সাংবাদিক পেটানোর চার দিনের মাথায় আদালতের আদেশে সংসদ সদস্য গোলাম মাওলা রনিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
Published : 24 Jul 2013, 03:44 PM
ঢাকা মহানগর পুলিশের উপ কমিশনার মাসুদুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল বুধবার বিকালে রাজধানীর বাড্ডা এলাকা থেকে পটুয়াখালীর এই সাংসদকে গ্রেপ্তার করে।
এর ঘণ্টা দুই আগে ঢাকার মহানগর হাকিম শাহরিয়ার মাহমুদ আদনান রনিকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেন।
অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের জন্য তথ্য সংগ্রহের জন্য শনিবার পল্টনে রনির কার্যালয়ে গিয়ে মারধরের শিকার হন ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের সাংবাদিক ইমতিয়াজ মমিন সনি ও ক্যামেরাম্যান মহসিন মুকুল। ভিডিওচিত্রে দেখা যায়, সংসদ সদস্য রনি নিজেই প্রতিবেদক ও ক্যামেরাপার্সনের ওপর চড়াও হয়ে লাথি মারছেন।
ঘটনার পর ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশন কর্তৃপক্ষ রনিকে আসামি করে একটি মামলা করে। এরপর রনি পাল্টা মামলা করেন, যাতে দুই সংবাদিকসহ ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের অন্যতম মালিক ব্যবসায়ী সালমান এফ রহমানকেও আসামি করা হয়।
ইনডিপেনডেন্টের করা মামলায় রনি রোববার বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন নেন।
এরপর মামলার বাদি ইন্ডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের সহকারী ব্যবস্থাপক ইউনুস আলী টেলিফোনে হুমকি দেয়ার অভিযোগ এনে রনির বিরুদ্ধে থানায় একটি জিডি করেন এবং জামিন বাতিল চেয়ে মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে আবেদন করেন।
বুধবার দুপুরে রনির অনুপস্থিতিতেই হাকিম আদালতে জামিন বাতিলের আবেদনের শুনানি হয়।
শুনানিতে রনির আইনজীবী কবীর হোসাইন বলেন, তাদের শুনানির জন্য যথেষ্ট সময় দেয়া হয়নি। এ কারণে আরো সময়ের আবেদন করেন। মহানগর হাকিম শাহরিয়ার মাহমুদ আদনান তা নাকচ করে এদিনই শুনানি করেন।
আসামির আইনজীবী বলেন, টেলিফোনে হুমকি দেয়ার যে অভিযোগ রনির বিরুদ্ধে আনা হয়েছে, তার সঙ্গে বিটিআরসির প্রতিবেদন দেয়া হয়নি। ফলে হুমকি যে রনিই দিয়েছেন, তা প্রমাণিত হয় না।
এছাড়া জিডি ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা একই ব্যক্তি হওয়ায় তদন্ত নিরপেক্ষতা হারিয়েছে বলেও দাবি করেন কবীর হোসাইন।
অন্যদিকে বাদিপক্ষে আদালতের প্রসিকিউশন বিভাগের সহকারী কমিশনার মিরাশ উদ্দিন বলেন, যে যুক্তিতে আসামি গোলাম মাওলা রনির জামিন হয়েছে, তা ধোপে টেকে না। তিনি হত্যার উদ্দেশ্য নিয়েই সাংবাদিককে লাথি মেরেছেন এবং যন্ত্রপাতিও ছিনিয়ে নিয়েছেন। আইনপ্রণেতা নিজেই আইন ভেঙেছেন ।
“বাদি ইউনুস আলী গত মঙ্গলবার কর্মস্থলে যাওয়ার সময় রনি তার সঙ্গীদের নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় তাকে প্রাণনাশের হুমকি দেন। আসামি জামিনে থাকলে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটবে। তদন্তে ব্যাঘাত হবে।”
প্রায় আড়াই ঘণ্টা শুনানির পর আদালত সাংসদ রনির জামিন বাতিল করে তাকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেয়।
হাকিম আদালতে যখন এই শুনানি চলছে, তখন রনিকে দেখা যায় হাই কোর্ট এলাকায় কয়েকজন আইনজীবীর সঙ্গে। পরে তিনি সেখান থেকে উধাও হয়ে যান।
ওই পত্রিকা অফিস থেকে বের হওয়ার পর পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন এই সাংসদ।
উপ কমিশনার মাসুদুর রহমান বলেন, “সাংবাদিক মারধরের মামলায় গোলাম মাওলা রনিকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশের দপ্তরে রাখা হয়েছে। তাকে বৃহস্পতিবার আদালতে পাঠানো হবে।”
২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের টিকিটে পটুয়াখালী-৩ (গলাচিপা-দশমিনা) আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন গোলাম মাওলা রনি।
তবে অল্প দিনের ভেতরেই তার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, দুর্নীতিসহ বিভিন্ন অভিযোগ ওঠার খবর আসে গণমাধ্যমে। আয়কর বিবরণীতে সম্পদের তথ্যে গড়মিল পেয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনও তার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে।
এর আগেও সাংবাদিকদের নিগৃহীত করার অভিযোগ উঠেছে পটুয়াখালীর এই সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে।
মঙ্গলবার রনি পদত্যাগের সিদ্ধান্তের কথা সাংবাদিকদের বললেও পরে স্পিকারের সঙ্গে দেখা করে বলেন, দল চাইলে তবেই তিনি পদত্যাগ করবেন।