রানা প্লাজা ধসের ৬ বছর: ক্ষত শুকায়নি এখনও

ঢাকার সাভারে রানা প্লাজা ধসের পর ছয় বছর পেরিয়ে গেলেও এখনও অনেকে সেই ধকল কাটিয়ে উঠতে পারেননি। অনেকে এখনও পুরোপুরি সুস্থ হতে পারেননি।

সাভার প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 April 2019, 05:35 AM
Updated : 24 April 2019, 07:11 AM

প্রথমে কিছু সাহায্য পেলেও এখন আর কেউ তাদের খোঁজ নেয় না বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকে।

২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সাভার বাসস্ট্যান্ডের পাশে রানা প্লাজা নামের বহুতল ভবন ধসে পড়লে ১১৭৫ শ্রমিক নিহত হন। আহত হন দুই হাজারের বেশি।

বহুল আলোচিত সেই দিনটির স্মরণে বুধবার ধসে পড়া ভবনের সামনে নানা কর্মসূচির আয়োজন করে বিভিন্ন শ্রমিক ও সামাজিক সংগঠন।

রানা প্লাজার ছয়তলায় ইথার টেক্স কারখানায় অপারেটর পদে কাজ করতেন শিলা বেগমসহ (৩১) অনেকে।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, প্রায় দুই বছর ধরে তিনি কারখানাটিতে কাজ করছিলেন।

“ভালই চলছিল সংসার। আচমকা ধসে আমার সব শেষ হয়ে গেল।”

ধ্বংসস্তূপের মধ্যে চাপা পড়েন তিনি। প্রায় ১৮ ঘণ্টা পর উদ্ধারকর্মীরা তাকে খুঁজে পান। ভর্তি করা হয় হাসপাতালে।

শিলা বলেন, “প্রথমে কিছু টাকা পেলেও সেই টাকায় আমার চিকিৎসাও ঠিকমত হয়নি। টাকার অভাবে সন্তানের লেখাপড়াও বন্ধের পথে। কোনো রকম দুমুঠো খেয়ে বেঁচে আছি। টাকার অভাবে এখন চিকিৎসা বন্ধ রয়েছে।”

রওশন আরাও (৩৫) একই কারখানায় কাজ করতেন।

তিনি বলেন, “নিজে কাজ করতে পারি না আবার চিকিৎসার ব্যয়। টাকার অভাবে দুই সন্তানকে এতিমখানায় ভর্তি করেছি। রিকশাচালক স্বামীর টাকায় চলছে চিকিৎসা। চিকিৎসা ঠিকমত হয় না। তার ওপর কেমো দিতে হয়।”

তিনি আক্ষেপ করে বলেন, “ধসের বর্ষপূর্তিতে সাংবাদিকরা আসেন। কিন্তু যাদের জন্য আজ আমাদের এ অবস্থা তারা কেউ আমাদের খোঁজখবর নেয় না। এনজিও কারিতাস একটা গরু দিতে চেয়েছিল, কিন্তু আজ পর্যন্ত পাইনি। যে কয়দিন বাঁচব, কেমো দিয়ে বাঁচতে হবে।”

ভবনের আটতলায় নিউ স্টাইল কারখানায় কাজ করতেন ২৮ বছর বয়সী ছালমা বেগম।

“ভবন ধসে কোমরে ওপর বিম পড়লে মেরুদণ্ডের হাড় ভেঙ্গে যায়। সকালের ঘটনা। সন্ধ্যায় আমাকে উদ্ধার করেন উদ্ধারকর্মীরা। যখন আমার জ্ঞান ফেরে তখন আমি হাসাপাতালে। কিছু টাকা পেলেও তা দিয়ে চিকিৎসা করানো সম্ভব হয়নি। আবার বেশি অসুস্থ হয়ে পড়লে স্বামী বাক্কার আমাকে ফেলে চলে যায়। এখন অর্থাভাবে চিকিৎসা বন্ধের পথে। শুধু সিআরপিতে ফ্রি থেরাপি দিয়ে বেঁচে রয়েছি। ডাক্তার বলছে, আমি আর কোনো দিন কাজ করতে পারব না। তাহলে আমি কী করব।”

আটতলায় নিউ ওয়েভ স্টাইল কারখানায় কোয়ালিটি ইন্সপেকটর পদে কাজ করতেন মাহমুদুল হাসান হৃদয় (৩২)।

মাহমুদুল বলেন, “চাকরির মাত্র ১৪ দিনের মাথায় ভবন ধসে পড়ল। ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আমার সুখশান্তি। উদ্ধারকর্মীরা ২০ ঘণ্টা পর আমাকে উদ্ধার করলেও মেরুদণ্ডে আঘাত পেয়ে আজ আমি পঙ্গু হওয়ার পথে। তাৎক্ষণিকভাবে অল্পকিছু যা সহযোগিতা পেয়ে তা দিয়ে ঠিকমত চিকিৎসাও করাতে পারিনি।

“এখন পৌরসভার ছায়াবিথি এলাকায় ছোট্ট একটা ফার্মেসি দিয়ে বসে থাকি। শুধু বসে বসে সময় কাটাই।”

রানা প্লাজায় আহত ৩০০ শ্রমিক নিয়ে ‘সাভার রানা প্লাজা সারভাইভারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ’ নামে একটি সংগঠন করেছেন মাহমুদুল।

তিনি বলেন, “সংগঠনটির সভাপতি আমিই। আমাদের কোনো পুঁজি নেই। একটি মাটির ব্যাংক আমাদের পুঁজি। ব্যাংকে যে যা পারে রেখে দেয়। পরে বিশেষ কোনো কাজে সেই ব্যাংক ভেঙ্গে বিশেষ বিশেষ দিনে সাহায্য-সহযোগিতা করি।”

ছয় বছর আগের এই ধস সাম্প্রতিক বিশ্বের সবচেয়ে বড় শিল্প দুর্ঘটনা। এখানে উদ্ধারকাজে অংশ নিয়েছিল সেনাবাহিনী, পুলিশ, র‌্যাব, ফায়ার সার্ভিস ও সাধারণ জনগণ।

ভবনটিতে কয়েকটি পোশাক কারখানা, একটি ব্যাংক ও একাধিক সাধারণ দোকান ছিল।

ধসের আগে ফাটল দেখা দেওয়ায় সতর্কবার্তাও ছিল। সতর্কবার্তা উপেক্ষা চলানো হয় পোশাক কারখানাগুলো।