দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) জাহালম কাণ্ড এবং পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছিরের ‘ঘুষ নেওয়ার’ ঘটনায় সমালোচনার মুখে থাকা কমিশনের অভ্যন্তরীণ দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে সক্রিয় হচ্ছে সংস্থাটির সংশ্লিষ্ট কমিটি।
Published : 24 Aug 2019, 10:07 PM
সম্প্রতি দুদকের ‘অভ্যন্তরীণ দুর্নীতি দমন কমিটির’ সভাপতি সংস্থাটির চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদের সভাপতিত্বে তিন সদস্যের এ কমিটির কয়েকটি সভা অনুষ্ঠিত হয়।
দুদকের সচিব মুহাম্মদ দিলোয়ার বখত এই কমিটির সদস্য সচিব এবং মহাপরিচালক (লিগ্যাল ও প্রসিকিউশন) মুফিজুল ইসলাম ভূইয়া হলেন সদস্য।
দিলোয়ার বখত বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, কমিশনের বিধিতেই অভ্যন্তরীণ দুর্নীতি দমন কমিটি গঠনের কথা আছে।
“তবে এই কমিটি এত দিন কেবল নামমাত্র ছিল, যে কারণে কমিটির তেমন কোনো কার্যক্রম ছিল না।”
দুদক সচিব বলেন, “আমরা আমাদের অভ্যন্তরীণ দুর্নীতির বিরুদ্ধে খুবই সোচ্চার। সম্প্রতি আমরা অভ্যন্তরীণ দুর্নীতি দমন কমিটির কয়েকটি সভা করেছি, কয়েক দিনের মধ্যে আরও একটি সভা করা হবে। আমরা প্রতিষ্ঠানের ভেতরের কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীর দুর্নীতি কোনোভাবেই বরদাস্ত করব না।”
তিনি বলেন, “কারো বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতি, চাকরির আচরণবিধি লঙ্ঘন, এমনকি দায়িত্বে অবহেলার প্রমাণ সাপেক্ষে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এতে কেউ ছাড় পাবে না।”
অভ্যন্তরীণ দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার অবস্থানের কথা জানিয়ে সম্প্রতি কয়েকটি সভায় বক্তব্য দিয়েছেন দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদও।
বৃহস্পতিবার দুদক প্রধান কার্যালয়ে এক সভায় কর্মকর্তাদের উদ্দেশে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, “অনুসন্ধান বা তদন্তে কোনো প্রকার অনিয়ম, স্বজনপ্রীতি, পক্ষপাতিত্ব, শৈথিল্য, যা কমিশনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করে, কর্মকর্তাদের এমন কোনো আচরণ কমিশন ন্যূনতম সহ্য করবে না।”
তিনি বলেন, “প্রতিটি কর্মকর্তা আমাদের ঠিক ততক্ষণই প্রিয় থাকবেন, যতক্ষণ পর্যন্ত আপনি আপনার দায়িত্ব সততা ও স্বচ্ছতার সাথে পালন করবেন। যারা এ দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হবেন, তারা কোনো প্রকার অনুকম্পা পাবেন না।"
কর্মকর্তাদের উদ্দেশে ইকবাল মাহমুদ বলেন, “আমি বার বার আপনাদেরকে সতর্ক করি, তারপরও যখন অভিযোগ আসে, তখন ব্যবস্থা নেওয়া ছাড়া কোনো বিকল্প পথ থাকে না।”
জাহালম কাণ্ড
জালিয়াতির মাধ্যমে সোনালী ব্যাংকের প্রায় ১৮ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ২০১২ সালে আবু সালেক নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে ৩৩টি মামলা করে দুদক। এরপর সালেককে তলব করে দুদক চিঠি দিলে সেই চিঠি পৌঁছায় জাহালমের টাঙ্গাইলের বাড়ির ঠিকানায়।
নরসিংদীর ঘোড়াশালের বাংলাদেশ জুট মিলের শ্রমিক জাহালম তখন দুদকে গিয়ে বলেছিলেন, তিনি আবু সালেক নন, সোনালী ব্যাংকে তার কোনো অ্যাকাউন্টও নেই। ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য আবু সালেকের যে ছবি ব্যবহার করা হয়েছে, সেটাও তার নয়।
কিন্তু দুদকে উপস্থিত বিভিন্ন ব্যাংকের কর্মকর্তারা সেদিন জাহালমকেই ‘আবু সালেক’ হিসেবে শনাক্ত করেন। পরে ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ঘোড়াশাল থেকে জাহালমকে গ্রেপ্তার করে দুদক।
পরে বিচারিক আদালতেও জাহালম দুদকের পরিচয় বিভ্রাটের বিষয়টি তুলে ধরে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন। কিন্তু কেউ তার কথা কানে তোলেনি।
তিন বছর ধরে জাহালমের কারাভোগের খবর গণমাধ্যমে এলে হাই কোর্ট ২৮ জানুয়ারি স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে একটি রুল জারি করে।
কারাগারে থাকা ‘ভুল’ আসামি জাহালমকে কেন অব্যাহতি দেওয়া হবে না, তাকে মুক্তি দিতে কেন ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হবে না এবং তাকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ দিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না- তা জানতে চাওয়া হয় ওই রুলে।
উচ্চ আদালতের হস্তক্ষেপে গত ৪ ফেব্রুয়ারি মুক্তি পান জাহালম। গত ১১ জুলাই আদালতে দাখিল করা আভ্যন্তরীণ তদন্ত প্রতিবেদনে দুদক জানায়, তদন্ত কর্মকর্তাদের ভুলের কারণে আসামি না হয়েও জাহালমকে কারাভোগ করতে হয়েছে।
এ ঘটনায় দুদকের ১১ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করা হয়েছে বলে গত বুধবার হাই কোর্টকে জানিয়েছে কমিশন।
৪০ লাখ টাকা ঘুষ লেনদেনের অভিযোগ
পুলিশের ডিআইজি মিজানুর রহমানের সম্পদ অনুসন্ধানে গিয়ে তার কাছ থেকে ৪০ লাখ টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ উঠে দুদকের পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছিরের বিরুদ্ধে।
ডিআইজি মিজান গত ৮ জুন দাবি করেন, দুদক কর্মকর্তা বাছির তার কাছ থেকে ৪০ লাখ টাকা ঘুষ নিয়েছেন।
এর পক্ষে তাদের কথোপকথনের কয়েকটি অডিও ক্লিপ একটি টেলিভিশনকে দেন তিনি। ওই অডিও প্রচার হওয়ার পর দেশজুড়ে শুরু হয় আলোচনা।
পরে এনামুল বাছিরকে সাময়িক বরখাস্ত করার পাশাপাশি ঘুষ লেনদেনের অভিযোগে গত ১৬ জুলাই ডিআইজি মিজান ও বাছিরকে আসামি করে কমিশনের পরিচালক শেখ মো. ফানাফিল্যা বাদী হয়ে মামলা করেন।
এরপর উচ্চ আদালতে জামিন চাইতে গেল ডিআইজি মিজানকে পুলিশের হাতে তুলে দেয় হাই কোর্ট।
অন্যদিকে ২২ জুলাই এনামুল বাছিরকে ঢাকার দারুস সালাম এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে দুদক।