এক বছর আগে ডিআইজি মিজানুর রহমান ও এনামুল বাছিরের ঘুষ কেলেঙ্কারি নিয়ে অনুসন্ধান চালিয়ে যে কর্মকর্তা মামলা করেছিলেন, দুর্নীতি দমন কমিশনের সেই পরিচালক শেখ মো. ফানাফিল্যার বিরুদ্ধে একই ধরনের অভিযোগ উঠেছে।
Published : 18 Nov 2020, 09:44 PM
দুর্নীতি সংক্রান্ত এক অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদের দিন ‘অনৈতিক সুবিধা দিয়ে’ চাকরির শৃঙ্খলা পরিপন্থি কাজ করার অভিযোগে ফানাফিল্যার বিরুদ্ধে দুদক বিভাগীয় তদন্ত শুরু করেছে।
তবে ফানাফিল্যা দাবি করেছেন, ওই অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি জিজ্ঞাসাবাদের দিন ‘অসুস্থ’ ছিলেন বলে ‘মানবিক দিক বিবেচনা করে’ সহায়তা করেছিলেন তিনি।
দুদকের এক কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, ফানাফিল্যার বিরুদ্ধে ওই অভিযোগে কমিশনের মহাপরিচালক মো. জাকির হোসেনকে তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়েছে। আর তার তদারক কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে দুদক সচিব মুহাম্মদ দিলোয়ার বখতকে।
বেসরকারি বার্থ অপারেটর সাইফ পাওয়ারটেক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তরফদার মো. রুহুল আমিনকে সুবিধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ফানাফিল্যার বিরুদ্ধে।
রুহুল আমিনের বিরুদ্ধে দুদকে অভিযোগ আসে, তিনি সরকারি প্রতিষ্ঠানকে প্রভাবিত করে চট্টগ্রাম বন্দরে একচেটিয়া বাণিজ্য প্রতিষ্ঠা করে এবং রাজস্ব ফাঁকির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং বিদেশে অর্থ পাচার করছেন।
গত সেপ্টেম্বরের শুরুতে এই অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়ে দুদকের সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ জয়নাল আবেদীনকে অনুসন্ধান কর্মকর্তা নিয়োগ দেয় কমিশন। পরে গত ১৪ সেপ্টেম্বর রুহুল আমিনকে দুদক প্রধান কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করা হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুদকের এক কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ওই দিন নির্ধারিত সময়ের এক ঘণ্টা আগে সকাল সাড়ে ৯টায় তরফদার মো. রুহুল আমিন দুদকে হাজির হলে তাকে অভ্যর্থনা দিয়ে পরিচালক শেখ ফানাফিল্যা তার কক্ষে নিয়ে যান।”
দুদকের এক নথিতে বলা হয়েছে, “কমিশনে নির্ধারিত জিজ্ঞাসাবাদের কক্ষ থাকা সত্ত্বেও অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে তার (ফানাফিল্যা) অফিস কক্ষে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য অনুসন্ধান কর্মকর্তাকে অনুরোধ করেন, যদিও তিনি অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদের সাথে জড়িত নন।
“বিষয়টি অনুসন্ধান কর্মকর্তা তার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে জানালে নির্ধারিত জিজ্ঞাসাবাদ কক্ষে নিয়ে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়।”
তিনি বলেন, “এরপর রুহুল আমিনকে জিজ্ঞাসাবাদের সময় অনুসন্ধান কর্মকর্তাকে আগে অবহিত না করে ওই দিন দুপুরে জিজ্ঞাসাবাদ কক্ষে ফানাফিল্যা প্রবেশ করেন। অনুসন্ধান কর্মকর্তার জিজ্ঞাসাবাদ শেষ না হলেও অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে সাথে করে নিয়ে আবার নিজের অফিস কক্ষে চলে যান ফানাফিল্যা।”
অনুসন্ধান কর্মকর্তা মুহাম্মদ জয়নাল আবেদীন লিখিতভাবে কমিশনকে বিষয়টি জানালে কমিশন ফানাফিল্যাকে কারণ দর্শনার নোটিস দেয়।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে দুদক পরিচালক ফানাফিল্যা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা সামাজিক মানুষ। আমাদের সামাজিক কিছু বিষয় থাকে।
“সে থেকে ওই দিন একজন অসুস্থ মানুষকে (তরফদার মো. রুহুল আমিন) আমার কক্ষে এনেছিলাম। আমি যদি তাকে না আনতাম, তাহলে তিনি বক্তব্য না দিয়ে হয়তো চলে যেতেন। এটা কী আমার দোষ?”
অনুসন্ধান কাজে ‘সহায়তার অংশ’ হিসেবেই সেদিন অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে নিজের কক্ষে নিয়ে গিয়েছিলেন বলে দাবি করেন ফানাফিল্যা।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে সাইফ পাওয়ারটেক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তরফদার মো. রুহুল আমিনকে ফোন করলেও তার মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়।
গত বছরের ১৬ জুলাই ঘুষ লেনদেনের অভিযোগে সাময়িক বরখাস্ত পুলিশের ডিআইজি মিজানুর রহমান ও দুদকের পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছিরের বিরুদ্ধে মামলা করেন ফানাফিল্যা।
এর আগে একই বছরের ২৪ জুন ডিআইজি মিজানের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করে দুদক। তার আগে তদন্ত পর্যায়ে অভিযোগ থেকে রেহাই পেতে তৎকালীন অনুসন্ধান কর্মকর্তা এনামুল বাছিরকে ৪০ লাখ টাক ঘুষ দিয়েছেন বলে দাবি করেছিলেন ডিআইজি মিজান।
এসব অভিযোগ উঠার পর তখন দুজনই তাদের নিজেদের সংস্থা থেকে সাময়িক বরখাস্ত হন। আর ঘুষ লেনদেনের অভিযোগ খতিয়ে দেখতে দুদকের পরিচালক শেখ মো. ফানাফিল্ল্যার নেতৃত্বে তিন সদস্যের অনুসন্ধান টিম কাজ করেছে।
ঘুষ লেনদেনের মামলা দায়েরের পর গত বছরের ২২ জুলাই রাজধানীর দারুস সালাম এলাকা থেকে ফানাফিল্যার নেতৃত্বে এনামুল বাছিরকে গ্রেপ্তারও করা হয়। এরপর থেকে তিনি কারাগারে রয়েছেন। ঢাকার বিশেষ জজ আদালতে ঘুষ লেনদেনের মামলাটির বিচার চলছে।