কমিউনিটি সেন্টার, ইউনিয়ন পর্যায়ের সেবাকেন্দ্র ও উপজেলা পর্যায়ে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোরও পরামর্শ।
Published : 20 May 2024, 12:25 AM
সরকার ২০৩২ সালের মধ্যে সর্বজনীন স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তা বাস্তবায়নে একটি সুনির্দিষ্ট পথরেখা এখনই তৈরির তাগিদ দিয়েছে এসডিজি অ্যাকশন অ্যালায়েন্স, বাংলাদেশ।
এজন্য কমিউনিটি সেন্টার, ইউনিয়ন পর্যায়ের সেবাকেন্দ্র ও উপজেলা পর্যায়ে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর পরামর্শ দিয়ে প্রতিষ্ঠানটি প্রান্তিক পর্যায়ে কাজ করা স্বাস্থ্যকর্মীদের ‘সম্মানজনক বেতন’ দেওয়ার সুপারিশ করেছে।
এসব পদক্ষেপ বাস্তবায়নসহ একটি জনকেন্দ্রিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থা তৈরিতে স্বাস্থ্যখাতে সরকারি বরাদ্দ বাড়ানোর তাদিগ এসেছে বেসরকারি এ উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান থেকে।
রোববার সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোটার্স ইউনিটিতে এক আলোচনা সভায় এক অবস্থানপত্রে এসব সুপারিশ তুলে ধরা হয়।
এতে ২০৩২ সালের মধ্যে সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে এ খাতে আর্থিক বরাদ্দ বাড়ানো, স্বাস্থ্যসেবার মান এবং প্রাপ্যতা নিশ্চিতসহ মোট ১০টি সুপারিশ তুলে ধরা হয়।
'সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবার অধিকার প্রতিষ্ঠায় নাগরিক সমাজের অবস্থানপত্র শীর্ষক' এ আলোচনা সভার আয়োজন করে এসডিজি অ্যাকশন অ্যালায়েন্স বাংলাদেশ, গ্লোবাল কল টু অ্যাকশন এগেইনস্ট পোভার্টি ও নোয়াখালী রুরাল ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি (এনআরডিএস)।
এসডিজি অ্যাকশন অ্যালায়েন্স বাংলাদেশের সমন্বয়ক ও এনআরডিএস এর প্রধান নির্বাহী আবদুল আউয়াল অবস্থানপত্র তুলে ধরেন।
অবস্থানপত্রে বলা হয়, বাংলাদেশ স্বাস্থ্য খাতে জিডিপির মাত্র ১ দশমিক ৫ শতাংশ ব্যয় করে, যা বৈশ্বিক গড় ৫ দশমিক ৯ শতাংশ থেকে অনেক কম। সকলের জন্য মানসম্পন্ন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য সরকারের সক্ষমতা তৈরির ক্ষেত্রে এটি একটি বড় বাধা।
“বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, মৌলিক স্বাস্থ্যসেবা পেতে একজন বাংলাদেশির বছরে ৮৮ ডলার খরচ করা প্রয়োজন। কিন্তু বাংলাদেশে চিকিৎসা খাতে মাথাপিছু খরচ হয় ৫৮ ডলার, যার বড় অংশই নাগরিকেরা নিজেরা সংস্থান করেন। বাংলাদেশের জনগণকে তাদের স্বাস্থ্য ব্যয়ের প্রায় ৭০ শতাংশ নিজেরাই সংস্থান করতে বাধ্য হয়।”
এতে বলা হয়, “সরকারি স্বাস্থ্য সেবার অপর্যাপ্ততা, চিকিৎসা ব্যবস্থার উদারীকরণের ফলশ্রুতিতে ক্রমবর্ধমান চিকিৎসা ব্যয়, জনগণের আয় বৈষম্য ইত্যাদি কারণে গ্রাম ও শহর এলাকায় ধনী এবং দরিদ্রের মধ্যে স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য বৈষম্য রয়েছে। দেশের ২০ শতাংশ ধনীর তুলনায় সবচেয়ে দরিদ্র ২০ শতাংশ জনগণের মধ্যে মাত্র অর্ধেকের স্বাস্থ্য সেবায় অভিগম্যতা রয়েছে। এমতাবস্থায় সকল নাগরিকের স্বাস্থ্য সেবায় প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে সরকারি চিকিৎসা সেবার মান উন্নিতকরণসহ পরিধি বাড়ানো একটি অতি জরুরি কর্তব্য।”
অনুষ্ঠানে এসডিজি অ্যাকশন অ্যালায়েন্স পরিচালিত একটি জরিপের তথ্য তুলে ধরা হয়।
২০২৩ সালে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মধ্যে স্বাস্থ্যসেবায় অভিগম্যতা, কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন গ্রহণের হার এবং সামাজিক সুরক্ষার কর্মসূচিতে অন্তর্ভূক্তির মত বিষয়ে নোয়াখালী, ঢাকা, চট্টগ্রাম ও বরিশাল জেলার মোট ৬০০ জন নাগরিকের উপর পরিচালিত একটি মতামত জরিপের তথ্য তুলে ধরেন আবদুল আউয়াল।
এতে ৪৬ শতাংশ উত্তরদাতা চিকিৎসা খরচ মেটাতে কোনো না কোনো অসুবিধার সম্মুখীন হয়েছে বলে জরিপে উত্তর দিয়েছেন।
আলোচনায় বরাদ্দ বাড়ানোর পাশাপাশি গ্রামীণ এলাকায় প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা সুবিধা তৈরি এবং প্রয়োজনীয় ওষুধ সরবরাহ, কমিউনিটি হেলথ সেন্টারসহ সব সরকারি প্রতিষ্ঠানকে জনঅংশগ্রহণমূলক করা ও নজরদারি বাড়ানো, দারিদ্র্য, অপুষ্টি, শিক্ষা ও স্যানিটেশনে প্রবেশাধিকারের সীমাবদ্ধতা চিহ্নিত, বীমা কর্মসূচি সম্প্রসারণ বা স্বাস্থ্যসেবা খরচের জন্য ভর্তুকি প্রদান, স্বাস্থ্যনীতির সংস্কার, স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের প্রশিক্ষণের সুপারিশ জানানো হয়।
আলোচনা সভায় নারী অধিকার জোটের সচিব মনোয়ারা আক্তার মিনু, বন্ধন নোয়াখালীর নির্বাহী পরিচালক আমিনুজ্জামান মিলন ও লেখক প্রত্যয় জসীম অংশ নেন।