রাজধানীর মিরপুরে দন্ত চিকিৎসক আহমেদ মাহী বুলবুলকে হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে চারজনকে গ্রেপ্তার করার কথা জানিয়ে পুলিশ বলেছে, তারা পেশাদার ছিনতাইকারী।
Published : 30 Mar 2022, 04:13 PM
ওই চারজনকে গ্রেপ্তারের পর বুধবার ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার হাফিজ আকতার তাদের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন।
গ্রেপ্তার চারজন হলেন: রায়হান ওরফে সোহেল ওরফে আপন (২৭), রাসেল হোসেন হাওলাদার (২৫), আরিয়ান খান হৃদয় (২৩), সোলায়মান (২৩)।
তাদের কাছ থেকে মোবাইল ফোন ও চাকু উদ্ধারের কথা জানিয়ে পুলিশের সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বুধবার সকালে মিরপুর, পল্লবী এবং সাভার থানা এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
হাফিজ আক্তার বলেন, গ্রেপ্তার চারজন ‘পেশাদার ছিনতাইকারী’। তাদের দলে মোট পাঁচজন ছিল। ছিনতাই করতে গিয়েই তারা বুলবুলকে ছুরি মারে, এর সঙ্গে ওই চিকিৎসকের ‘ঠিকাদারী ব্যবসার বিরোধের কোনো বিষয় নেই’।
গত রোববার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে শেওড়াপাড়ায় মেট্রোরেলের ২৭৮ নম্বর পিলারের কাছে ছুরিকাহত হন বুলবুল। তাকে প্রথমে ওই এলাকার আল হেলাল হাসপাতালে নিয়ে যান পথচারীরা। কিন্তু সেখানে চিকিৎসা না পাওয়ায় নেওয়া হয় সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। পরে সেখানেই তার মৃত্যু হয়।
৩৮ বছর বয়সী বুলবুল দন্ত চিকিৎসক হিসেবে মগবাজারে ‘রংপুর ডেন্টাল’ নামের একটি চেম্বারে নিয়মিত রোগী দেখতেন। পাশাপাশি গত পাঁচ বছর ধরে ‘মেসার্স রংপুর ট্রেডার্স’ নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানও চালাতেন৷ বিএনপি ঘরানার চিকিৎসক বুলবুল ‘পথশিশু সেবা সংগঠন’সহ কয়েকটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনেও যুক্ত ছিলেন।
সেদিন ভোরে নোয়াখালী যাওয়ার জন্য বাসা থেকে বেরিয়ে বুলবুল ছিনতাইকারীর কবলে পড়েছিলেন বলে প্রাথমিক ধারণা কথা বলেছিল পুলিশ।
তবে বুলবুলের সঙ্গে থাকা ১২ হাজার টাকা এবং মোবাইল ফোন খোয়া না যাওয়ায় পুলিশের ওই ধারণা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন তার শ্বশুর ইয়াকুব আলী। বুলবুলের স্ত্রী শাম্মী আক্তার রোববারই অজ্ঞাতপরিচয় আসামিদের বিরুদ্দে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছিলেন।
গ্রেপ্তার চারজনকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তিনি বলেন, “শেওড়াপাড়ার ওই জায়গায় ছিনতাইকারী দলটি তার রিকশার গতিরোধ করে এবং টাকা ও মোবাইল ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। বুলবুল বাধা দিলে ছিনতাইকারীরা তাকে ছুরিকাঘাত করে এবং তার একটি মোবাইল ফোন নিয়ে পালিয়ে যায়।”
এক প্রশ্নের জবাবে এই গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানান, ছিনতাইকারীরা চিকিৎসক বুলবুলের কাছ থেকে মোবাইল ছাড়া আর কিছু নেওয়ার ‘সুযোগ পায়নি’। বুলবুলের অবস্থা দেখে তারা দ্রুত সেখান থেকে পালিয়ে যায়।
“আমরা ছিনতাইকারীদের কাছ থেকে যখন বুলবুলের মোবাইলটি উদ্ধার করেছি, তখনই নিশ্চিত হয়েছি এ ঘটনা ছিনতাইয়ের।”
গ্রেপ্তার প্রত্যেকের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা আছে জানিয়ে হাফিজ আক্তার বলেন, চারজনের মধ্যে রায়হান এবং রাসেল কিছুদিন আগে কারাগার থেকে জামিনে বেরিয়ে এসে আবার ছিনতাইয়ে জড়িয়েছেন।
ঘটনার পরপরই বুলবুলকে আল হেলাল হাসপাতালে নেওয়া হলেও সেখানে তার চিকিৎসা হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। এ প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে হাফিজ আক্তার বলেন, ছিনতাইকারীদের ছুরিকাঘাতে একটি গুরুত্বপূর্ণ রক্তনালী কেটে যাওয়ায় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে ওই চিকিৎসকের মৃত্যু হয়।
“চিকিৎসার ক্ষেত্রে ওই হাসপাতালের কোনো গাফলতি আছে কিনা তাও খতিয়ে দেখা হবে।”
ওই ছিনতাইকারী দলের বাকি এক সদস্যকেও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।