পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর জাজিরা প্রান্তে লাখো মানুষের সমাবেশে জান্নাতুল নাঈম পিয়াও ছিল। মাদারীপুরের শিবচর থেকে তৃতীয় শ্রেণির এই শিক্ষার্থী এসেছিল বাবার হাত ধরে। তার ইচ্ছা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এক নজর দেখা।
Published : 25 Jun 2022, 04:20 PM
কেমন লাগছে- জানতে চাইলে পিয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলে, “খুবই ভালো লাগছে। এত মানুষ এখানে। ঈদের মতো খুশি লাগছে আমার।”
সঙ্গে থাকা পিয়ার বাবা ফজলু কবীর বলেন, “আমাদের মাদারীপুরের বাসিন্দাদের জন্য আজকে সত্যিই ঈদ। এই সেতু আমাদের জন্য স্বপ্ন ছিল। আজকে সেটা বাস্তব। মেয়েকে এই ইতিহাসের সাক্ষী করার জন্যই এত ভিড় ঠেলে আজকে এখানে এসেছি।”
পদ্মায় ৬ কিলোমিটার দীর্ঘ সেতুর মাধ্যমে দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানীর সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত হল। এতে সরাসরি উপকৃত হবে বরিশাল-খুলনা বিভাগের ২১ জেলার প্রায় ৩ কোটি মানুষ। সেই সঙ্গে গোটা দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে এই সেতু রাখবে বড় ভূমিকা।
বহু প্রতীক্ষিত এই সেতু উদ্বোধনের দিন শরীয়তপুরে জাজিরা প্রান্তে জনসভা ডাকে আওয়ামী লীগ। মাওয়া প্রান্তে বর্ণিল আয়োজনে উদ্বোধনের পর গাড়িতে পদ্মা সেতু পাড়ি দিয়ে জাজিরা প্রান্তে এসে জনসভায় যোগ দেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী।
দুপুরের এই জনসভায় যোগ দিতে দক্ষিণাঞ্চলের নানা প্রান্ত থেকে সকাল থেকেই মানুষ জড়ো হতে থাকে জাজিরায়।
এমনই একজন গোবিন্দ চন্দ্র ঘোষ, লঞ্চে তিন ঘণ্টার পথ পাড়ি দিয়ে শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার ঘড়িসার থেকে এসেছিলেন আওয়ামী লীগের স্থানীয় এই নেতা।
উচ্ছ্বসিত গোবিন্দ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পদ্মা সেতুর উদ্বোধন হচ্ছে, এর চেয়ে খুশির দিন আমাদের কাছে আর হতে পারে না।”
দেশের সবথেকে বড় প্রকল্প পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের দিনক্ষণ ঠিক হলে তর সইছিল না গোবিন্দ চন্দ্রের। উদ্বোধনের উৎসবে যোগ দিতে তার এলাকার আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ও স্থানীয়রা আগে থেকেই প্রস্তুতি রেখেছিলেন।
তার ভাষ্য, “আমরা বেশ কয়েকদিন ধরে এই অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। একটা বড় লঞ্চের ব্যবস্থা হয়েছে আমাদের জন্য।”
অনুষ্ঠান উপলক্ষে ভিড় হতে পারে, সেই শঙ্কায় আগেভাগেই পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের অনুষ্ঠানে উদ্দেশে রওনা হন বলে জানান তিনি।
তার মতো দক্ষিণাঞ্চলের লাখো মানুষের ঢল ছোটে জনসভায়। দূর থেকে যারা এসেছেন তাদের অনেকেই শুক্রবার রাতেই রওনা হন। কেউ কেউ কয়েক কিলোমিটার পায়ে হেঁটে আসেন।
আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে স্লোগান দিতে দিতে জনসভার দিকে যাচ্ছিলেন বলে সড়কে ব্যাপক যানজট তৈরি হয়।
লঞ্চগুলো ভিড়েছিল শিবচরের কাঁঠালবাড়ি ঘাটে। আর সড়ক পথে যারা যোগ দেন, তাদের কয়েক কিলোমিটার হেঁটে আসতে হয়েছে। একদিকে নওডোবা, অন্যদিকে পাঁচচর আর ফরিদপুরের ভাঙ্গামুখী সড়ক সবদিক ছিল লোকে লোকারণ্য।
কেবল ডাঙায় নয়, নদীর ওপরে বিভিন্ন লঞ্চ থেকেও উৎসবে যোগ দেন অনেকে। প্রমত্তা পদ্মার বুকে লাল-সবুজের আবহ তৈরি করে এসব ছোট-বড় লঞ্চ।
পিরোজপুর থেকে শুক্রবার রাতে লঞ্চে রওনা দিয়ে সকালে জনসমাবেশ এলাকায় পৌঁছান সাইদ শিকদার।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আজকে পুরো দক্ষিণ অঞ্চলের মানুষ এখানে এসেছে, তাদের স্বপ্নকে সামনাসামনি বাস্তবায়ন হতে দেখার জন্য। প্রধানমন্ত্রীকে অনেক ধন্যবাদ। তিনি পেরেছেন।”
পদ্মা মাওয়া প্রান্তের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান বড় প্রজেক্টরে দেখানো হয় জাজিরা প্রান্তে। বড় স্ক্রিনে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পরপরই জয় বাংলা স্লোগানে মুখরিত হয় পুরো এলাকা।
উদ্বোধনের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন অতিথিদের নিয়ে সেতু পার হন, তখন জাতীয় পতাকা, বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার ছবি নিয়ে জনসভাস্থলের উপর দিয়ে উড়ে যায় কয়েকটি হেলিকপ্টার। তার একটি নানা রঙের কাগজ ছিটিয়ে যায় লাখো মানুষের মাথার উপর দিয়ে।
অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ভোলা থেকে শুক্রবার সন্ধ্যা সাতটায় লঞ্চে উঠে সকাল ১০ টায় জনসমাবেশে পৌঁছান জুয়েল গোলদার।
তিনি বলেন, “এই পদ্মা সেতুর মাধ্যমে দক্ষিণ অঞ্চলের ২১টি জেলার মানুষ উপকৃত হতে চলেছে। ঢাকার সাথে আমাদের যোগাযোগ আরও উন্নত হল।
“বাচ্চাদের লেখাপড়া, চিকিৎসা সবদিক দিয়ে উপকার হল আমাদের। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অনেক ধন্যবাদ, কৃতজ্ঞতা।”