ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ নিজেদের ‘দুর্নীতি, অপব্যয়-অপচয় ও অব্যবস্থাপনার’ দায়ভার বার বার পানির দাম বাড়িয়ে ভোক্তাদের ওপর চাপিয়ে দিচ্ছে বলে অভিযোগ ক্যাবের।
Published : 15 Feb 2022, 11:39 PM
মঙ্গলবার ভোক্তা অধিকার রক্ষায় সোচ্চার সংগঠন কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) ভর্তুকি পদ্ধতিতে চলা কোম্পানিটির মুনাফার তথ্য এবং একযুগ ধরে এর ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (এমডি) দায়িত্বে থাকা তাকসিম এ খানের মাসিক সোয়া ছয় লাখ টাকার বেতন নিয়েও প্রশ্ন তোলেন।
মঙ্গলবার পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাসের মূল্য বাড়ানোর প্রতিবাদে অনলাইনে আয়োজিত এক সভায় লিখিত বক্তব্যে এসব বিষয় তুলে ধরা হয়।
কোভিড মহামারীর সময়েও ২০২০ সালের এপ্রিলে এবং ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে দুই দফায় পানির দাম বাড়ায় ঢাকা ওয়াসা।
দুই দফায় আবাসিকে প্রতি এক হাজার লিটার পানির দাম বেড়েছিল ৩ টাকা ৬১ পয়সা (৩১ শতাংশ) এবং বাণিজ্যিকে ৪ টাকা ৯৬ পয়সা (১৩ শতাংশ)।
ওই দাম বাড়ানোর পর বর্তমানে আবাসিক গ্রাহকদের জন্য ঢাকা ওয়াসার এক হাজার লিটার পানির দাম ১৫ টাকা ১৮ পয়সা আর বাণিজ্য গ্রাহকদের জন্য এক হাজার লিটার ৪২ টাকা।
এখন আবার ঘাটতি পোষানোর কথা বলে ২০ শতাংশ দাম বাড়ানোর প্রস্তাব তুলেছে সংস্থাটি।
আলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ভোক্তাকণ্ঠের সম্পাদক কাজী আব্দুল হান্নান।
তিনি বলেন, ওয়াসার এমডি তাকসিম এ খান সংস্থাটির অমিতব্যয়িতা, অব্যবস্থানা ও দুর্নীতি-অপচয়ের সব দায়ভার ভোক্তাদের ওপর চাপিয়ে দিয়ে ভর্তুকি কমানোর পথ বেছে নিয়েছেন।
“ওয়াসা একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান হলেও সেবার চেয়ে বাণিজ্যের দিকেই এর নজর এখন বেশি। দেশের বিভাগীয় শহরগুলোতে আরও ছয়টি ওয়াসা রয়েছে। তাদের পানির দাম ওয়াসার পানির চেয়ে প্রায় তিন ভাগের এক ভাগ।“
২০০৯ সালে তিন বছরের জন্য ওয়াসার এমডি হিসাবে দায়িত্ব পাওয়ার পর তাকসিম এ খান গত এক দশকে ১৪ বার পানির দাম বাড়িয়েছেন; আর এই সময়ের মধ্যে নিজের বেতন ভাতা বাড়িয়েছেন ৪২১ শতাংশ বলে ক্যাবের বক্তব্যে উঠে আসে।
এ প্রসঙ্গ টেনে আব্দুল হান্নান বলেন, ভর্তুকি দিয়ে চলা সরকারি এই সংস্থার প্রধান নির্বাহী এখন মাসিক বেতন নেন সোয়া ছয় লাখ টাকা। এমডি হিসাবে তিন বছরের জন্য যখন তিনি নিয়োগ পান তখন তার মাসিক বেতন ছিল এক লাখ ২০ হাজার টাকা। অথচ প্রতিবার পানির দাম বাড়ানোর সময় বলা হয় ভর্তুকির কথা। বেতন বোনাস বাড়ানোর সময় এমডি হিসাব দেখান যে ঢাকা ওয়াসা লাভের দিকে যাচ্ছে। আবার পানির দাম বাড়ানোর সময় নিয়ে আসেন ভর্তুকি ও লোকসানের হিসাব।
এক বছর আগে ওয়াসার এমডির এক বক্তব্যের বরাত দিয়ে ক্যাব জানায়, এক সময় যেখানে ৭০০ কোটি টাকা রাজস্ব আয় হতো, এখন তা সাত হাজার কোটি টাকা হয়েছে। গত বছরও ৪০ কোটি টাকা মুনাফা দেখিয়ে ইনসেনটিভ বোনাস নিয়েছে।
“প্রশ্ন হচ্ছে যেই সংস্থা ভিক্ষা (ভর্তুকি) করে চলে সেই সংস্থার প্রধান নির্বাহীর বেতন কী সোয়া ছয় লাখ টাকা হওয়া উচিত? কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দুটি ঈদ বোনাস ছাড়াও চারটি ইনসেনটিভ বোনাস কি যুক্তিযুক্ত?
প্রতিবাদ সভায় সারাদেশ থেকে ক্যাব-এর জেলা কমিটির নেতারাও অংশ নেন। এ সময় তারা পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে বিভিন্ন প্রস্তাব তুলে ধরেন। রাজশাহীতেও পানির দাম তিনগুণ বৃদ্ধির প্রতিবাদে ক্ষোভ প্রকাশ করেন বক্তারা।
ঢাকা ওয়াসার কর্মকর্তাদের বোনাস পাওয়ার বিষয়ে ক্যাব সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, একটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান যদি ভোক্তাদের উপর বাড়তি মূল্যের বোঝা চাপিয়ে দিয়ে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করে লাভ দেখায়, সেই সব কর্মচারী বা কর্মকর্তারা বোনাস পাবার যোগ্য? নাকি তিরস্কার পাবার যোগ্য?
তিনি জনজীবনে স্বস্তি আনতে রাজনৈতিক নেতৃত্বের প্রতি আহ্বান জানান।
ক্যাবের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি শামসুল আলম বলেন, দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। আমরা মূল্যবৃদ্ধি সইতে পারছি না। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ভুর্তুকি সরকার আর দিতে পারছেন না। আমরা তার সঙ্গে সমস্বরে বলতে চাই, আমরা এই মূল্যবৃদ্ধি আর সইতে পারছি না।
ওয়াসার এমডি এবং কর্মকর্তাদের বেতন বাড়ানো ও বোনাস প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মূল্য বৃদ্ধি করা যদি তার (ঢাকা ওয়াসার এমডি) দক্ষতা হয় এবং সেই দক্ষতার পুরষ্কার স্বরূপ যদি বেতন হয়, তাহলে আমাদের এই জায়গায় আঘাত করতে হবে।
আরও পড়ুন