কোভিড মহামারীর মধ্যে দ্বিতীয় দফায় প্রায় ছয় সপ্তাহ বন্ধ থাকার পর প্রতিদিন ক্লাসের স্বাভাবিক ছন্দে ফিরল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
Published : 02 Mar 2022, 02:49 PM
নিয়মিত ক্লাসের মাধ্যমে তারা মহামারীর দুই বছরের শিখন ঘাটতি কাটিয়ে উঠতে পারবে বলে আশা করছেন শিক্ষক ও অভিভাবকরা।
সংক্রমণ বাড়তে থাকায় গত ২১ জানুয়ারি দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সরাসরি ক্লাস বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।
মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ২২ ফেব্রুয়ারি আবার সীমিত পরিসরে সরাসরি ক্লাস শুরু হলেও ক্ষুদেদের রাখা হয়েছিল অপেক্ষায়।
বুধবার প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ক্লাস শুরুর মধ্য দিয়ে সেই অপেক্ষা ঘুচল। এখন থেকে প্রাথমিক স্তরে প্রতিদিনই ক্লাস হবে বলে আগেই ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
সকাল থেকে রাজধানীর বিভিন্ন স্কুল ঘুরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষার্থীদের ক্লাসে আসতে দেখা গেছে। তবে প্রথম দিন অনেক স্কুলে উপস্থিতি ছিল কিছুটা কম।
ধীরে ধীরে উপস্থিতি বাড়ার আশা করছেন শিক্ষকরা। আবার অনেক স্কুলে শিক্ষার্থীদের বলা হয়েছে বৃহস্পতিবার থেকে সব ক্লাস শুরু হবে।
মিরপুরের কয়েকটি স্কুলে দেখা গেছে, সকালে ক্লাস শুরুর আগে মাঠে খেলায় মেতেছে শিশুরা। দীর্ঘ বিরতির পর বন্ধুদের কাছে পেয়ে তারা উল্লসিত।
স্যানিটাইজারে হাত জীবাণুমুক্ত করে শিক্ষার্থীদের স্কুলে ঢোকার ব্যবস্থা করেছে ঢাকা আইডিয়াল প্রিপারেটরি স্কুল।
এ স্কুলের তৃতীয় শ্রেণির সুরভীর বললো, “ক্লাস করতে না পেরে খারাপ লাগছিল। কবে ক্লাসে আসব সেজন্য অপেক্ষা করছিলাম।”
তার মা সুরমা বেগম বলেন, “স্মার্টফোন নাই, মেয়ে ক্লাস করবে কীভাবে? গতবছর কিছুটা পিছিয়ে গেছে। অনলাইনে অন্যরা প্রতিদিন ক্লাস করেছে। সেখানে নিজে নিজে পড়ে সে কুলাতে পারে নাই। এখন তো প্রতিদিন পড়তে পারবে।”
“অনলাইনের পড়া তো আর বিকল্প হতে পারে না। আর ছোট বাচ্চারা তো আরও বুঝতে পারে না। এখন শিক্ষকরা নজর দিলে গ্যাপটা কমতে পারে।”
পল্লবীর ক্যাপিটাল মডেল স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী শহীদুল ইসলাম জানাল, বুধবার তাদের পরীক্ষাও নেওয়া হয়েছে। সবার সাথে দেখা হওয়ায় খুব খুশি সে।
পল্লবীর এমডিসি মডেল ইনস্টিটিউটের প্রধান শিক্ষক আনোয়ার হোসাইন বলেন, “বাচ্চাদের অনেক আগ্রহ স্কুলে আসতে। অনলাইনে তো সেভাবে তারা আনন্দ পায় না। প্রতিদিন স্কুলে আসায় পড়ালেখাটাও নিয়মিত হবে।”
মিরপুর-১০ নম্বরের আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নূরে আলম জানান, আগের রুটিনে ক্লাস হবে ভেবে কিছু শিক্ষার্থী আসেনি। তাই প্রথম দিন উপস্থিতি কিছুটা কম ছিল।
“আমরা তাদের জানিয়েছি, কয়েকদিনেই এটা ঠিক হয়ে যাবে। বাচ্চারা তো উদগ্রীব হয়ে আছে প্রতিদিন ক্লাসে আসতে।''
তবে প্রথম দিন সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পুরোদমে ক্লাস শুরু হয়নি। মিরপুরের শহীদবাগ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা এলেও ফিরে যেতে হয়েছে ক্লাস না করেই।
এ স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী কাওসার বলে, “স্যাররা আজকে আসতে বলছিল। আসার পর বলছে কাল থেকে ক্লাস হবে।”
তৃতীয় শ্রেণির আরেক শিক্ষার্থীর অভিভাবক ফারিহা তাসনিম বলেন, “শিক্ষকরা বললো আজ অফিসিয়াল কাজ আছে। কাল থেকে নাকি ক্লাস হবে।''
সপ্তাহে ছয় দিন ক্লাস হবে জানিয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে নির্দেশনা গেছে মঙ্গলবারই। ক্লাস নিতে হবে দুটি শিফটে। তবে প্রাক-প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের এখনই শ্রেণিকক্ষে ফেরা হচ্ছে না।
কেএনআর/এসএসএস/জেকে