রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে গত দেড় বছরে আওয়ামী লীগ সমর্থিত ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের একাধিকবার প্রকাশ্যে অবৈধ অস্ত্র হাতে দেখা গেলেও তাদের কাউকে গ্রেপ্তার হতে দেখা যায়নি।
Published : 03 Feb 2014, 06:24 PM
গত দুই বছরে অন্তত দুই বারের পর রোববারও বর্ধিত ফি ও সান্ধ্য কোর্স বাতিলের দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর চড়াও হওয়ার সময় অস্ত্র হাতে দেখা গেছে কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতাকে।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন ছবিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশে দাঁড়িয়ে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের গুলি ছুড়তে দেখা গেলেও পুলিশের পক্ষ থেকে প্রায় সব সময়ই অভিযুক্তদের চিহ্নিত করতে না পারার দোহাই দেয়া হচ্ছে।
রোববারের ঘটনার পরও কারো আটকের খবর পাওয়া যায়নি। তবে রাজশাহী নগর পুলিশ কমিশনার মাহবুবুর রহমান বলেছেন, “আমরা ভিডিও ফুটেজ দেখে হামলাকারীদের চিহ্নিত করার চেষ্টা করেছি।”
রোববার শিক্ষার্থীদের ওপর চড়াও হওয়ার সময় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শামসুজ্জামান ইমন, আল-গালিব ও ফয়সাল আহম্মেদ রুনু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান পলাশ ও নাসিম আহম্মেদ সেতু, পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক মুস্তাকিন বিল্লাহ, ছাত্রলীগ নেতা সুদীপ্ত সালামের হাতে অস্ত্র দেখা গেছে।
অস্ত্র হাতে এই ছাত্রলীগ নেতাদের ছবি দেশের প্রায় সব গণমাধ্যমেই প্রচারিত কিংবা প্রকাশিত হয়েছে।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা অস্ত্রধারীদের পাশে পুলিশের থাকার দাবি করলেও তা অস্বীকার করেন রাজশাহীর পুলিশ কমিশনার মাহবুবুর রহমান।
তিনি সোমবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “হামলাকারীদের আশপাশে পুলিশ ছিল না।”
২০১২ সালের ১০ সেপ্টেম্বর ছাত্রদলের মিছিলের ওপর চড়াও হওয়ার সময় ছাত্রলীগ নেতাদের হাতে অস্ত্র দেখা যায়।
অস্ত্র হাতে ছাত্রলীগের সেই সময়ের সহসভাপতি আখেরুজ্জামান তাকিম, সাংগঠনিক সম্পাদক তৌহিদ আল তুহিনসহ কয়েকজনকে দেখা গিয়েছিল।
ওই বছরের ২ অক্টোবর ইসলামী ছাত্রশিবিরের সঙ্গে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার সময়ও ছাত্রলীগের ৫ নেতার হাতে পিস্তল দেখা যায়। ওই সময়ও পুলিশের সামনে ছাত্রলীগ নেতাদের গুলি ছোড়ার ছবি গণামাধ্যমে প্রকাশিত হয়।
ওই ঘটনার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য আব্দুস সোবহানকে টেলিফোন করে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ অস্ত্রবাজদের গ্রেপ্তারে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু তাদেরকে আটক হতে দেখা যায়নি।
২০১৩ সালে ১৬ মার্চ ছাত্রলীগ নেতা পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী নাসিম আহমেদ সেতুর ছাত্রত্ব বাতিলের প্রতিবাদে ওই বিভাগে হামলা ও ভাংচুর করা হয়। হামলায় সেতু নিজেও অংশ নেন।
ওই সময় ছবি তুলতে গেলে ছাত্রলীগের রোষের শিকার হন সকালের খবরের আলোকচিত্র সাংবাদিক আজাহার উদ্দীন।
অস্ত্র হাতে রাবি ছাত্রলীগের নেতা তৌহিদ আল তুহিন (ফাইল ছবি)
প্রকাশ্যে অবৈধ অস্ত্র হাতে ছাত্রলীগের এই মহড়ার পেছনে প্রশাসনের মদদ দেয়াকে দায়ী করেন ছাত্র ইউনিয়ন বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি আয়তুল্লাহ খোমেনী, যিনি চলমান আন্দোলনের সমন্বয়কারী।
খোমেনী বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংগঠনগুলোর দায়িত্ব শিক্ষার্থীদের স্বার্থে এগিয়ে আসা। কিন্তু তারা (ছাত্রলীগ) অস্ত্র নিয়ে এমনভাবে আতঙ্ক তৈরি করেছে যে সাধারণ শিক্ষার্থীরা তাদের নাম শুনলেই আঁতকে উঠে।”
তবে অস্ত্রধারীদের মদদ দেয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মুহাম্মদ মিজানউদ্দিন।
তিনি বলেন, “অপরাধ করলে তার শাস্তি হওয়া উচিত। যারা সন্ত্রাসের আশ্রয় নেয়, তারা শিক্ষার্থী নামের কলঙ্ক। জড়িত শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে আমরা একাডেমিকভাবে ব্যবস্থা নেব।”
বিএনপির ছাত্রসংগঠন ছাত্রদলের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক আরাফাত রেজা আশিকও অস্ত্রের মহড়ার নিন্দা জানিয়েছেন; যদিও তার সংগঠনের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধেও একই অভিযোগ রয়েছে।
বারবার একই ঘটনা ঘটায় সমালোচনার মুখে থাকলেও হামলার দায়িত্ব স্বীকার করতে বরাবরের মতোই নারাজ সরকার সমর্থক সংগঠনটি।
ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক তৌহিদ আল তুহিন বলেন, “ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা সাধারণত হামলায় জড়ায় না। যদি কেউ আঘাত করতে আসে সেই ক্ষেত্রে আমাদের ছেলেরা প্রতিরোধ গড়ে তোলে মাত্র।”
রোববারের ঘটনাকে ‘অনাকাঙ্ক্ষিত’ দাবি করে তিনি বলেন, “জড়িত নেতা-কর্মীদের বহিষ্কারের জন্য কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে আমরা সুপারিশ করেছি।”
২০১২ সালে সোহেল হত্যাকাণ্ডের পর কয়েকজনের সঙ্গে তুহিনকেও বহিষ্কার করেছিল ছাত্রলীগ। তবে কয়েক মাসের মধ্যেই তার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়।