সমস্যা সমাধানে আলোচনায় ‘গুরুত্ব দিয়ে’ বাংলাদেশের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে ‘আগে জানানোর’ জন্য মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেনকে আহ্বান জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।
Published : 16 Dec 2021, 05:26 PM
র্যাব এবং এর সাবেক ও বর্তমান সাত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে ঢাকার অসন্তোষের মধ্যেই বুধবার দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর টেলিফোনে প্রথম আলোচনা হয়।
এসময় যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা দেশবাসী ‘গ্রহণ করেনি’ বলেও জানান মোমেন। এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন একাধিক সংলাপ হবে এবং আগামী বসন্তে (মার্চ-মে) ওয়াশিংটনে আলোচনা করবেন।
আগের দিন ব্লিংকেনের সঙ্গে এসব আলোচনার পর বৃহস্পতিবার ঢাকার রমনায় ফরেন সার্ভিস একাডেমি মিলনায়নে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
টেলিফোন আলাপের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “আমি ওনাকে বললাম যে, আপনারা এমন একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, যে সিদ্ধান্ত আমাদের দেশবাসী… এইটা গ্রহণ করেনি।
“গ্রহণ করেনি এ জন্য যে, আপনাদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক প্রায় ৫০ বছরের, ভেরি ট্রাস্টেড ফ্রেন্ডশিপ।”
মোমেন জানান, বাংলাদেশ যে কোনো বিষয় নিয়ে প্রতিবেশী দেশগুলোসহ অন্যান্য দেশের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সমাস্যার সমাধান করে থাকে বলে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলেছেন।
“আমি বলেছি- স্বাভাবিকভাবে আমাদের প্রত্যাশা ছিল, আপনারা এমন কোনো সিদ্ধান্ত নিলে আমাদের জানাবেন, আগেভাগে জানাবেন। এ ব্যাপারে আমরা পছন্দ করি।
“সেইসাথে বললাম- আপনারা গ্লোবালি টেররিজমের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করেছেন। যে প্রতিষ্ঠান- অত্যন্ত ডিসিপ্লিন প্রতিষ্ঠান র্যাব, সেটিকে আপনারা স্যাংশন করলেন।
টেলিফোন আলাপে সন্ত্রাসবাদ দমনে যুক্তরাষ্ট্রের লক্ষ্যের কথা তুলে ধরার বিষয়টি জানিয়ে তিনি বলেন, “আপনাদের যেসব বৈশ্বিক উদ্যোগ, লক্ষ্য, এ প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে অত্যন্ত যোগ্যতার সঙ্গে সেগুলো পালন করছে।
“হলি আর্টিজানের ঘটনার পরে বাংলাদেশে একটিও সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটেনি, এদের জন্য। এরা দুর্নীতিপরায়ণ না। দুর্নীতিপরায়ণ না বলেই বাংলাদেশের জনগণের এদের প্রতি আস্থা আছে।”
র্যাবের প্রশংসা করে ব্লিংকেনকে মোমেন বলেন, “ভুক্তভোগীরা কোনো প্রয়োজনীয় ঘটনায় র্যাব নিয়োগ চায়। কোনো বিষয়ে অন্যান্য ফোর্স নিয়োগ করলে তখন তারা বলে র্যাব হলে সব ঠিক।
“এমন একটি প্রতিষ্ঠানকে আপনারা স্যাংশন করেছেন, এটা আমাদের দেশবাসী পছন্দ করেনি।”
দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর টেলিফোন আলাপে র্যাব ও তার সাবেক কর্মকর্তাদের ওপর ‘নিষেধাজ্ঞা’ মূল বিষয় হলেও তা তুলে নেওয়ার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে প্রস্তাব দেননি বলে জানান আব্দুল মোমেন।
ফোনালাপের কিছু অংশ তুলে ধরে মোমেন বলেন, “উনি বললেন যে, এমনি আমরা আলোচনা করব। আলোচনার দরজা খোলা।
“আমি বললাম দেখেন- এইটা আপনার স্মরণ রাখা উচিত- আপনারা যে অভিযোগ করেছেন, এরাই মানবাধিকার রক্ষা করে। আর মিসিং হয়েছে বলে এদের দায়ী করেছেন। আপনার দেশে তো প্রতিবছর ছয় লাখ লোক মিসিং হয়। আর আমার এখানে কয়জন লোক হয়!
“আপনার দেশে তো হাজার খানেক লোক আপনার পুলিশ মেরে ফেলে। হ্যাঁ, আমাদের দেশে যদি মারে, তাকে বলে এক্সট্রা জুডিশিয়াল কিলিং, আর আপনার দেশে মারলে বলে ‘ইন দ্য লাইন অব ডিউটি’।”
সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নের জবাবে মোমেন বলেন, “উনি যেটা বলেছেন, এবারের যে নিষেধাজ্ঞা হয়েছে এটা অনেকটা হয়েছে কংগ্রেস ল মেকারের কারণে।”
পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে জলবায়ু, গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ কাজ করবে বলে ফোনালাপে আশা প্রকাশ করেছেন অ্যান্টনি ব্লিংকেন।
“উনি বললেন- জলবায়ু ইস্যুতে কাজ করবেন, গণতন্ত্রের ওপর জোর দিয়েছেন। আমি বলেছি- আমরা গণতান্ত্রিক দেশ। এরপর মানবাধিকারের ওপর জোর দিয়েছি।”
বাংলাদেশের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ব্লিনকেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেনকে অভিনন্দন জানিয়েছেন বলেও সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।
আরও পড়ুন