ভারতের রাষ্ট্রপতির ঢাকা সফর নিয়ে মঙ্গলবার এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা নিয়ে কথা বলেন তিনি।
মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে সমালোচনার মুখে থাকা র্যাবের সাবেক প্রধান ও বর্তমান আইজিপি বেনজীর আহমেদসহ ৭ শীর্ষ কর্মকর্তার উপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে বাংলাদেশে।
যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্তকে ‘দুঃখজনক’ বলে আসা মোমেন বলেন, বিভিন্ন বিষয় নিয়ে দু্ পক্ষের আলোচনা চললেও নিষেধাজ্ঞার মতো বড় পদক্ষেপ নেওয়ার আগে ওয়াশিংটন কিছুই জানায়নি, যা তাকে হতাশ করেছেন।
“কিছুই না জানিয়ে হঠাৎ করে এই রকম সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আমরা এটা নিয়ে আলাপ-আলোচনা করব …. কারণ আমেরিকার সব সিদ্ধান্ত সঠিক এমন না, সেটার ভুরি ভুরি এক্সাম্পল আছে।”
“আমরা আলোচনা করব এবং আশা করি, তারা যথেষ্ট পরিপক্ক লোকজন আছেন, জ্ঞানী লোকেরা আছেন, তারা তখন তাদের অবস্থানের পরিবর্তন করবে। আমরা সেই প্রচেষ্টাই চালাব,” বলেন তিনি।
ওয়াশিংটনের সঙ্গে এই আলোচনা সংগঠিতভাবে হবে বলেও জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
“প্রধানমন্ত্রী আমাদের একটা দায়িত্ব দিয়েছেন, আমরা আলাপ-আলোচনা করেই উদ্যোগ নেব। এমনিতে একাকী কিছু করা ঠিক হবে না।”
নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রতিক্রিয়ায় ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত আর্ল মিলারকে তলব করে সরকারের অবস্থান জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এই বার্তা ওয়াশিংটনে পৌছে দিতেও তাকে বলা হয়েছে।
এই প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে নিখোঁজ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে নিহতের ঘটনার ফিরিস্তিও তুলে ধরেন দীর্ঘদিন দেশটিতে কাটিয়ে আসা মোমেন।
তিনি বলেন, “আমেরিকাতে, আমাদের সহকর্মীরা জানিয়েছেন, প্রতি বছর প্রায় ৬ লক্ষ লোক মিসিং হয়, আর এরা বলছেন যে, গত ১০ বছরে আমাদের দেশে ছয়শ লোক নাকি মিসিং হয়েছে। ৬ লক্ষ আর ছয়শ!
“আর দ্বিতীয়ত, প্রতিবছর আমেরিকাতে, আমেরিকার তথ্য অনুযায়ী হাজারখানেক লোক পুলিশ মেরে ফেলে, গুলি করে মেরে ফেলে, বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড। আর আমাদের এখানে কালেভদ্রে একজন-দুজন মারা যায়।”
বাংলাদেশে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড নিয়ে সমালোচনা হলেও যুক্তরাষ্ট্রে সংখ্যাটি এত হওয়ার পরও কেন আলোচনায় আসে না, তার একটা ব্যাখ্যা দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
“কারণ, তারা মনে করে যে, এরা অন দ্য লাইন অব ডিউটিতে মারা গেছে।”
তিনি আরও বলেন, “আমেরিকায় তো এই যে বললাম ৬ লক্ষ লোক নিখোঁজ হয়, হাজার হাজার লোক মারা যায়, ১৭ হাজারের মতো লোক পাওয়া যায় মৃত অবস্থায়, সেজন্য সেসব প্রতিষ্ঠানে যারা চাকরি করেন, তাদের কোনো পানিশমেন্ট আমি শুনিনি কোনোদিন।”
বিপরীতে বাংলাদেশ বিশ্বে প্রভাবশালী রাষ্ট্র না হওয়ায় এদেশের ঘটনা নিয়ে আলোচনা বেশি হয় বলে মনে করেন মোমেন।
“কিন্তু বাংলাদেশের, আমরা অত শক্তিশালী দেশ নই, তার ফলে হঠাৎ কোনো কোনো লোকের প্ররোচনায় কিংবা বিভিন্ন রকম হিউম্যান রাইটস এনজিওর কারণে না জানিয়ে এমন বড় ডিসিশন নিয়েছে।”
র্যাবের কর্মকর্তাদের উপর নিষেধাজ্ঞা দুদেশের সম্পর্কে প্রভাব ফেলবে কি না- এ প্রশ্নে মোমেন বলেন, “আমরা তো বিশ্বাস করি, প্রভাব ফেলবে না।”