বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ট দ্বিপক্ষীয় প্রতিরক্ষা সম্পর্ক থাকার কথাও বলেন পেন্টাপন মুখপাত্র।
Published : 26 Jun 2024, 11:57 AM
সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার মাধ্যমে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ও আইনের শাসনকে শক্তিশালী করতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতি পুনরায় নিশ্চত হয়েছে বলে মনে করেন মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগন।
বাংলাদেশে নেওয়া দুর্নীতিবিরোধী পদক্ষেপের প্রতি সমর্থনের কথাও জানিয়েছে দপ্তরটি।
মঙ্গলবার নিয়মিত ব্রিফিংয়ে পেন্টাগনের মুখপাত্র মেজর জেনারেল প্যাট রাইডার এসব কথা বলেছেন।
দুর্নীতিতে জড়িত থাকার অভিযোগে অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল আজিজ আহমেদের ওপর গত ২০ মে নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথা জানায় যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর।
তাদের ওয়েবসাইটে প্রকশিত এক বিবৃতিতে বলা হয়, এই নিষেধাজ্ঞার ফলে আজিজ আহমেদ এবং তার পরিবারের সদস্যরা সাধারণভাবে ‘যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের অযোগ্য’ বিবেচিত হবেন।
মুশফিকুল ফজল নামের একজন পেন্টাগন মুখপাত্রের কাছে প্রশ্ন রাখেন, উল্লেখযোগ্য দুর্নীতিতে জড়িত থাকার অভিযোগে বাংলাদেশের সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর পেন্টাগন কীভাবে বাংলাদেশের সঙ্গে সামরিক এবং নিরাপত্তা বিষয়ক অংশীদারত্ব অব্যাহত রখেছে?
বাংলাদেশ সম্পর্কে প্রশ্নকর্তা আরও বলেন, মানবাধিকার এবং গণতান্ত্রিক অধিকার চরমভাবে লঙ্ঘনের মধ্যে দিয়ে দেশটি ভুল পথে যাচ্ছে। পুলিশ র্যাবের শীর্ষ কর্মকর্তাদের ওপর যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে এবং বর্তমান সরকার যেকোনোভাবে ক্ষমতা ধরে রাখতে নিরাপত্তা বাহিনীকে ব্যবহার করছে।
জবাবে পেন্টাগন মুখপাত্র মেজর জেনারেল প্যাট রাইডার প্রশ্নকর্তাকে বলেন, “আপনি যা জানেন এবং যা বললেন- ব্যাপক দুর্নীতির কারণে স্টেট ডিপার্টমেন্ট জেনারেল (আজিজ) আহমেদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। গত মে মাসে এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়।
“বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ও আইনের শাসনকে শক্তিশালী করতে যুক্তরাষ্ট্রের যে প্রতিশ্রুতি, তা এই নিষেধাজ্ঞা আরোপের মাধ্যমে পুনর্ব্যক্ত করা হয়েছে, এবং সেখানে (বাংলাদেশ) দুর্নীতিবিরোধী যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তার প্রতি এই দপ্তরের (পেন্টাগন) সমর্থন রয়েছে।”
পেন্টাগন মুখপাত্র আরও বলেন, “আমি এটা বলে শেষ করতে চাই, বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ট দ্বিপক্ষীয় প্রতিরক্ষা সম্পর্ক রয়েছে। অবাধ এবং মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল, সামুদ্রিক এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তার মতো বিষয়ে দুই দেশের অভিন্ন স্বার্থ ও মূল্যবোধের ভিত্তিতে অংশীদারত্ব রয়েছে।”
২০১৮ সালের জুন থেকে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত তিন বছর বাংলাদেশের চিফ অব আর্মি স্টাফ ছিলেন জেনারেল আজিজ আহমেদ। তার আগে ২০১২ সাল থেকে চার বছর বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবির নেতৃত্ব দেন।
জেনারেল আজিজের ভিসা বিধিনিষেধ ঘোষণা করে এক বিবৃতিতে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলারের বলেছিলেন, ‘উল্লেখযোগ্য দুর্নীতিতে জড়িত থাকার কারণে’ যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব স্টেট, ফরেন অপারেশন অ্যান্ড রিলেটেড প্রোগ্রামস অ্যাপ্রোপ্রিয়েশনস অ্যাক্টের ৭০৩১ (সি) ধারার আওতায় বাংলাদেশের সাবেক জেনারেল আজিজ আহমেদের ওপর এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।
“তার কর্মকাণ্ড বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান এবং সরকারি প্রতিষ্ঠান ও প্রক্রিয়ার ওপ জনগণের বিশ্বাসকে ক্ষুণ্ন করতে ভূমিকা রেখেছে।”
কী ধরনের অভিযোগে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে, সে তথ্য জানিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “আজিজ আহমেদ নিজের ভাইকে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য জবাবদিহি এড়াতে সহযোগিতা করতে গিয়ে নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করেন এবং এর মধ্য দিয়ে উল্লেখযোগ্য দুর্নীতিতে সম্পৃক্ত হন।
“তাছাড়া অন্যায়ভাবে সেনাবাহিনীর কাজ পাওয়া নিশ্চিত করার জন্য তিনি তার ভাইয়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেছেন এবং ব্যক্তিগত স্বার্থের জন্য সরকারি নিয়োগের বিনিময়ে ঘুষ নিয়েছেন।”
আজিজ আহমেদ তার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের তোলা দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ ‘অসত্য’ দাবি করে বলেছেন, অভিযোগ প্রমাণ পারলে ‘যে কোনো পরিণতি’ তিনি মেনে নেবেন।
আর আজিজ আহমেদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে, তা ‘ব্যক্তিগত দায়ে’ বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।
আজিজ আহমেদের ভাইদের 'এনআইডি জালিয়াতি' তদন্তে কমিটি
আজিজ আহমেদের 'দুর্নীতির' অনুসন্ধান চেয়ে দুদকে আইনজীবী