চাহিদা অনুযায়ী ’বকশিশ না পেয়ে’ অক্সিজেন মাস্ক খুলে বগুড়র শহীদ জিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের এক রোগীকে হত্যার অভিযোগ ওঠার পর হাসপাতালের এক পরিচ্ছন্নতাকর্মীকে ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
Published : 11 Nov 2021, 04:44 PM
র্যাব বলছে, আসাদুল ইসলাম মীর ধলু নামের ওই ব্যক্তি গত ছয় বছর ধরে মাস্টার রোলে (দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে) হাসপাতালে পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে কাজ করছিলেন। ৫০ টাকা বকশিস কম পাওয়ায় হাসপাতালের মেঝেতে থাকা এক কিশোরের অক্সিজেনের মাস্ক এবং নলটি ‘পা দিয়ে’ খুলে ফেলেন তিনি। কিছুক্ষণের মধ্যেই মৃত্যু হয় দুর্ঘটনায় আহত ওই কিশোরের।
ধলুকে ঢাকার আব্দুল্লাহপুর থেকে গ্রেপ্তারের পর বৃহস্পতিবার কারওয়ানবাজারে এক সংবাদ সম্মেলনে হাসপাতালের ওই ঘটনার বিবরণ তুলে ধরেন র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার প্রধান কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
তিনি জানান, গাইবান্ধার সাঘাটা এলাকায় গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সাইকেল চালিয়ে বাড়ি ফেরার পথে মোটরসাইকেলের ধাক্কায় আহত হয় অষ্টম শ্রেণিতে পড়ুয়া বিকাশ চন্দ্র দাশ।
নিজের পড়াশোনার খরচ চালাতে একটি ওয়েল্ডিংয়ের দোকানে কাজ করত ১৭ বছর বয়সী এই কিশোর। কাজ শেষে দোকান থেকে সে বাড়ি ফিরছিল।
র্যাব জানায়, বিকাশকে নিয়ে রাত ১০টার দিকে হাসপাতালে যায় তার পরিবার। পরিচ্ছন্নতাকর্মী ধলু তাদের কাছে ৫০০ টাকা দাবি করেন। পরে দুইশ টাকায় রফা হলে বিকাশকে ট্রলিতে তুলে জরুরি বিভাগে নিয়ে যায় ধলু।
সেখানে চিকিৎসকরা বিকাশকে অক্সিজেন সাপোর্ট দিয়ে তিনতলায় নিউরো ওয়ার্ডে ভর্তি লিখে দেন। ট্রলিতে করে ধলুর সহায়তায় তিনতলায় আসে পরিবার। কিন্তু সেখানে বেড খালি না থাকায় বিকাশকে মেঝেতেই রাখা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, “রোগী রাখার পর ধলু দুইশ টাকা চায়। দরিদ্র পরিবারটি দেড়শ টাকা দিতে সক্ষম হয়। কিন্তু ধলু দুইশ টাকা না নিয়ে যাবেন না। তিনি রাগারাগি করতে থাকেন।
“বাগবিতণ্ডার এক পর্যায়ে তিনি পা দিয়ে মেঝেতে থাকা রোগীর নাক থেকে অক্সিজেনের মাস্ক এবং নলটি খুলে ফেলেন। এর কিছুক্ষণের মধ্যেই মৃত্যু হয় বিকাশের।”
র্যাব কর্মকর্তা মঈন বলেন, “অক্সিজেন খুলে নেওয়ার ফলেই যে কিশোরের মৃত্যু হয়েছে, তা র্যাবকে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।”
ঘটনার পর বিকাশের পরিবার ও অন্য রোগীর স্বজনরা একজোট হলে নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার ‘কথা বলে’ হাসপাতালের নিরাপত্তাকর্মীরা (আনসার) তাদের সরিয়ে রাখেন। এই সুযোগে পালিয়ে যায় ধলু।
এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার ধলুর বিরুদ্ধে ‘অবহেলাজনিত’ মৃত্যুর অভিযোগে মামলা করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
র্যাব জানায়, বগুড়া থেকে পালিয়ে ধলু প্রথমে প্রথমে নওগাঁ আসেন। পরে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শুরু হলে তিনি ঢাকা হয়ে চট্টগ্রামে আত্মগোপনে যাওয়ার চেষ্টা করেন।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, হাসপাতালে পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে কাজ করার পর বাকি সময়টা হাসপাতাল চত্বরে দালালি করতেন ধলু।
আরও পড়ুন