সহিংসতা উত্তরোত্তর বেড়ে প্রাণক্ষয়ের মধ্যে দ্বিতীয় ধাপে ৮৩৫ ইউনিয়ন পরিষদ এখন ভোটের জন্য প্রস্তুত; আর তার আগে সংঘাত বন্ধে কঠোর বার্তা এল নির্বাচন কমিশনের কাছ থেকে।
Published : 11 Nov 2021, 12:05 AM
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত একটানা ভোট চলবে এই ইউনিয়নগুলোতে, যেখানে ভোটার রয়েছে দেড় কোটির বেশি।
ভোটগ্রহণের সব প্রস্তুতি শেষ করেছে ইসি। ব্যালট পেপার, ইভিএমসহ নির্বাচনী সামগ্রী কেন্দ্রে কেন্দ্রে পৌঁছেও গেছে। আইন শৃঙ্খলাবাহিনী, নির্বাহী ও বিচারিক হাকিমও মাঠে রয়েছে।
গত কিছু দিনে একের পর এক সংঘাতে দুই ডজনের বেশি মানুষের মৃত্যু হলেও এই ধাপে ভোট উৎসবমুখর হবে বলে আশা করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা।
বুধবার কমিশন সভায় চলমান পরিস্থিতি পযালোচনা শেষে তিনি বলেন, “দ্বিতীয় ধাপের ভোট উৎসবমুখর হবে আশা করি। এবারের ইউপি ভোটে ৬৯-৮১ শতাংশ ভোটার উপস্থিতি রয়েছে। কালও উপস্থিতি ভালো হবে।”
সাম্প্রতিক সহিংসতার ঘটনায় সমালোচনার মুখে পড়লেও তার দায় নিতে নারাজ সিইসি। সংঘাত এড়াতে ভোট সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে সহনশীল হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
সেই সঙ্গে হুঁশিয়ার করে বলেছেন, “আমাদের পরিষ্কার নির্দেশনা, যে কোনো অস্থিতিশীল পরিস্থিতি হলে কঠোর হস্তে দমন করবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।”
সিইসি জানান, প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে এবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ২২ সদস্য নিয়োজিত থাকছে। পুলিশ, ম্যাজিস্ট্রেট পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখছে।
ইসির জনসংযোগ পরিচালক (যুগ্মসচিব) এস এম আসাদুজ্জামান জানান, দ্বিতীয় দফায় যে ৮৪৮টি ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচনের জন্য তফসিল হয়েছিল, তার ৮৩৫টিতে বৃহস্পতিবার ভোট হবে।
এছাড়া সাতটি ইউপির ভোট স্থগিত, একটির ভোট বাতিল হয়েছে। পাঁচটি ইউপিতে সব পবে প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।
এই ধাপে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান পদে ৮১ জন, সংরক্ষিত সদস্য পদে ৭৩ জন এবং সাধারণ সদস্য পদে ২০৩ জন নির্বাচিত হয়েছেন।
চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন ৩ হাজার ৩১০ জন। সংরক্ষিত নারী সদস্য পদে ৯ হাজার ১৬১ জন এবং সাধারণ সদস্য পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ২৮ হাজার ৭৪৭ জন।
২০টি ইউনিয়ন পরিষদে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) এবং বাকিগুলোতে প্রচলিত ব্যালট পেপারে ভোটগ্রহণ হবে। ভোটকেন্দ্র ৮৪৯২টি।
এসব ইউনিয়নে ভোটার রয়েছেন ১,৬৫,৯৫,২২৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৮৪,০৫,৮৩১ জন, নারী ৮১,৮৯,৩৭৯ জন এবং তৃতীয় লিঙ্গের ১৬ জন।
ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ জানান, নির্বাচন পূর্ব সময়ে ‘দু-এক জায়গায়’ সংঘর্ষের কিছু ঘটনা থাকলেও আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে মাঠ পর্যায়ে তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে।
“সবশেষ আইন-শৃঙ্খলা বৈঠকে লোকবল সঙ্কটের কথা বলেছিলেন অনেকে, তাই চাহিদা অনুযায়ী ম্যাজিস্ট্রেট বাড়ানো হয়েছে। থাও কোথাও পরিস্থিতি বিবেচনায় বিজিবির সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে।”
অক্টোবরের শেষ থেকে নভেম্বরের শুরুতে নরসিংদীর আলোকবালী এবং পাড়াতলী ইউনিয়নে এক সপ্তাহের ব্যবধানে সহিংসতায় পাঁচজনের প্রাণ যায়। ২৫ অক্টোবর বাঁশগাড়ী ইউনিয়নে দুই প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষে ২০ জন আহত হন।
এছাড়া গত ৬ নভেম্বর কক্সবাজার সদরের ঝিলংজায় ‘দুর্বৃত্তের’ হামলায় জেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি জহিরুল ইসলাম সিকদার ও তার ভাই ইউপি নির্বাচনের সদস্য প্রার্থী কুদরত উল্লাহ সিকদারসহ তিনজন গুলিবিদ্ধ হন।
পাবনার সুজানগরের ভায়না ইউনিয়নে গত ৯ নভেম্বর সংঘর্ষে ১০ জন আহত হন, ভাঙচুর করা হয় ১১টি মোটরসাইকেল।
এছাড়া ২৯ অক্টোবর একই উপজেলার হাটখালী ইউনিয়নে সংঘর্ষ, গোলাগুলি ও ভাঙচুরের ঘটনায় ১৫ জন আহত হন।
আগে ৪ নভেম্বর ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নির্বাচন-পূর্ব সহিংস ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে প্রয়োজনে প্রার্থিতা বাতিলের মত পদক্ষেপ নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন সিইসি।
ওই দিন ইউপি নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপের ভোট নিয়ে আইনশৃঙ্খলা পর্যালোচনা সভায় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের এ নির্দেশনা দেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার নূরুল হুদা।
প্রথম ধাপে দেশের ৩৬৪ ইউপির ভোট হয়েছে। দ্বিতীয় ধাপের পর তৃতীয় ধাপে ১০০৩ ইউপির ভোট হবে ২৮ নভেম্বর, চতুর্থ ধাপে ৮৪০ ইউপির ভোট হবে ২৩ ডিসেম্বর।
ডিসেম্বরের মধ্যে বাকি নির্বাচন উপযোগী ইউপির ভোট করার কথা রয়েছে।