যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা জারির পরদিন শনিবার ঢাকার কারওয়ান বাজারে অন্য এক ঘটনায় সংবাদ সম্মেলনে আসা র্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন সাংবাদিকদের প্রশ্নে একথা বলেন।
ওয়াশিংটনের পদক্ষেপের প্রতিক্রিয়ায় এর আগে র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল কে এম আজাদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মানুষের অধিকার রক্ষাই র্যাবের প্রধান দায়িত্ব। র্যাব বড় মানবাধিকারকর্মী।”
‘গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের’ ঘটনায় র্যাবের সাবেক প্রধান, বর্তমান পুলিশ মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদ এবং বর্তমান প্রধান চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনসহ সাত কর্মকর্তার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র সরকার।
পুলিশের বিশেষ ইউনিট হিসেবে ২০০৪ সালের পর থেকেই মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে সমালোচনায় রয়েছে র্যাব।
বাহিনীর কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা এসেছে ২০১৮ সালে মাদকবিরোধী অভিযানের সময় টেকনাফের পৌর কাউন্সিলর ও উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি একরামুল হকের র্যাবের কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ার ঘটনায়।
সংবাদ সম্মেলনে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে র্যাবের মুখপাত্র খন্দকার আল মঈন বলেন, তারা সংবাদ মাধ্যমে বিষয়টি দেখেছেন, আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানেন না।
“আনুষ্ঠানিকভাবে এ ব্যাপারে কোনো কিছু পাওয়া গেলে সে অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ব্যবস্থা নেবে।”
র্যাব যে মন্ত্রণালয়ের অধীনে, সেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এর আগে বলেছিলেন, র্যাবের বিরুদ্ধে বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ ঠিক নয়।
সংবাদ সম্মেলনে খন্দকার আল মঈন বলেন, মানুষের ‘অধিকার রক্ষায়’ কাজ করার পাশাপাশি জঙ্গি ও জলদস্যুদের আত্মসমর্পণের সুযোগ দিয়ে র্যাব যে মানবিকতা দেখিয়েছে, তা ‘নজিরবিহীন’।
এখন অবধি ৪২১ জন জঙ্গি ও জলদস্যু আত্মসমর্পণ করেছে জানিয়ে তিনি বলেন, “এটা কি মানবিকতা নয়? এই আত্মসমর্পণের সুযোগ করে দেওয়া মানবিকতার একটি বড় নজির।”
“র্যাব মানবাধিকার লুণ্ঠন করে না, মানবাধিকার রক্ষা করে,” দাবি করে বাহিনীর আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক আল মঈন বলেন, “যে বাহিনীর সদস্য সংখ্যা মাত্র নয় হাজার, সেই বাহিনী মানবাধিকার রক্ষায় এ পর্যন্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল আজাদসহ ২৮ জন জীবন দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, আইন শৃঙ্খলা রক্ষা করতে এবং মানবাধিকার রক্ষায় এক হাজারেও বেশি র্যাব সদস্য অঙ্গহানি হয়ে পঙ্গু হয়েছেন, দুই হাজারের বেশি আহত হয়েছেন। এই আত্মত্যাগ বিশ্বে আছে কি না, সন্দেহ।”
করোনাভাইরাস মহামারিতে যখন কেউ লাশ দাফন করে না তখন র্যাব সদস্যরা এগিয়ে গিয়েছিল বলে দাবি করেন তিনি।
“হেলিকপ্টারে করে রোগীকে এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে চিকিৎসার জন্য নিয়ে এসেছে। র্যাব ত্রাণ দিয়েছে, ঘর বানিয়ে দিয়েছে, গরু দিয়ে পরিবারকে স্বাবলম্বী করেছে। এসব কর্মকাণ্ড কি মানবিকতা নয়?”
২০০৪ সালে র্যাব গঠনের পর থেকে ‘বন্দুকযুদ্ধে নিহত’ কথাটি বাংলাদেশে ব্যাপকভাবে পরিচিত হয়। বন্দুকযুদ্ধের নামে হত্যার অভিযোগ র্যাবের বিরুদ্ধে করা হলেও বাহিনীটি তা বরাবরই প্রত্যাখ্যান করে আসছে।
র্যাব মুখপাত্র আল মঈন বলেন, “বিভিন্ন অভিযানে নানা বাধার সম্মুখীন হতে হয় র্যাব সদস্যদের। এসময় আত্মরক্ষার্থে প্রতিপক্ষের সাথে গুলিবিনিময়ের ঘটনাও ঘটে। র্যাবের অনেক সদস্য মারা যান, পঙ্গু হন।
“এসবের প্রতিটি ঘটনা নির্বাহী তদন্ত হয়। কারও কোনো ত্রুটি থাকলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে র্যাব ছাড় দেয় না।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা নিয়মিত ডোপ টেস্ট করে থাকি, যেন কোনো মাদকাসক্ত র্যাবের মতো এলিট বাহিনীতে থাকতে না পারে।”