যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক নতুন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাই বিসওয়ালের সঙ্গে বৈঠকের পর নোবেল বিজয়ী মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, আর্থসামাজিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা ব্যাহত হোক-তা আমেরিকা চায় না।
Published : 17 Nov 2013, 03:08 PM
ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত ড্যান ডব্লিউ মজীনার বাসায় রোববার আধা ঘণ্টার বেশি সময় বৈঠক করেন নিশা ও ইউনূস।
বৈঠকের পর ইউনূস বলেন, দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, গ্রামীণ ব্যাংক, সামাজিক ব্যবসাসহ বিভিন্ন বিষয়ে তাদের মধ্যে কথা হয়েছে।
“নিশা দেশাই বিসওয়াল বলেছেন, বাংলাদেশ আর্থসামাজিক ক্ষেত্রে যথেষ্ট উন্নতি করেছে। এই অগ্রযাত্রা কোনোভাবে ব্যাহত হোক- তা যুক্তরাষ্ট্র চায় না।
“আমি তাকে বলেছি, আমরাও তেমন কিছু চাই না।”
গ্রামীণ ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইউনূস বলেন, সফররত সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে তার কাছে জানতে চেয়েছিলেন। এর আগে তিনি গণমাধ্যমে এ বিষয়ে যে বক্তব্য দিয়েছিলেন, তা তিনি নিশার কাছে তুলে ধরেছেন।
“গ্রামীণ ব্যাংকের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়েও তিনি আমার কাছে জানতে চেয়েছেন। এই ব্যাংকের ভবিষ্যত নিয়ে উদ্বেগের কথাও জানিয়েছেন।”
আগে কখনো রাজনীতি নিয়ে খোলামেলা কথা বলতে দেখা না গেলেও গত ২২ অগাস্ট ইউনূস বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয় বলেই তিনি মনে করেন।
ওই বক্তব্যের মধ্যে দিয়ে কার্যত নিজের রাজনৈতিক অবস্থান স্পষ্ট করেন গ্রামীণ ব্যাংকের সাবেক এমডি, যিনি এর আগে একবার রাজনৈতিক দল গড়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন।
বর্তমান সরকার সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলুপ্ত করার পর থেকেই তা পুনর্বহালের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে আসছে বিরোধী দল বিএনপি ও তাদের শরিকরা।
সরকার গ্রামীণ ব্যাংক আইন সংশোধন করায় সরকারের সমালোচনা করে ইউনূসের পাশে দাঁড়ানোরও ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি।
ওই সংশোধনীর মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে গ্রামীণ ব্যাংকের হিসাব দেয়ার বাধ্যবাধকতা দেয়া হয়েছে, যা নিয়ে আপতিত জানিয়েছেন ইউনূসও।
আইন সংশোধনের প্রতিক্রিয়ায় ইউনূস সম্প্রতি বলেন, এর মধ্য দিয়ে ‘পরম গৌরবের’ একটি প্রতিষ্ঠানকে সরকার ‘ধ্বংসের দিকে’ ঠেলে দিল।
১৯৮৩ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকেই গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থা পরিচালকের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন ইউনূস। ২০০৬ সালে তিনি ও গ্রামীণ ব্যাংক দারিদ্র্য বিমোচনের মাধ্যমে শান্তিতে অবদানের জন্য নোবেল পুরস্কার পান।
অবসরের বয়সসীমা পেরিয়ে যাওয়ার কারণ দেখিয়ে ২০১১ সালের মার্চে ইউনূসকে অব্যাহতি দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর বিরুদ্ধে আদালতে গিয়েও ইউনূস হেরে যান।
ইউনূস জানান, মার্কিন প্রেসিডেনশিয়াল পদকজয়ীদের নিয়ে হোয়াইট হাউজের একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে সোমবার তিনি যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছেন। এছাড়া এপ্রিলে তিনি মিয়ারমারেও যাবেন।
তিন দিনের সফরে শনিবার ঢাকায় পৌঁছান যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী মন্ত্রী। রোববার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়ার সঙ্গে তার বৈঠকের কথা রয়েছে।