কাজটি করেছি তাকে ফাঁসাতে, নিজেকে বাঁচাতে: ডিআইজি মিজান

দুদক কর্মকর্তা খন্দকার এনামুল বাছিরের ‘চাপের পর’ তাকে ‘ফাঁদে ফেলতে’ অপরাধ জেনেও ‍ঘুষ লেনদেনের কাজটি করেছেন বলে দাবি করেছেন পুলিশের উপ মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মিজানুর রহমান।

লিটন হায়দার অপরাধ বিষয়ক প্রধান প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 June 2019, 01:38 PM
Updated : 10 June 2019, 02:55 PM

যে ৪০ লাখ টাকা ঘুষ হিসেবে দেওয়ার দাবি তিনি করেছেন, তার হিসাবও দুদককে দেওয়ার জন্য তৈরি আছেন বলে জানান তিনি।

দুদক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ তোলার পর তা নিয়ে তোলপাড়ের মধ্যে সোমবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের জিজ্ঞাসায় নিজের অবস্থান প্রকাশ করেন ডিআইজি মিজান।

নানা ঘটনায় আলোচিত ও বিতর্কিত এই পুলিশ কর্মকর্তার ‘অবৈধ সম্পদ’র অনুসন্ধান চালাচ্ছিলেন দুদকের পরিচালক এনামুল বাছির।

ডিআইজি মিজান রোববার দাবি করেন, তার কাছ থেকে ৪০ লাখ টাকা ঘুষ নিয়েছেন দুদক কর্মকর্তা বাছির। এর সপক্ষে তাদের কথপোকথনের কয়েকটি অডিও ক্লিপও একটি টেলিভিশনকে দেন তিনি, যা প্রচারও হয়।

অভিযোগ ওঠার পর তদন্ত কমিটি গঠনের পাশাপাশি বাছিরকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে দুদক। তবে দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ  একই সঙ্গে বলেছেন, ঘুষ দেওয়াও ফৌজদারি অপরাধের মধ্যে পড়ে।

বেইলি রোডের বাড়িতে পুলিশের ডিআইজি মিজানুর রহমান

ডিআইজি মিজান দাবি করেছেন, ঘুষ দেওয়া যে অপরাধ তা জেনেই তিনি কাজটি করেছেন ‘বাধ্য হয়ে’।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি তাকে টাকা দিতে চাইনি। কিন্তু তিনি যেভাবে প্রেসার দিচ্ছিলেন, বাধ্য হয়ে তাকে ধরতে ফাঁদে ফেলতে এই কাজটি করতে হয়েছে।

“এটা আমি বুঝেশুনে করেছি। তিনি যে একজন দুর্নীতিগ্রস্ত তা প্রমাণ করতে, তাকে ফাঁসানোর জন্য করেছি এবং নিজের সেইফটির জন্য করেছি।”

তার অবৈধ সম্পদ অর্জনের কোনো প্রমাণ না পাওয়ার পরও দুদক কর্মকর্তা বাছির চাপ দিচ্ছিলেন বলে দাবি করেন এই পুলিশ কর্মকর্তা।

“ফাইলে কিছু নাই বলার পরও সে বারবার প্রেসার দিচ্ছিল টাকা দেওয়ার জন্য। তার সাথে তার অফিসে বেশ কয়েকবার দেখা করেছি। তার চাহিদা অনুযায়ী চাকরি জীবনের সব কাগজ দেওয়ার পরেও তিনি টাকার জন্য প্রেসার দিচ্ছিলেন।”

এক নারীকে জোর করে বিয়ের পর নির্যাতন চালানোর অভিযোগ ওঠায় ব্যাপক সমালোচনার মুখে গত বছরের জানুয়ারিতে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনারের পদ থেকে মিজানকে সরিয়ে নেওয়ার চার মাস পর তার সম্পদের অনুসন্ধানে নামে দুদক।

প্রথমে এই অনুসন্ধানের দায়িত্বে ছিলেন দুদকের উপ-পরিচালক ফরিদ আহমেদ পাটোয়ারী; পরে এই দায়িত্ব পান পরিচালক এনামুল বাছির। এই অনুসন্ধান পর্বে ডিআইজি মিজানকে দুদকে ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়েছিল।

আগের অনুসন্ধান কর্মকর্তাকে নিয়েও প্রশ্ন তুলে ডিআইজি মিজান জানান, ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তিনি অভিযোগ দেওয়ার পর তাকে সরিয়ে বাছিরকে এই দায়িত্বে এনেছিল দুদক।

বাছিরকে ‘ফাঁদে ফেলার’ কাজটি করার আগে দুদকে অভিযোগ দিয়েছিলেন কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, তিনি জানিয়েছিলেন, কিন্তু সাড়া পাননি।

“যখন দেখা গেল, উনি (বাছির) কোনো কিছুতে মানেন না, তখন দুদকের পরিচালক … সাহেবকে মেসেজ দিয়ে তার সাথে দেখা করে কথা বলতে চেয়েছি। তার সাথে দেখা হলে চেয়ারম্যানের সাথে দেখা করার ব্যবস্থা করতে চাওয়া হত। কিন্তু তিনি মেসেজের কোনো প্রতিউত্তর দেননি। তার সাথে দেখা হলে বিস্তারিত বলতাম।”

‘ঘুষ হিসেবে দেওয়া’ ৪০ লাখ টাকার উৎস জানতে চাইলে ডিআইজি মিজান বলেন, “এটাকা আমি কোথায় পেয়েছি, কীভাবে পেয়েছি, তার জবাব আমি যথাযথভাবে দুদককে দেব।”

তার কোনো অবৈধ সম্পদ নেই দাবি করে তিনি বলেন, “ট্যাক্স ফাইলের বাইরে কোনো সম্পদ পেলে দুদক আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিলে কোনো আপত্তি থাকবে না। দুদকের কাছে আমি ইলিগ্যাল কোনো হেল্প চাচ্ছি না।”

এক ভাগ্নের ব্যাংক হিসেবে মোটা অঙ্কের টাকা গচ্ছিত রাখার অভিযোগের বিষয়ে ডিআইজি মিজান বলেন, “সে একজন ব্যবসায়ী। তার ট্যাক্স ফাইল আছে। ট্যাক্স ফাইলেই কথা বলবে।”

এই পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রীর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে, সেখানেও দুদক কর্মকর্তা বাছির গিয়েছিলেন।

খন্দকার এনামুল বাছির

তবে বাছির তার বিরুদ্ধে ডিআইজি মিজানের আনা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমার দপ্তরে তিনি (ডিআইজি মিজান) অসৎ উদ্দেশ্যে এসেছিলেন। যে কারণে আমার সাথে তার যেসব সামাজিক কথাবার্তা হয়েছে, সেগুলো তিনি রেকর্ড করেছেন। এসব কথার সাথে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে, কিছু কথা টেম্পারিং করে এই অডিওটি তৈরি করেছেন।”

ডিআইজি মিজানের স্ত্রীর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে যাওয়ার বিষয়ে বাছির বলেন, “তার স্ত্রীর বিরুদ্ধেও অবৈধ সম্পদ অর্জনের আরেকটি অভিযোগের অনুসন্ধান চলছে। এই অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে তার প্রতিষ্ঠানে যাওয়া হয়েছিল।”