ঐশীসহ তিনজন ৫ দিনের রিমান্ডে

এসবি কর্মকর্তা মাহফুজুর রহমান ও তার স্ত্রী স্বপ্না বেগম হত্যা মামলায় তাদের মেয়ে ঐশী রহমান, তার বন্ধু ও বাসার পরিচারিকাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৫ দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছে আদালত।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 August 2013, 09:19 AM
Updated : 19 August 2013, 09:28 AM

মহানগর হাকিম মিজানুর রহমান রোববার এই আদেশ দেন।

পল্টন থানার এসআই শহীদুল্লাহ প্রধান দুপুরে ঐশী, তার বন্ধু মিজানুর রহমান রনি ও গৃহ পরিচারিকা খাদিজা খাতুন সুমিকে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের আবেদন করেন। 

আবেদনে তিনি বলেন, ঐশী মাদকাসক্ত ছিল।  মাদকাসক্ত বন্ধুবান্ধরা মিলেই এই হত্যাকাণ্ড ঘটায়।  তাদের সবার পরিচয় জানতে এবং হত্যার প্রকৃত রহস্য উদঘাটনের জন্য এই তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন।

অন্যদিকে ঐশীর পক্ষে তার আইনজীবী মাহাবুব হাসান রানা, চৌধুরী মোহাম্মদ গালিব রাকিব ও রেজাউর রহমান টিংকু রিমান্ডের বিরোধিতা করে জামিন আবেদন করেন। রনির পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মন্টু রঞ্জন দাস।

মাহাবুব হাসান রানা বলেন, অপ্রাপ্তবয়স্ক ঐশীকে রিমান্ডে নেয়ার প্রশ্নই আসে না। এই শুনানি স্থগিত রেখে তাকে কিশোর আদালতে নেয়া হোক। আর জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন হলে তা কারাফটকেই করা উচিৎ।

রানা বলেন, “যে পরিবার ও যে সমাজ ঐশীদের তৈরি করে তাদের বিচার হওয়া দরকার।”

শুনানি শেষে বিচারক জামিন নাকচ করে তিনজনকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেন।

তিনি আদেশে বলেন, মহিলা পুলিশের উপস্থিতিতে সতর্কতার সঙ্গে ঐশীকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে।

শুনানি শুরুর আগে কালো বোরখা ও মেরুন চাদর পরিহিত ঐশী এজলাসে দাঁড়িয়ে সাংবাদিকদের বলে, “মা-বাবার জন্য আমার কষ্ট হচ্ছে।”

“আমার হাঁপানি আছে,” বলে এ্ই কিশোরী, এ সময় তার হাতে একটি ইনহেলারও দেখা যায়।

গত শুক্রবার সন্ধ্যায় ঢাকার চামেলীবাগের একটি ফ্ল্যাট থেকে মাহফুজ ও স্বপ্নার ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। দুই সন্তান ঐশী ও ঐহী এবং গৃহকর্মী সুমিকে নিয়ে ওই ফ্ল্যাটে থাকতেন তারা।

অক্সফোর্ড ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের ও লেভেলের ছাত্রী ঐশী বৃহস্পতিবার সকালে তার সাত বছর বয়সী ছোট ভাই ঐহী ও গৃহকর্মী সুমিকে নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায় বলে ওই বাড়ির তত্ত্বাবধায়ক জানান। দুই দিন নিখোঁজ থাকার পর শনিবার তিনি নিজেই পুলিশের কাছে ধরা দেন।

এরপর তাকে নিয়ে অভিযান চালিয়ে সুমি, রনিসহ মোট পাঁচজনকে আটক করে পুলিশ।

তিনজনকে আদালতে নেয়ার আগে মিন্টো রোডে গোয়েন্দা পুলিশ কার্যালয়ে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম জানান, তারা ঐশীর আরো দুই বন্ধুকে খুঁজছেন।

তাদের পাওয়া গেলে এ হত্যা রহস্যের মীমাংসা করা অনেকটাই সহজ হয়ে যাবে বলে পুলিশ মনে করছে।

ইতোমধ্যে তদন্ত অনেকদূর এগিয়েছে জানিয়ে মনিরুল বলেন, বাসা থেকে উদ্ধার করা ছুরি ও বটির মধ্যে ছুরিটিই হত্যাকাণ্ডে ব্যবহার করা হয়েছে। আর ঐশীর মায়ের কোমরে থাকা আলমারির চাবির গোছা কাটার জন্য রান্নাঘর থেকে বটিটি আনা হয়েছিল।”

“আসলে মেয়েটির অনেক বন্ধুবান্ধব ছিল। সে বখাটে হয়ে গিয়েছিল। এই বখাটেপনা থেকে ফিরিয়ে আনতে তাকে বাসা থেকে বের হতে দিত না তার মা-বাবা। এ কারণেই মায়ের প্রতি বেশি ক্ষোভ ছিলো ঐশীর।”

শনিবার লাশের ময়নাতদন্তের পর ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সোহেল মাহমুদ জানান, নিহত পুলিশ কর্মকর্তার দেহে ছুরিকাঘাতের দুটি এবং তার স্ত্রীর দেহে ১১টি চিহ্ন পাওয়া গেছে।

এই হত্যাকাণ্ডে একাধিক ব্যক্তি জড়িত ছিল বলেও মত প্রকাশ করেন তিনি।

হত্যার আগে পুলিশ কর্মকর্তা মাহফুজ ও তার স্ত্রীকে ঘুমের ওষুধ জাতীয় কিছু খাওয়ানো হয়েছিল বলেও ধারণা করছে পুলিশ।

এই হত্যাকাণ্ডে কতজন অংশ নিয়েছে জানতে চাইলে মনিরুল বলেন, “ঐশী সম্পৃক্ত ছিলো তা পাওয়া গিয়েছে। আর দুই বন্ধুর অন্তত একজনকে খুঁজে পেলে বিষয়টি আরো পরিষ্কার হবে।”