জাতিসংঘ মহাসচিবের দূত অস্কার ফার্নান্দেজ-তারানকোর সঙ্গে দুই দফা বৈঠক করলেও অগ্রগতি নিয়ে কোনো কথা বলছেন না আওয়ামী লীগ কিংবা বিএনপি নেতারা।
Published : 09 Dec 2013, 09:22 PM
নির্বাচন নিয়ে মুখোমুখি দুই প্রধান দলকে সমঝোতায় রাজি করানোর লক্ষ্য নিয়ে গত শুক্রবার ঢাকায় আসার পর আওয়ামী লীগের সঙ্গে দুই দফা বৈঠক করেন জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব। খালেদা জিয়ার সঙ্গে দুই দফা আলোচনার পাশাপাশি তিনি আলাদা বৈঠক করেন বিএনপির দুই নেতার সঙ্গেও।
কিন্তু এই সব বৈঠকের আলোচনার বিষয় কিংবা তাতে কোনো অগ্রগতি হচ্ছে কি না, তার কিছুই দেশবাসী জানছে না; তবে ফার্নান্দেজ-তারানকোর সঙ্গে বৈঠককারী প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের মাধ্যমে জানা গেছে ‘গুরুত্বপূর্ণ’ আলোচনা হচ্ছে।
আর সমঝোতার লক্ষ্য নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটানো জাতিসংঘ দূত তৃতীয় দিন সোমবার সংবাদ মাধ্যমের সামনে প্রথম মুখ খুলে শুধু এটুকুই বলেছেন, সদিচ্ছা থাকলে ‘শান্তিপূর্ণ সমাধান’ এখনো সম্ভব।
‘সর্বদলীয়’ সরকার গড়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নির্বাচনে এগিয়ে যাওয়া এবং তার বিরোধিতা করে নির্দলীয় সরকারের দাবি নিয়ে বিএনপির হরতাল-অবরোধে দেশে রাজনৈতিক সঙ্কটের আশঙ্কার মধ্যে বাংলাদেশে আসেন বান কি-মুনের দূত ফার্নান্দেজ-তারানকো।
সাত মাসের মধ্যে দ্বিতীয় সফরে এসে তিন দিন ধরে রাজনীতিকসহ সংশ্লিষ্ট অন্যদের সঙ্গে আলোচনার পর আর্জেন্টাইন এই কূটনীতিক মনে করছেন, সমাধানের একটি সম্ভাবনা এখনো রয়েছে।
“শান্তিপূর্ণভাবে সংলাপ যদি আমরা চালিয়ে যাই,” ফার্নান্দেজ-তারানকো একথা যেদিন বলেছেন; এর পরদিনই তার নির্ধারিত সফর শেষ হওয়ার কথা।
শনিবার জাতিসংঘ দূতের সঙ্গে প্রথম দফা বৈঠকের পর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম সাংবাদিকদের জিজ্ঞাসায় বলেন, তাদের মধ্যে প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে। তবে ফার্নান্দেজ-তারানকোর সফর সফল হবে বলে তারা আশাবাদী।
সোমবার দ্বিতীয় দফায় জাহিসংঘ দূতের সঙ্গে বৈঠক হয় আওয়ামী লীগের। মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আশরাফ শুধু বলেন, “কমপ্রিহেনসিভ একটা কিছু হলে আপনাদের জানাব।”
ফার্নান্দেজ-তারানকোর সঙ্গে বৈঠক করে আসা প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভী সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা কথা দিয়েছি, কোনো স্টেটমেন্ট দেব না।
সঙ্কট নিরসনে ‘আশাবাদী’ হলেও ‘এখন কথা না বলাই ভালো’ বলেই সাংবাদিকদের এড়িয়ে যান তিনি।
ফার্নান্দেজ-তারানকো তার কর্মসূচির প্রথম দিন শনিবারই বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে। সেদিন তিনি বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়ার সঙ্গেও বৈঠক করেন।
সোমবার দ্বিতীয় দফায় বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে দেখা করেন জাতিসংঘ দূত। এর আগের দিন বিএনপির সহসভাপতি শমসের মবিন চৌধুরী ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সাবিহ উদ্দিন আহমেদের সঙ্গেও বৈঠক করেন তিনি।
খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠকের পর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও আশরাফের মতোই সাংবাদিকদের কৌতূহল মেটাননি।
তিনি বলেন, “আলোচনা চলছে, আলোচনা এখনো শেষ হয়নি। শেষ হলে এ বিষয়ে আমরা আমাদের দিকটা গণমাধ্যমকে জানাব।”
আগামী ৫ জানুয়ারি ভোটের দিন রেখে তফসিল ঘোষণা করা সিইসি এই মুহূর্তে তফসিল পেছানোর ক্ষেত্রে জটিলতার দিকটি ফার্নান্দেজ-তারানকোকে বলেছেন। তফসিল পরিবর্তন না হলে এই নির্বাচনে বিএনপির অংশ নেয়ার সুযোগ এখন আর নেই।
তবে সমঝোতা হলে সব কিছুই সম্ভব ঘোষণা দিয়ে রাখা কাজী রকিব সোমবার সাংবাদিকদের জিজ্ঞাসায় বলেন, “একটা গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা চলছে। এর ভেতরে আমরা এখন কোনো কথাবার্তা বলব না। আলোচনা চলছে, চলুক। দেখা যাক, কী হয়।”
ফার্নান্দেজ-তারানকো আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বাইরে জাতীয় পার্টি ও জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গেও বৈঠক করেন। ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে নাগরিক সমাজের একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গেও তার আলোচনা হয়।
কামাল হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, তারা একতরফা নির্বাচন বন্ধ করার উদ্যোগ নিতে বলেছেন।
তিন দিনে কূটনীতিকদের মধ্যে ভারতের হাইকমিশনার পঙ্কজ শরণ, যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত ড্যান মজীনা, রুশ রাষ্ট্রদূত আলেক্সান্ডার নিকোলায়েভের সঙ্গেও বৈঠক করেন জাতিসংঘ দূত।