অভিজিৎ রায়ের খুনিদের তথ্যের জন্য যুক্তরাষ্ট্র যে পুরস্কার ঘোষণা করেছে, তা তাদেরকে ধরতে বাংলাদেশ সরকারের প্রচেষ্টায় সহায়ক হবে বলে মনে করছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।
Published : 21 Dec 2021, 04:44 PM
মঙ্গলবার ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি বলেছেন, “তারা কোথায়, কোন দেশে আছে, আমরা জানি না। মে বি এটার ফলে আমাদের যে ওদের ধরার প্রচেষ্টা, এটাতে একটু সহায়ক হবে। ধরা যাতে সহজ হয়।”
যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বিজ্ঞান লেখক অভিজিৎ হত্যার মামলায় বাংলাদেশের আদালতের রায়ে ইতোমধ্যে পাঁচজনের মৃত্যুদণ্ডের রায় হয়েছে। তার মধ্যে সেনাবাহিনী থেকে চাকরিচ্যুত মেজর সৈয়দ জিয়াউল হক এবং আকরাম হোসেন পলাতক।
দণ্ডিত দুই পলাতক খুনি কিংবা ছয় বছর আগের ওই হত্যাকাণ্ডে জড়িত অন্যদের তথ্যের জন্য সোমবার ৫০ লাখ ডলার পুরস্কার ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র সরকার।
পুরস্কারের ঘোষণা দিয়ে দেশটির পররাষ্ট্র দপ্তরের আওতাধীন ‘রিওয়ার্ড ফর জাস্টিস’ (আরএফজে) প্রোগ্রাম বলেছে, হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িতরা এখনও বাংলাদেশে রয়েছে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের পুরস্কার ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেন, “ওদের বিরুদ্ধে রায় হয়ে গেছে। তারপরও পালিয়ে আছে। এখন যদি এর কারণে ওদের ধরা সম্ভব হয়, দ্যাট ইজ মোস্ট ওয়েলকাম।”
আমেরিকানরা এভাবে পুরস্কার ঘোষণা করে এর আগে সফলও হয়েছে উল্লেখ করে দীর্ঘদিন যুক্তরাষ্ট্রে কাটিয়ে আসা মোমেন বলেন, “অনেক দেশে যাদেরকে পাওয়া যায় না, তখন লোকরা ওদের তথ্য দিয়ে সহায়তা করে।
“আমি শুনেছি, বিন লাদেন কেইসেও একইভাবে হয়েছিল। এই পলিসি, কৌশল মনে হয় অনেক সময় সাকসেসফুল হয়।”
র্যাব ও এর সাত সাবেক-বর্তমান কর্মকর্তাদের ওপর কয়েকদিন আগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র ও অর্থ দপ্তর। এবার বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া হত্যাকাণ্ডের জন্য পুরস্কার ঘোষণা করল দেশটি।
এসবের ফলে সরকার চাপ অনুভব করছেন কি না- এমন প্রশ্নে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেন, “তারা তাদের নিয়মে চলছে। তবে, সরকারিভাবে তারা আমাদের উপরে বিশেষ কিছু করে নাই। তারা তাদের কাজ করছে, আমরা আমাদের কাজ করছি।
“যখনই কোনো দেশ উন্নতি করতে থাকে, তার শত্রুও বাড়ে, তার ওপর চাপও বাড়ে। আপনি যদি আপনার কলিগ থেকে ভালো (হন), আপনার শত্রু বাড়বে, আপনার কলিগই আপনার শত্রু হয়ে যাবে। আপনি যদি বেশি ভালো করে ফেলেন, আপনার কিছু শত্রু বাড়বেই।”
মার্কিন নাগরিক অভিজিৎ জঙ্গিদের হুমকির মুখেও ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যাকে নিয়ে বইমেলায় অংশ নিতে দেশে এসেছিলেন।
২৬ ফেব্রুয়ারি রাতে বইমেলা থেকে ফেরার পথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির সামনে হামলার শিকার হন অভিজিৎ। জঙ্গিদের চাপাতির আঘাতে ঘটনাস্থলেই তিনি নিহত হন; বন্যার হাতে আঙুল কাটা পড়ে।
সেই ঘটনা পুরো বাংলাদেশকে নাড়িয়ে দেয়, আন্তর্জাতিক পর্যায়েও আলোড়ন সৃষ্টি করে। হত্যাকাণ্ডের ছয় বছরের মাথায় চলতি বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি অভিজিৎ হত্যার রায় দেয় আদালত।
তাতে সেনাবাহিনী থেকে চাকরিচ্যুত মেজর জিয়াউল হক ওরফে জিয়া, মোজাম্মেল হুসাইন ওরফে সায়মন ওরফে শাহরিয়ার, আবু সিদ্দিক সোহেল ওরফে সাকিব ওরফে সাজিদ ওরফে শাহাব, আরাফাত রহমান ওরফে সিয়াম ওরফে সাজ্জাদ ওরফে শামস এবং আকরাম হোসেন ওরফে হাসিব ওরফে আবির ওরফে আদনান ওরফে আবদুল্লাহকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। তারা সবাই নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্য বলে তদন্তকারীদের ভাষ্য।
মামলার আরেক আসামি উগ্রপন্থি ব্লগার শফিউর রহমান ফারাবীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয় আদালত। দণ্ডপ্রাপ্ত ছয় জনের মধ্যে জিয়া ও আকরাম শুরু থেকেই পলাতক।
পলাতক খুনী জিয়াউল হক ও আকরাম হোসেন কিংবা হত্যাকাণ্ডে জড়িত কারও তথ্যের পুরস্কারের ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ‘রিওয়ার্ড ফর জাস্টিস’ (আরএফজে) প্রোগ্রাম।
বঙ্গবন্ধুর পলাতক তিন দণ্ডিত খুনির তথ্য চেয়ে বাংলাদেশ সরকারের পুরস্কার ঘোষণার কথাও এসময় তুলে ধরেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
তিনি বলেন, “আমরাও তো বঙ্গবন্ধুর খুনিদের যে তিনজন, যাদেরকে চিনি, কিন্তু জানি না তারা কোথায় আছে, তাদের জন্য পুরস্কার ঘোষণা করেছি। কেউ যদি ওদের সঠিক তথ্য দিতে পারেন, অবশ্যই সরকার তাদের পুরস্কার দেবে। তারাও এই রকম দিয়েছে।”
কিছু খুনির পালিয়ে থাকার ঘটনা পৃথিবীর সব দেশেই থাকে বলেও মন্তব্য করেন মোমেন।
ফিউজিটিভ নামে হলিউড সিনেমার উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, “আমেরিকাতে বছরের পর বছর কোর্টে কেইস হয়ে গেছে, ধরা পড়ে নাই। এটা দুনিয়ার সব দেশেই, শুধু আমাদের দেশে না, সব দেশেই অনেকে পালিয়ে থাকে এবং অনেক দিন পরে ধরাও পড়ে।
”এমনকি আমেরিকাতেও। সুতরাং এমন বড় কোনো বিষয় না। আমাদের দেশে ১৬ কোটি মানুষ। নিরাপত্তা বাহিনীর কার্যক্রম ও লোকবলও অনেক কম।”