জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট ও জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় অভিযোগ গঠনের শুনানির জন্য আদালতে উপস্থিত হয়েছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া।
Published : 19 Mar 2014, 10:40 AM
এ দুই মামলার ইতোমধ্যে সময়ের আবেদন করেছেন তার আইনজীবীরা।
বুধবার বেলা ১টার দিকে আদালত প্রাঙ্গণে পৌঁছানোর পর খালেদা জিয়া বিশেষ জজ আদালত ভবনের ছয় তলায় বিশেষ জজ-৩ এর এজলাসে উঠে যান। সেখানে আগেই তার জন্য একটি চেয়ার এনে রাখা হয়।
এ আদালতের বিচারক বাসুদেব রায় অভিযোগ গঠনের বিষয়ে দুই পক্ষের বক্তব্য শুনবেন।
খালেদা জিয়ার হাজির দিন থাকায় সকাল থেকেই আদালত প্রাঙ্গণে মোতায়েন করা হয় বিপুল সংখ্যক পুলিশ। চেয়ারপারসন আসছেন বলে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী নিয়ে পুরান ঢাকার আদালত পাড়ায় জড়ো হন দলের কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা।
খালেদা জিয়া পৌঁছানোর পর খোকাও তার সঙ্গে এজলাস কক্ষে যান। আইনজীবী রফিকুল ইসলাম মিয়া ও বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মাহবুব উদ্দিন খোকনও এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন।
এদিকে খালেদা নির্ধারিত চেয়ারে বসার পর আদালত কক্ষে দাঁড়ানো নিয়ে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ সমর্থিত আইনজীবী এবং খালেদার নিজস্ব নিরাপত্তারক্ষীদের মধ্যে কিছুটা বাক বিতণ্ডা হয় এবং ধাক্কা-ধাক্কি হয়।
খালেদার আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তারা দুই মামলাতেই অভিযোগ গঠনের শুনানির জন্য আরো সময় চেয়েছেন।
আবেদনে বলা হয়, এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা খারিজে আপিল বিভাগে লিভ টু আপিল এবং দাতব্য ট্রাস্ট মামলায় হাই কোর্টে খালেদার পুনর্বিবেচনার আবেদন শুনানির অপেক্ষায়।
ওই শুনানি না হওয়া পর্যন্ত বিচারিক আদালতে অভিযোগ গঠনের শুনানি স্থগিত রাখার আবেদন করেছেন খালেদার আইনজীবীরা।
জিয়া দাতব্য ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে অর্থ লেনদেনের অভিযোগে ২০১১ সালে এবং জিয়া এতিমখানা ট্রাস্টে অনিয়মের অভিযোগে ২০০৮ সালে মামলা দুটি দায়ের করে দুর্নতি দমন কমিশন।
এর মধ্যে দাতব্য ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় দুদকের দেয়া অভিযোগপত্র গত বছর ১৫ জানুয়ারি গ্রহণ করে আদালত। সর্বশেষ ওইদিনই আদালতে হাজির হয়েছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা।
তার আইনজীবীদের আবেদনে এতিমখানা মামলার অভিযোগ গঠনের শুনানি ৪১ বার এবং দাতব্য ট্রাস্ট মামলার শুনানি ১১ বার পিছিয়ে যায়।
গত ১৬ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়াকে হাজির হওয়ার জন্য শেষবারের মতো সময় দেন বিচারক। ওইদিন আদালতের আদেশে বলা হয়, ১৯ মার্চ বিএনপি চেয়ারপারসন আদালতে না এলে তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হতে পারে।
মামলা বৃত্তান্ত
২০১১ সালের ৮ অগাস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াসহ চার জনের বিরুদ্ধে জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা দায়ের করেন দুর্নীতি দমন কমিশনের সহকারী পরিচালক হারুনুর রশিদ।
তেজগাঁও থানার এ মামলায় ক্ষমতার অপব্যবহার করে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা আত্মসাত করার অভিযোগ আনা হয় আসামিদের বিরুদ্ধে।
২০১২ সালের ১৬ জানুয়ারি খালেদা জিয়াসহ চারজনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা।
এ মামলার অপর আসামিরা হলেন- খালেদার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, হারিছের তখনকার সহকারী একান্ত সচিব ও বিআইডব্লিউটিএর নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান।
এদের মধ্যে হারিছ চৌধুরী মামলার শুরু হতেই পলাতক। তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও রয়েছে। খালেদাসহ বাকি দুই আসামি জামিনে রয়েছেন।
জিয়া এতিমখানা ট্রাস্টে অনিয়মের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশন ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় অন্য মামলাটি দায়ের করে।
এতিমদের সহায়তার জন্য একটি বিদেশি ব্যাংক থেকে আসা ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয় এ মামলায়।
দুর্নীতি দমন কমিশনের সহকারী পরিচালক হারুনুর রশিদ ২০১০ সালের ৫ আগস্ট বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া, ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে এ মামলায় অভিযোগপত্র দেন।
মামলার অপর আসামিরা হলেন- মাগুরার সাবেক সাংসদ কাজী সালিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী এবং প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান।
তারেক রহমান উচ্চ আদালতের জামিনে গত পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে বিদেশে অবস্থান করছেন। সালিমুল হক কামাল ও শরফুদ্দিন আছেন জামিনে। বাকি দুজন পলাতক।