উপজেলা নির্বাচনে দিনাজপুরের ১৩টি উপজেলায় ২ লাখ ৭৬ হাজার ৭১৫টি ভোট বাতিল করা হয়েছে। সব চেয়ে বেশি ১৫ হাজার ১২৪টি ভোট বাতিল হয়েছে পার্বতীপুর উপজেলায় মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে।
Published : 02 Apr 2014, 04:15 PM
প্রিসাইডিং অফিসাররা জানিয়েছেন, সিল মারার পর ব্যালট পেপার ঠিকভাবে ভাঁজ না করার কারণে বেশিভাগ ভোট বাতিল হয়েছে।
অনেকে মনে করেন বিপুল ভোট নষ্টের নেপথ্যে নির্বাচন কমিশনের দায়িত্বহীনতা এবং কোথাও কোথাও প্রিসাইডিং অফিসারের গাফিলতিই দায়ী।
দিনাজপুর প্রেস ক্লাবের সভাপতি চিত্ত ঘোষ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ব্যালট পেপারে সিল মারার পর সেটি সঠিক পদ্ধতিতে ভাঁজ না করার কারণে দুটি প্রতীকে কালির দাগ পড়ায় যেমন ভোট বাতিল হয়েছে, তেমনি ব্যালটে টিপ সই দেয়ার পর আঙুলের সেই কালি মোচনের ব্যবস্থা না থাকায় ওই কালির আচড় ব্যালট পেপারে লেগে অনেক ভোট নষ্ট হয়েছে।
“এটি দেখার দায়িত্ব ছিল সংশ্লিষ্ট প্রিজাইডিং অফিসারদের।”
ভোট নষ্টের জন্য নির্বাচন কমিশন কেন দায়ী তার ব্যাখ্যা দিয়ে দিনাজপুর আদর্শ কলেজের অধ্যক্ষ মো. খালেকুজ্জামান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, এর আগে স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ের ভোটের আগে নির্বাচন কমিশন থেকে ব্যালটে সিল দেয়া ও ব্যালট পেপার ভাঁজ করার পদ্ধতি সম্পর্কে ব্যাপক প্রচার চালাতো।
“এবার সেটা করা হয়নি, এটি ভোট নষ্টের অন্যতম কারণ।”
বিপুল পরিমাণ ভোট বাতিলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন দিনাজপুর জেলা রির্টানিং অফিসার নুরুজ্জামান তালুকদার।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, প্রিসাইডিং অফিসারদের দায়িত্বে বিবরণ লিখিতভাবে দেয়া হয়েছে।
ওতে বলা আছে- প্রতিটি ব্যালট পেপার ভিতরের দিকে লম্বালম্বি সমান তিন ভাগে ভাঁজ করে ভোটারকে দিতে হবে এবং সিল মারার পর ভোটারকে ওই ভাবেই ভাঁজ করে ব্যালট বাক্সে সেটি ফেলার পরামর্শ দিতে হবে।
তিনি মনে করেন যেখানে প্রিসাইডিং অফিসার নির্দেশ সঠিকভাবে পালন করেননি, সেখানেই বেশি ভোট বাতিল হয়েছে।
এছাড়া টিপ সইয়ের কালির আচড় ব্যালটে লেগে যাওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “এসব বিষয় গুরুত্বসহকারে নির্বাচন কমিশনকে জানানো হবে।”
এ জেলার বাতিল ভোটের হিসেব
নবাবগঞ্জ উপজেলা
ভোটার সংখ্যা ১ লাখ ৫৪ হাজার ১৩৯।
চেয়ারম্যান পদে প্রদত্ত ১ লাখ ১৩ হাজার ৯৬৪ ভোটের মধ্যে বাতিল হয়েছে ৬ হাজার ৬৮ ভোট।ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রদত্ত ১ লাখ ১৩ হাজার ৯৬৪ ভোটের মধ্যে বাতিল হয়েছে ১১ হাজার ২২৭ ভোট। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রদত্ত ১ লাখ ১৩ হাজার ৯৪১ ভোটের মধ্যে বাতিল হয়েছে ১২ হাজার ১২৫ ভোট।
দিনাজপুর সদর উপজেলা
ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ১৪ হাজার ৭৯৯।
চেয়ারম্যান পদে প্রদত্ত ১ লাখ ৭৮ হাজার ৩১৬ ভোটের মধ্যে বাতিল হয়েছে ৬ হাজার ৬৯৯ ভোট। ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রদত্ত ১লাখ ৭৭ হাজার ৯৭৮ ভোটের মধ্যে বাতিল হয়েছে ১০ হাজার ৭৭১ ভোট। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রদত্ত ১ লাখ ৭৮ হাজার ১৪০ ভোটের মধ্যে বাতিল হয়েছে ৯ হাজার ৯৬১ ভোট।
কাহরোল উপজেলা
ভোটার সংখ্যা ১ লাখ ২ হাজার ১৯৩।
চেয়ারম্যান পদে প্রদত্ত ৭৭ হাজার ১৩০ ভোটের মধ্যে বাতিল হয়েছে ২ হাজার ৭৪২ ভোট। ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রদত্ত ৭৭ হাজার ৮০ ভোটের মধ্যে বাতিল হয়েছে ৫ হাজার ১২৭ ভোট। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রদত্ত ৭৭ হাজার ৬৯ ভোটের মধ্যেবাতিল করা হয়েছে ৩ হাজার ৮২০ ভোট।
খানসামা উপজেলা
ভোটার সংখ্যা ১ লাখ ১১ হাজার ৩৭৭ ।
চেয়ারম্যান পদে প্রদত্ত ৮২ হাজার ২০৩ ভোটের মধ্যে বাতিল হয়েছে ৩ হাজার ৫৬৮ ভোট। ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রদত্ত ৮২ হাজার ১৬২ ভোটের মধ্যে বাতিল হয়েছে ৫ হাজার ২৩৯ ভোট। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রদত্ত ৮২ হাজার ১২১ ভোটের মধ্যে বাতিল হয়েছে ৭ হাজার ২৯ ভোট।
বিরামপুর উপজেলা
ভোটার সংখ্যা ১ লাখ ১৯ হাজার ৩৯৬।
চেয়ারম্যান পদে প্রদত্ত ৯০ হাজার ২৭৩ ভোটের মধ্যে বাতিল হয়েছে ৪ হাজার ৮২২ ভোট। ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রদত্ত ৯০ হাজার ৮৫০ ভোটের মধ্যে বাতিল হয়েছে ১০ হাজার ২১৮ ভোট। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রদত্ত ৯০ হাজার ৭৭৪ ভোটের মধ্যে বাতিল করা হয়েছে ১১ হাজার ৮৩০ ভোট।
ঘোড়াঘাট উপজেলা
ভোটার সংখ্যা ৭৮ হাজার ৫৯৫।
চেয়ারম্যান পদে প্রদত্ত ৫৯ হাজার ১২৪ ভোটের মধ্যে বাতিল করা হয়েছে ৩ হাজার ৭৮৬ ভোট। ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রদত্ত ৫৯ হাজার ৮৬ ভোটের মধ্যে বাতিল করা হয়েছে ৪ হাজার ৭৫৫ ভোট। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রদত্ত ৫৯ হাজার ৯৩ ভোটের মধ্যে বাতিল করা হয়েছে ১০ হাজার ৮৭ ভোট।
বীরগঞ্জ উপজেলা
ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ২ হাজার ৩২২।
চেয়ারম্যান পদে প্রদত্ত ১ লাখ ৪০ হাজার ৮৫৩ ভোটের মধ্যে বাতিল করা হয়েছে ৭ হাজার ৬৬০ ভোট। ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রদত্ত ১ লাখ ৪০ হাজার ৮১৬ ভোটের মধ্যে বাতিল করা হয়েছে ৮ হাজার ৪১৫ ভোট। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রদত্ত ১ লাখ ৪০ হাজার ৬১৮ ভোট ভোটের মধ্যে বাতিল করা হয়েছে ১২ হাজার ৮২৭ ভোট।
চিরিরবন্দর উপজেলা
ভোটার সংখ্যা ১ লাখ ৯১ হাজার ৬৮৬।
চেয়ারম্যান পদে প্রদত্ত ১ লাখ ৩০ হাজার ৬৪০ ভোটের মধ্যে বাতিল করা হয়েছে ৪ হাজার ৬৮৬ ভোট। ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রদত্ত ১ লাখ ৩০ হাজার ৫৮০ ভোটের মধ্যে বাতিল করা হয়েছে ৫ হাজার ৩৮৭ ভোট। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রদত্ত ১ লাখ ৩০ হাজার ৬১৯ ভোটের মধ্যে বাতিল করা হয়েছে ৭ হাজার ৯৭৬ ভোট।
ফুলবাড়ী উপজেলা
ভোটার সংখ্যা ১ লাখ ১৮ হাজার ৭১০।
চেয়ারম্যান পদে প্রদত্ত ৮৬ হাজার ৩২৪ ভোটের মধ্যে বাতিল করা হয়েছে ৪ হাজার ২২৯ ভোট। ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রদত্ত ৮৬ হাজার ১৯৬ ভোটের মধ্যে বাতিল করা হয়েছে ৫ হাজার ৮৭ ভোট। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রদত্ত ৮৬ হাজার ৫৪ ভোটের মধ্যে বাতিল করা হয়েছে ৬ হাজার ৭২৮ ভোট।
বোচাগঞ্জ উপজেলা
ভোটার সংখ্যা ১ লাখ ৬ হাজার ৯৫।
চেয়ারম্যান পদে প্রদত্ত ৮২ হাজার ২২১ ভোটের মধ্যে বাতিল করা হয়েছে ৩ হাজার ৫৪৭ ভোট। ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রদত্ত ৮২ হাজার ১২৩ ভোটের মধ্যে বাতিল করা হয়েছে ৫ হাজার ১৬১ ভোট। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রদত্ত ৮২ হাজার ৭২ ভোটের মধ্যে বাতিল করা হয়েছে ৪ হাজার ২০৪ ভোট।
বিরল উপজেলা
ভোটার সংখ্যা ১ লাখ ৬৯ হাজার ৫২২।
চেয়ারম্যান পদে প্রদত্ত ১ লাখ ২৯ হাজার ৩২৬ ভোটের মধ্যে বাতিল হয়েছে ৫ আজার ৭১০ ভোট। ভাইস চেয়ারম্যানে প্রদত্ত ১ লাখ ২৯ হাজার ৩৯৬ ভোটের মধ্যে বাতিল হয়েছে ১০ হাজার ১৫২ ভোট। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানে প্রদত্ত ১ লাখ ২৯ হাজার ৯৮ ভোটের মধ্যে বাতিল করা হয়েছে ১১ হাজার ৬২১ ভোট।
পার্বতীপুর উপজেলা
ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৩৬ হাজার ৯৭৫।
চেয়ারম্যান পদে প্রদত্ত ১ লাখ ৫৫ হাজার ৮৫৭ ভোটের মধ্যে বাতিল হয়েছে ৮ আজার ৭২ ভোট। ভাইস চেয়ারম্যানে প্রদত্ত ১ লাখ ৫৫ হাজার ৪৫৪ ভোটের মধ্যে বাতিল হয়েছে ৯ হাজার ৯৮১ভোট। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানে প্রদত্ত ১ লাখ ৫৪ হাজার ৭০২ ভোটের মধ্যে বাতিল করা হয়েছে ১৫ হাজার ১২৪ ভোট।
হাকিমপুর উপজেলা
ভোটার সংখ্যা ৬১ হাজার ৫১৪।
চেয়ারম্যান পদে প্রদত্ত ৪৭ হাজার ৭১১ ভোটের মধ্যে বাতিল হয়েছে ৩ হাজার ৪৮ ভোট। ভাইস চেয়ারম্যানে প্রদত্ত ৪৬ হাজার ৭১১ ভোটের মধ্যে বাতিল হয়েছে ২ হাজার ৭৮৮ভোট। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানে প্রদত্ত ৪৬ হাজার ৫৯১ ভোটের মধ্যে বাতিল করা হয়েছে ৪ হাজার ৪৩৪ ভোট।