফুজ দম্পতির লাশ উদ্ধার করা হয়। লাশের ময়না তদন্তকারী চিকিৎসক বলেন, ‘অপেশাদার খুনিদের’ ছুরিকাঘাতে তাদের দুজনের মৃত্যু হয়েছে।

লাশ উদ্ধারের আগের দিন বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাওয়া ও লেভেলের ছাত্রী ঐশী শনিবার পুলিশের কাছে ধরা দেন। পরদিন তাকে আদালতের মাধ্যমে রিমান্ডে নেয় পুলিশ।

ঐশীর স্কুলের রেকর্ড অনুযায়ী তার বয়স ১৮ বছরের কম। ফলে অপ্রাপ্তবয়স্ককে রিমান্ডে নেয়া নিয়ে ইতোমধ্যে প্রশ্ন উঠেছে

File Photo

জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছেন, জেলা প্রবেশনার কর্মকর্তাকে না জানিয়ে, বয়স যাচাই না করে অপ্রাপ্তবয়স্ক কাউকে গ্রেপ্তার দেখানো শিশু অধিকার আইনের লঙ্ঘন।

ঐশীর জন্ম কবে- জানতে চাইলে তার চাচা রুবেল বলেন, “ঐশীর জন্ম খুলনায়। আমার যতদূর মনে পড়ে ১৯৯৫ সালে তার জন্ম হয়েছিল।”

ঐশীর বিদ্যালয় অক্সফোর্ড ইন্টারন্যাশনাল স্কুল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তাদের ভর্তি ফর্মে জন্ম তারিখ লেখা হয়েছে ১৭ অগাস্ট, ১৯৯৬।

এদিকে ঐশীকে হেফাজতে নিয়ে প্রথম দিনের জিজ্ঞাসাবাদের পর ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম-কমিশনার মনিরুল ইসলাম সোমবার সাংবাদিকদের বলেছেন, এখন পর্যন্ত যে তথ্য পাওয়া গেছে, তাতে হত্যাকাণ্ডে মেয়েটির সরাসরি জড়িত হওয়ার প্রমাণ পাওয়া গেছে।

হত্যাকাণ্ডের কারণ কী- তা এখনো পুলিশ উদ্ঘাটন করতে না পারলেও ঐশী মাদকাসক্ত ছিলেন বলে দাবি করেন গোয়েন্দা কর্মকর্তা মনিরুল।

ঐশীর চালচলনের বিষয়ে জানতে চাইলে তার চাচা রুবেল বলেন, “দেখুন ভাই, এত ছোট একটা বাচ্চা খারাপ হলে কতটুকুই বা খারাপ হবে।”

স্ত্রী, দুই সন্তান এবং এক শিশু গৃহকর্মীকে নিয়ে চামেলীবাগের ওই ফ্ল্যাটে থাকতেন এসবির পরিদর্শক মাহফুজ।

পুলিশের বক্তব্য অনুযায়ী, সাত বছর বয়সি ছোট ভাইকে নিয়ে বৃহস্পতিবার বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায় ঐশী। পরদিন ভাইকে এক প্রতিবেশীর বাসায় পাঠালেও নিজে ফেরেনি।

নিহত মাহফুজের ছোট ছেলেটি তার চাচাদের হেফাজতে নেই।

ঐশীর মায়ের দিকের আত্মীয় মো. রবিউলের কাছে জানতে চাইলে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ছেলেটি তার খালার বাসায়ও নেই।

তবে গোয়েন্দা কর্মকর্তা মনিরুল জানান, ঐশীর ছোট ভাইটি তার এক স্বজনের কাছে নিরাপদে রয়েছেন।

ছোট ভাতিজার দায়িত্ব নেবেন কি না- জানতে চাইলে ‘হ্যাঁ’ সূচক উত্তর দিয়ে রুবেল বলেন, “শুধু সে কেন, ঐশীও আমাদের রক্ত, আমাদের সন্তান।”

ঐশী ধরা দেয়ার পর তাদের শিশু গৃহকর্মীকেও আটক করে পুলিশ। তাকেও রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। ঐশীর বন্ধু মিজানুর রহমান রনিকেও পুলিশ হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে।

ঐশীসহ তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে মনিরুল দাবি করেন, মাহফুজ ও স্বপ্নাকে হত্যার আগে ঘুমের ওষুধ খাওয়ানো হয়েছিল এবং কফিতে তা মিশিয়ে খাইয়েছিল ঐশী।

হত্যাকাণ্ডের কারণ উদ্ঘাটন এবং এতে কারা কারা জড়িত ছিল, তা জানতে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে বলে জানান তিনি।