আট বছর আগে সাভারের রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় দায়ের করা হত্যা মামলায় অবশেষে সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়েছে।
Published : 31 Jan 2022, 04:28 PM
এতদিন মামলার বিচারে ৩৯ আসামির মধ্যে শুধু দুই জনের পক্ষে উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশ থাকায় সাক্ষ্যগ্রহণ থেমে ছিল, যা সম্প্রতি খারিজ হলে বিচার প্রক্রিয়া আবার শুরু হলো।
সোমবার মামলাটির বাদী পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের উপ পরিদর্শক ওয়ালী আশরাফ ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে উপস্থিত হয়ে সাক্ষ্য দেওয়া শুরু করেন।
এ আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বিমল সমাদ্দার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে এ তথ্য জানান।
সাক্ষ্য গ্রহণের সময় মামলার প্রধান অভিযুক্ত সোহেল রানা কারাগার থেকে ভাচুর্য়াল মাধ্যমে আদালতে যুক্ত ছিলেন।
বিচারক এ এইচ এম হাবিবুর রহমান ভূঁইয়া পরবর্তী সাক্ষ্য নেওয়ার তারিখ ঠিক করেননি।
আইনজীবী বিমল জানান, এক অভিযুক্তের স্থগিতাদেশ খারিজের কাগজ জেলা জজের দপ্তর ও পিপি কার্যালয়ে আসলেও অপর একজনের বিষয়ে স্থগিতাদেশের আদেশ এটর্নি জেনারেল কার্যালয় থেকে ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের দপ্তরে এখনও পৌঁছায়নি। ওই আদেশ পাওয়ার জন্য চিঠি পাঠানো হয়েছে।
এর আগে এ মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু পিছিয়েছে ২৫ বারের বেশি।
২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সাভার বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন আট তলা রানা প্লাজা ধসে নিহত হন এক হাজার ১৩৫ জন; প্রাণে বেঁচে গেলেও পঙ্গুত্ব বরণ করতে হয় আরও হাজারখানেক তৈরি পোশাক শ্রমিককে।
বিশ্বকে নাড়িয়ে দেওয়া সেই ঘটনার দিনই সাভার থানায় দুটি মামলা হয়। পরের বছর দুর্নীতি দমন কমিশন দায়ের করে আরেকটি মামলা।
এরমধ্যে দুদকের মামলায় সম্পদের হিসাব দাখিল না করায় রানার তিন বছরের কারাদণ্ড হয়। ২০১৭ সালের ২৯ অগাস্ট ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৬ এর বিচারক কে এম ইমরুল কায়েস এ রায় দেন।
অপরদিকে রানার মা মর্জিনা বেগমকে ছয় বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ডের পাশাপাশি তার সম্পদের ৬ কোটি ৬৭ লাখ ৬৬ হাজার ৯৯০ টাকা বাজেয়াপ্ত করেন বিচারক।
এর আগে রাষ্ট্রপক্ষের অপর আইনজীবী মো. মিজানুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছিলেন, অভিযোগ গঠনের পর পরই আটজন আসামি উচ্চ আদালতে গিয়ে মামলাটি স্থগিতের আবেদন করেন। তাদের মধ্যে ছয়জনের আবেদন নিষ্পত্তি হয়েছে।
দুই আসামি সাভার পৌরসভার সাবেক মেয়র মো. রেফাত উল্লাহ এবং ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কমিশনার হাজি মোহাম্মদ আলীর পক্ষের আবেদন নিষ্পত্তি না হওয়ায় তাদের আবেদনের ফলে মামলার কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে।
এখন সেই স্থগিতাদেশ খারিজ হওয়ায় দেশের সবচেয়ে বড় শিল্প দুর্ঘটনার পর দায়ের করা মামলার বিচারের পরবর্তী প্রক্রিয়া শুরু হলো বলে জানান আইনজীবীরা।
হতাহতের ঘটনা উল্লেখ করে ভবন ও কারখানা মালিকদের বিরুদ্ধে মামলাটি করেন সাভার মডেল থানার এসআই ওয়ালী আশরাফ।
আর রাজউক কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিনের দায়ের করা অন্য মামলাটিতে ভবন নির্মাণে ত্রুটি ও নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ আনা হয়।
‘অবহেলা ও অবহেলাজনিত হত্যার’ অভিযোগে মামলা দায়েরের দুই বছর পর ২০১৫ সালের ২৬ এপ্রিল সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার বিজয়কৃষ্ণ কর ভবন মালিক সোহেল রানাসহ ৪১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। মামলায় সাক্ষী করা হয় ৫৯৪ জনকে।
আসামিদের আবু বক্কর সিদ্দিক ও আবুল হোসেন মারা যাওয়ায় এখন আসামির সংখ্যা ৩৯ জন।
আসামিদের মধ্যে মো. শাহ আলম মিঠু, মো. আবুল হাসান ও সৈয়দ শফিকুল ইসলাম জনির বিরুদ্ধে প্রধান আসামি সোহেল রানাকে পালাতে সহযোগিতা করায় জন্য দণ্ডবিধির ২১২ ধারায় অভিযোগ আনা হয়। বাকি ৩৮ জনের বিরুদ্ধে হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ গঠন করা হয়।সোহেল রানা কারাগারে রয়েছেন।
পলাতক রয়েছেন মাহবুবুর রহমান, কামরুল ইসলাম, মনোয়ার হোসেন বিপ্লব, সৈয়দ শফিকুল ইসলাম, রেজাউল করিম, নান্টু কন্ট্রাকটর ও নয়ন মিয়া।রানার বাবা আব্দুল খালেক ও মা মর্জিনা বেগমসহ বাকি আসামিরা জামিনে রয়েছেন।
প্লাজা ধসের পর ইমারত নির্মাণ আইনে দায়ের করা মামলাটিতেও সাক্ষ্যগ্রহণ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আনোয়ারুল কবির বাবুল।
নথিপত্রে দেখা যায়, রাজউকের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. হেলাল উদ্দিনের করা এ মামলায় ২০১৫ সালের ২৬ এপ্রিল সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার বিজয়কৃষ্ণ কর ভবনের মালিক সোহেল রানাসহ ১৮ জনকে আসামি করে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। প্রায় তিন বছর আগে অভিযোগ গঠনও হয়েছে।
এ মামলা প্রসঙ্গে আইনজীবী বাবুল জানিয়েছিলেন, ‘কয়েকজন আসামি অভিযোগ গঠনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিভিশন আবেদন করেন। তাদের মধ্যে নিউ ওয়েব বটমস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বজলুস সামাদ ও সাবেক সহকারী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমানের রিভিশন আবেদন নামঞ্জুর করেছেন আদালত।
অপরদিকে ফ্যান্টম অ্যাপারেলস লিমিটেডের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আমিনুল ইসলামের রিভিশন মঞ্জুর করে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। রিভিশনের বিষয়টি নিষ্পত্তি হলে এ মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু করা যাবে।
ঢাকার আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বাবুল জানিয়েছিলেন, রানার বিরুদ্ধে অস্ত্র মামলা ও মাদকের মামলাও বিচারাধীন।