রিমান্ড শেষে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে বাবা-মা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গ্রেপ্তার ঐশী রহমান।
Published : 24 Aug 2013, 02:18 PM
শনিবার ঢাকার আদালতে খাস কামরায় জবানবন্দি নেয়ার পর এই কিশোরীকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন মহানগর হাকিম আনোয়ার সাদত।
ঐশীর পক্ষের আইনজীবীরা অভিযোগ করেছেন, ‘চাপ’ দিয়ে ও ‘প্রলোভন’ দেখিয়ে এই কিশোরীর কাছ থেকে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নেয়া হয়েছে।
মাহাবুব হাসান রানাসহ ঐশীর আইনজীবীরা কয়েকটি আবেদনও আদালতে দিয়েছেন। তারা ঐশী বিষয়ক শুনানি কিশোর আদালতে নেয়ার আবেদন জানিয়েছেন।
নিহত পুলিশ কর্মকর্তার মেয়ে ‘মানসিক ভারসাম্যহীন’ দাবি করে তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করা এবং হত্যাকাণ্ডের ঘটনাস্থলে যেতে আসামি পক্ষের আইনজীবীদের অনুমতি দিতেও আদালতের নির্দেশনা চেয়েছেন তারা।
ঐশীর পক্ষে জামিনের আবেদনও জানিয়েছেন তার বাবার দিকের আত্মীয়দের নিয়োগ করা এই আইনজীবীরা।
এই আবেদনগুলোর শুনানি রোববার ঢাকার হাকিম আদালতে হবে।
জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচ দিন হেফাজতে রাখার পর শনিবার দুপুরে ঐশীকে ঢাকার আদালতে নেয় পুলিশ। তার সঙ্গে নেয়া হয় বন্ধু মিজানুর রহমান রনি ও শিশু গৃহকর্মী খাদিজা খাতুন সুমীকেও।
তাদের মহানগর হাকিম আনোয়ার সাদাতের খাস কামরায় ঢোকাতে দেখা যায়।
ওই আদালতে পুলিশের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা উপপরিদর্শক আব্দুল গাফফার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ঐশী ও সুমী স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।
স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়ার পর ঐশীর সঙ্গে তাদের বাড়ির গৃহকর্মী সুমীকেও কারাগারে পাঠানোর আদেশ হয়। তাদের রাখা হবে সংশোধনাগার গাজীপুর কিশোরী উন্নয়ন কেন্দ্রে।
রনি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেননি। তাকে পুনরায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আরো ১০ দিন হেফাজতের আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক আবু আল খায়ের মাতুব্বর।
শুনানি শেষে মহানগর হাকিম আসাদুজ্জামান নূর পাঁচ দিন হেফাজতের আদেশ দেন।
ওই তিনজনকে গত ১৮ অগাস্ট পাঁচ দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছিল ঢাকার হাকিম আদালত। এর মধ্যে ‘অপ্রাপ্তবয়স্ক’ ঐশী ও সুমিকে রিমান্ডে পাঠানোর সমালোচনা উঠেছে।
গত ১৬ অগাস্ট ঢাকার চামেলীবাগে নিজের ফ্ল্যাট থেকে পুলিশের এসবির পরিদর্শক মাহফুজুর রহমান ও তার স্ত্রী স্বপ্না বেগমের ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার করা হয়।
পুলিশ রিমান্ডের আবেদনে বলা হয়েছিল, ঐশী মাদকাসক্ত বন্ধুবান্ধবদের নিয়ে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। তাদের সবার পরিচয় জানতে এবং হত্যার রহস্য উদঘাটনের জন্য জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন।
অক্সফোর্ড ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের ও লেভেলের ছাত্রী ঐশী তার বাবা ও মায়ের হত্যাকাণ্ডে জড়িত বলে পুলিশের দাবি।
তবে নিহত মাহফুজের ছোট ভাই এবং এই হত্যাকাণ্ডের মামলার বাদী মশিউর রহমান রুবেলের ধারণা, তার ভাই ও ভাবি হত্যাকাণ্ডের মধ্যে অন্য কোনো ‘রহস্য’ রয়েছে।
ঐশীকে রিমান্ডে পাঠানো নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় বয়স প্রমাণের জন্য আদালতের অনুমতি নিয়ে তার ডাক্তারি পরীক্ষা করেছে পুলিশ। তার প্রতিবেদন এখনো পাওয়া যায়নি।
ঐশীর স্কুলের রেকর্ড অনুযায়ী তার বয়স ১৮ বছরের কম। এই বয়সের কাউকে গ্রেপ্তার ও রিমান্ড শিশু অধিকারের লঙ্ঘন বলে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান জানিয়েছেন।
ঐশীর পাশাপাশি শিশু গৃহকর্মীকে সুমিকে রিমান্ডে নেয়া নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।