দেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান স্বাধীনতা পুরস্কারের জন্য আমির হামজার নাম ঘোষণার বিষয়টি ‘পুনর্বিবেচনা’ করা উচিত বলে মনে করেন এমিরেটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী।
Published : 18 Mar 2022, 03:50 PM
এবার ‘উপযুক্ত ব্যক্তিকে’ সাহিত্যে স্বাধীনতা পুরস্কার দেওয়া হয়নি মন্তব্য করে তিনি বলেছেন, এ নিয়ে যে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে. তা জাতির জন্য অসম্মানজনক।
শুক্রবার ঢাকার এফডিসিতে ‘ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি স্বাধীনতা দিবস বিতর্ক প্রতিযোগিতা-২০২২’ এর গ্র্যান্ড ফাইনালে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী এ মন্তব্য করেন বলে আয়োজক ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, “কীভাবে এমন একজন ব্যক্তি পুরস্কার পেলেন, যা দুঃখজনক। মো. আমির হামজা নামক ব্যক্তিকে ঘোষিত সাহিত্যে স্বাধীনতা পুরস্কারটি পুনর্বিবেচনা করা উচিত।”
গত ১৫ মার্চ সরকার এবারের স্বাধীনতা পুরস্কারের জন্য মনোনীত ১০ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নাম ঘোষণা করে। তাতে সাহিত্যে প্রয়াত আমির হামজার নাম আসে।
নাগরিক মহলে অচেনা আমির হামজার নাম ওই তালিকায় দেখে অনেকে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন, চলছে কথা, সমালোচনা ও বিতর্ক।
এ প্রেক্ষিতে ‘জাতীয় পুরস্কার সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি’র আহ্বায়ক, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, তারা অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখবেন এবং পর্যালোচনার পর সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার সুযোগ রয়েছে।
অনুষ্ঠানের সভাপতি ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ স্বাধীনতা পুরস্কার প্রদান কমিটির জুরি সদস্যদের পরিচয় জানতে চেয়ে নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।
“আমি জানি না এবারের স্বাধীনতা পদক প্রদান কমিটিতে কারা জুরি ছিলেন। এবারের স্বাধীনতা পদকের মতো রাষ্ট্রীয় মর্যাদার একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্মাননা একজন অচেনা ও অখ্যাত সাহিত্যিক কীভাবে পেলেন তা এখন সবার কাছে প্রশ্ন।”
তিনি বলেন, দেশের অনেক 'স্বনামধন্য' ও 'বিশিষ্ট' লেখকের কাছে আমির হামজার নাম অপরিচিত এবং তার লেখা সম্পর্কেও সাহিত্যিকরা পরিচিত নন।
“২০২০ সালেও রইজ উদ্দিন নামক একজনকে সাহিত্যে স্বাধীনতার পুরস্কারের জন্য নাম ঘোষণা করা হলেও পরবর্তীতে নানা সমালোচনায় রইজ উদ্দিনকে এই পুরস্কার দেওয়া হয়নি। রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ পুরস্কার প্রদানে এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা পরিহারের জন্য এর নির্বাচন প্রক্রিয়া বদলানো উচিত।”
বক্তব্যের পর্বে আসে অন্য প্রসঙ্গও। অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী রাজাকারের তালিকা আগে করার তাগিদ দিয়ে বলেন, “মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হল রাজাকারদের প্রকৃত তালিকা করা। রাজাকার ছাড়া বাকি সবাই কোনো না কোনোভাবে মুক্তিযুদ্ধ করেছে। এটা ছিল জনযুদ্ধ।”
দেশে উন্নয়ন হলেও জনগণের জন্য সমসুযোগ ও সুশাসন বাস্তবায়িত হয়নি অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, “কেবল ভোটেই গণতন্ত্র নয়, সমসুযোগ ও সামাজিক নিরাপত্তাই হল প্রকৃত গণতন্ত্র।”
অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, “দেশে উপযুক্ত মূল্যায়ন না হওয়ায় আমাদের মেধাবী সন্তানেরা বিদেশে গিয়ে কৃতিত্বপূর্ণ অবদান রাখছে, দেশ তাদের সেবা থেকে হচ্ছে বঞ্চিত।”
অন্যদের মধ্যে ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির প্রো-ভাইস চ্যান্সলর অধ্যাপক গণেশ চন্দ্র সাহা অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।
গ্র্যান্ড ফাইনালে ঢাকা সিটি কলেজকে পরাজিত করে চ্যাম্পিয়ন হয় বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ পাবলিক কলেজের বিতার্কিকরা।
চ্যাম্পিয়ন দলের বিতার্কিদের হাতে পুরস্কার হিসাবে নগদ ৫০ হাজার টাকা এবং রানার আপ দল নগদ ৩০ হাজার টাকাসহ ট্রফি, ক্রেস্ট ও সনদপত্র তুলে দেওয়া হয়।
প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন অধ্যাপক আবু মোহাম্মদ রইস, সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম, ড. মোহাম্মদ শাহ আলম চৌধুরী ও সাংবাদিক পার্থ সঞ্জয়।
ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির পৃষ্ঠপোষকতায় প্রতিযোগিতাটি আয়োজন করে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি।