ডিআইজি মিজানুর রহমানের নির্দোষিতার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরতে গিয়ে তার আইনজীবী আদালতে বলেছেন, ‘চাপে পড়ে’ দুদক কর্মকর্তা খন্দকার এনামুল বাছিরকে ঘুষ দিয়েছিলেন তিনি।
Published : 03 Feb 2022, 05:01 PM
ঘুষ লেনদের এই মামলার বিচারের প্রায় শেষ পর্যায়ে বৃহ্স্পতিবার ঢাকার ৪ নম্বর বিশেষ জজ শেখ নাজমুল আলমের আদালতে যুক্তিতর্ক শুনানি করেন বরখাস্ত পুলিশ কর্মকর্তা মিজানের আইনজীবী এহসানুল হক সমাজী।
তিনি বলেন, “গণমাধ্যমে প্রচারিত প্রতিবেদন, কল রেকর্ড ও সাক্ষীদের সাক্ষ্য থেকে এটা প্রমাণিত যে, ডিআইজি মিজান বাধ্য হয়ে খন্দকার এনামুল বাছিরকে ৪০ লাখ টাকা ঘুষ দিয়েছিলেন।
“তাই চাপের মুখে বাধ্য হয়ে ঘুষ দেওয়াটা অপরাধের মধ্যে পড়ে না। তা ছাড়া এই ৪০ লাখ টাকার বৈধতা সম্পর্কেও কোনো প্রশ্ন উত্থাপিত হয়নি। তাই তিনি এই অভিযোগ থেকে খালাস পাওয়ার যোগ্য।”
আদালতের কাছে ন্যায়বিচার প্রার্থনা করে শুনানি শেষ করেন আইনজীবী সমাজী।
শুনানিকালে এই মামলার দুই আসামি মিজান এবং দুদকের বরখাস্ত পরিচালক এনামুল বাছিরকে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়।
বাছিরের আইনজীবী সৈয়দ রেজাউর রহমান যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের জন্য সময় চেয়ে আবেদন করেন। সে আবেদনে সাড়া দিয়ে আগামী ৬ ফেব্রুয়ারি বাছিরের পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের দিন ঠিক করে দেন বিচারক নাজমুল আলম।
এর আগে গত ২৪ জানুয়ারি দুদকের পক্ষে প্রসিকিউটর মোশাররফ হোসেন কাজল যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন। তিনি আইন অনুযায়ী আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি করেন।
গত ২৩ ডিসেম্বর মামলাটিতে সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়। মামলায় অভিযোগ পত্রে ১৭ সাক্ষীর মধ্যে ১২ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেছে আদালত।
এক নারীকে জোর করে বিয়ের পর নির্যাতন চালানোর অভিযোগ ওঠায় ২০১৯ সালে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনারের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় মিজানকে।
এর চার মাস পর তার সম্পদের অনুসন্ধানে নামে দুদক; এক হাত ঘুরে সেই অনুসন্ধানের দায়িত্ব পান কমিশনের তৎকালীন পরিচালক এনামুল বাছির।
সেই অনুসন্ধান চলার মধ্যেই ডিআইজি মিজান দাবি করেন, তার কাছ থেকে ৪০ লাখ টাকা ঘুষ নিয়েছেন দুদক কর্মকর্তা বাছির।
এর সপক্ষে তাদের কথপোকথনের কয়েকটি অডিও ক্লিপ একটি টেলিভিশনকে দেন তিনি। ওই অডিও প্রচার হওয়ার পর দেশজুড়ে শুরু হয় আলোচনা।
অভিযোগটি অস্বীকার করে বাছির দাবি তখন করেন, তার কণ্ঠ নকল করে ডিআইজি মিজান কিছু ‘বানোয়াট’ রেকর্ড একটি টেলিভিশনকে সরবরাহ করেছেন।
অন্যদিকে ডিআইজি মিজান বলেন, সব জেনেশুনেই তিনি কাজটি করেছেন ‘বাধ্য হয়ে’।
৪০ লাখ টাকার ঘুষ কেলেঙ্কারির অভিযোগে ২০১৯ সালের ১৬ জুলাই দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এ সংস্থার পরিচালক শেখ মো. ফানাফিল্লাহ বাদী হয়ে মামলা করেন। পরে তিনি অভিযোগপত্র দেন।
পরের বছর ১৮ মার্চ আসামিদের অব্যাহতির আবেদন নাকচ করে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ হয়।
ঘুষের অভিযোগ ওঠার পর তাদের দুজনকেই সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
২০২০ বছরের ২২ জুলাই এনামুল বাছিরকে গ্রেপ্তার করে দুদকের একটি দল। আরেক মামলায় গ্রেপ্তার ডিআইজি মিজানকেও পরে এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।