ঈদযাত্রায় গাড়ি পাওয়া নিয়ে ভোগান্তির চিত্র এবার বুঝি বদলাল; লম্বা ছুটিতে বেশির ভাগ মানুষ আগেভাগে ঢাকা ছাড়ায় এখন গাবতলী টার্মিনালে যাত্রীর জন্য অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে বাসকর্মীদের।
Published : 29 Apr 2022, 04:47 PM
শুক্রবার বেলা ১২টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত গাবতলী টার্মিনাল এলাকায় ভিড়ভাট্টা তেমন দেখা গেল না। টার্মিনালের সামনে সারি বেঁধে রাখা সেলফী পরিবহনের অনেকগুলো বাস। দুজন কর্মী ‘ঘাট দুইশ’ বলে চিৎকার করে যাত্রী জড়ো করছেন।
একটু সামনেই পদ্মা দ্রুতগামী পরিবহনের বাসটি ছেড়ে ‘যাব যাব’ করছে, তখনও চালকের সহকারী যাত্রী টানার চেষ্টা করছেন।
এগিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করতেই সেলফী পরিবহনের কর্মী বিপ্লব দাস বলেন, “ঈদের টাইমে এবার যাত্রী ডাইকা আনা লাগতাছে। অন্যবার গাড়ি টার্মিনালে লাগার লগে লগে ভইরা যায়। এইবার লোকজন যাইতাছে ধীরে সুস্থে।”
একটি ব্যাগের দুই পাশে ধরে হাঁটছিলেন মিষ্টি আক্তার ও তার স্বামী সাইয়ীদ ইকবাল। এই দম্পতি যাবেন পাবনা। জানালেন, সরাসরি বাসের টিকেট কাটেননি। পাটুরিয়া ঘাট পর্যন্ত লোকাল বাসে গিয়ে লঞ্চে নদী পার হয়ে কাজীরহাট হয়ে পাবনা যাবেন।
কথায় কথায় জানালেন, ভোর থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত আমিনবাজার সেতুর গোড়া থেকে মাজার রোড পর্যন্ত যানজট ছিল। যানবাহনগুলো থেমে থেমে এগিয়েছে। কিন্তু সকাল ১০টার পর একেবারেই ফাঁকা। উত্তরবঙ্গের বাসগুলো রাতেই ছেড়ে গেছে বেশিরভাগ। ছোট গাড়ি আর মোটরসাইকেল নিয়ে মানুষ খুব ভোরে সেহরির পরপরই বেরিয়ে পড়েছেন।
এই পুলিশ সদস্য বলেন, ‘হুন্ডার যে ভিড় আছিল ভোর বেলায়, মনে কয়- সব মানুষ হুন্ডাত কইরাই বাড়ি যাইতাছে।’
মোটরসাইকেল নিয়ে সকালে নওগাঁ গেছেন বেসরকারি চাকরিজীবী হাবিব-উল-আহসান। তিনি জানান, ভোরবেলায় বেরিয়ে তেমন যানজট পাননি। সাভার, নবীনগর ও বাইপাইলে অনেক পোশাককর্মী দাঁড়িয়েছিলেন বাসের জন্য। কিছু বাসও সড়কে দাঁড়িয়ে যাত্রী তুলছিল, সে কারণে একটু যানজট ছিল। চন্দ্রা মোড়ও ফাঁকা ছিল। এরপর টাঙ্গাইলের রাস্তায় বাইক দাবড়ে ৯টার মধ্যেই এলেঙ্গায় পৌঁছে যান।
“কিন্তু এরপরেই শুরু হয় ভোগান্তি। অন্তত কয়েকশ বাইক সামনে তখন। প্রায় দুই ঘণ্টা লেগে যায় শুধু টোল দিয়ে সেতু পার হতে।”
হানিফ পরিবহনের কাউন্টার ব্যবস্থাপক মোশাররফ হোসেন জানান, টাঙ্গাইলের পর বিভিন্ন জায়গায় সকালের দিকে যানজট ছিল। তবে পরিস্থিতি এখনো নিয়ন্ত্রণের মধ্যে। রাতের বাসগুলো যথাসময়ে ছেড়ে যাবে বলে তারা আশা করছেন।
“মাঝে মাঝে আধাঘণ্টা... দেরি হচ্ছে, তবে আমরা সঠিক সময়ে গাড়ি ছাড়তে পারছি।”
ঈদের তিন দিনের ছুটির আগে এবার মে দিবস আর শুক্র-শনি মিলিয়ে মোট ছয় দিনের ছুটি পেয়ে গেছে মানুষ। তাছাড়া ভোগান্তি এড়াতে অনেকে পরিবারের সদস্যদের আগেই বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছেন। সে কারণে ছুটি শুরুর পর উপচে পড়া ভিড় আর হচ্ছে না বলে মনে করেন ঢাকা-মাদারীপুর রুটের সার্বিক পরিবহনের কাউন্টারম্যান মো. শওকত।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “যে যার মত সুবিধা অনুযায়ী বাড়ি যাচ্ছে। আগে অগ্রিম টিকিট বিক্রি হত, এখন রেগুলার যাত্রীও তেমন নাই।”
সাকুরা পরিবহনের কাউন্টার মাস্টার মো মাইনুল জানান, “আমাদের বাসে কোনো শিডিউল সমস্যা হচ্ছে না। ফেরিঘাটে তেমন জ্যাম নেই। ঠিক সময়েই বাস আসছে।”
তবে শনিবার থেকে চাপ একটু বাড়তে পারে বলে জানান তিনি।