গোলাম আযমের বিচারকে ‘ত্রুটিপূর্ণ’ এবং বিচারকদের ‘পক্ষপাতদুষ্ট’ বলায় যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের (এইচআরডব্লিউ) বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ এনেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন।
Published : 20 Aug 2013, 03:28 PM
প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম ও তুরিন আফরোজসহ কয়েকজন মঙ্গলবার ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রারের কাছে এ অভিযোগ জমা দেন।
ট্রাইব্যুনাল আইনের ১১ এর ৪ ধারায় কেন এইচআরডব্লিউর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয়া হবে না তা জানতে আদেশ চাওয়া হয়েছে প্রসিকিউশনের আবেদনে।
এইচআরডব্লিউ পর্ষদ, সংস্থার এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক ব্র্যাড অ্যাডামস ও অ্যাসোসিয়েট স্টর্ম টিভকে এই আবেদনে বিবাদী করা হয়েছে।
জামায়াতে ইসলামীর মুক্তিযুদ্ধকালীন আমির গোলাম আযমের বিচার নিয়ে প্রশ্ন তুলে গত শুক্রবার হিউম্যান রাইটস ওয়াচের ওই বিবৃতিতে বলা হয়, গোলাম আযমের রায় দেয়ার আগে ট্রাইব্যুনাল নিজস্ব উদ্যোগে তদন্ত চালানোর যে কথা জানিয়েছে, বিদ্যমান আইন অনুযায়ী ট্রাইব্যুনাল তা পারে না। এ মামলায় সংশ্লিষ্ট বিচারক ও প্রসিকিউটররা পক্ষপাতদুষ্ট ছিলেন এবং সমঝোতার ভিত্তিতে রায় দিয়েছেন। আসামিপক্ষের সাক্ষীদের সুরক্ষা দিতে ট্রাইব্যুনাল ব্যর্থ হয়েছে এবং বিচারক প্যানেলেও পরিবর্তন আনা হয়েছে।
গোলাম আযমের রায়ে তাকে সন্দেহাতীতভাবে দোষী সাব্যস্ত করার ক্ষেত্রে তথ্যপ্রমাণের অভাব ছিল বলেও এইচআরডব্লিউ মনে করে।
অপরাধ বিবেচনায় সর্বোচ্চ শাস্তি পাওয়ার যোগ্য হলেও বয়স ও স্বাস্থ্যের অবস্থা বিবেচনায় গত ১৫ জুলাই গোলাম আযমকে ৯০ বছরের কারাদণ্ড দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
প্রসিকিউশনের আবেদনে বলা হয়, গত ১৫ জুলাই ট্রাইব্যুনাল গোলাম আযমের মামলার রায় দেয়ার পর বর্তমানে আপিল বিভাগে মামলাটি বিচারাধীন।
“এরই মধ্যে গত ১৬ অগাস্ট হিউম্যান রাইটস ওয়াচ নামের সংস্থাটি পক্ষপাতদুষ্ট ও অসৎ উদ্দেশ্যে ‘বাংলাদেশ: আযম কনভিকশন বেইজড অন ফ্লড প্রোসিডিংস’ শীর্ষক ওই বিবৃতি প্রকাশ করে।”
ট্রাইব্যুনালের বিচারকদের প্রশ্নবিদ্ধ করতেই ‘উদ্দেশ্যমূলকভাবে’ এ ধরনের ‘পক্ষপাতদুষ্ট, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন’ বিবৃতি দেয়া হয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয় প্রসিকিউশনের আবেদনে।
অভিযোগ জমা দেয়ার পর প্রসিকিউটর তুরিন আফরোজ সাংবাদিকদের বলেন, “হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ট্রাইব্যুনালের বিচারিক বিষয় এবং গোলাম আযমের রায়ের সমালোচনা করে পাচঁটি প্রশ্ন উত্থাপন করেছে। এর একটিতে গোলাম আযমের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য প্রমাণের অপর্যাপ্ততার কথা বলা হয়েছে। যেহেতু বিষয়টি এখন আপিল বিভাগের এখতিয়ারে, তাই এ বিষয়ে আমরা চ্যালেঞ্জ করিনি।”
“তাছাড়া আসামিপক্ষের সাক্ষীদের নিরাপত্তা এবং ট্রাইব্যুনালের বেঞ্চ পরিবর্তন নিয়ে এইচ আর ডব্লিউ যে প্রশ্ন তুলেছে সে বিষয়ে আমরা মনে করি না যে আমাদের কিছু বলার আছে। তাই আমরা বিষয়টি এড়িয়ে গেছি। তবে গোলাম আযমের মামলার বিচারিক বিষয়ে যে মন্তব্য করা হয়েছে তাতে ট্রাইব্যুনালের ভাবমূর্তিকেই শুধু আঘাত করা হয়নি, আঘাত করা হয়েছে পুরো বিচার প্রক্রিয়াকেই।”
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের বিরুদ্ধে পক্ষপাতের পাল্টা অভিযোগ এনে তুরিন আফরোজ বলেন, “মানবাধিকার রক্ষার নামে কর্মতৎপরতা চালিয়ে গেলেও তাদের কোনো পর্যবেক্ষক নেই। গোলাম আযমের মামলা তো নয়ই, ট্রাইব্যুনালে পরিচালিত কোনো মামলাই তারা পর্যবেক্ষণ করতে আসেনি।”
এইচআরডব্লিউর অর্থের উৎস নিয়েও প্রশ্ন তোলেন এই প্রসিকিউটর।
তিনি বলেন, “এ সংস্থার পক্ষপাতদুষ্ট ভুরি ভুরি প্রতিবেদনের প্রমাণ আমরা পেয়েছি। তাছাড়া তাদের প্রতিটি প্রতিবেদনই দাতাভিত্তিক। এ ক্ষেত্রে তারা দাতাদের নাম পরিচয় গোপন রাখে। এ সংক্রান্ত প্রচুর তথ্য-উপাত্ত আমাদের কাছে আছে, যা আমরা শুনানিতে উপস্থাপন করব।