পরিবহন ধর্মঘটের মধ্যে সকালে মিরপুরে পরিসংখ্যান ব্যুরোর নিয়োগ পরীক্ষা দিয়ে মুনিয়া বিলকিসকে বিকলে টিকাটুলি যেতে হয়েছে ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষা দিতে। পরীক্ষা কেমন হয়েছে জানতে চাইতেই প্রকাশ পেল একরাশ ক্ষোভ।
Published : 05 Nov 2021, 06:43 PM
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বললেন, “এত টেনশনে কি পরীক্ষা ভালো হয়? হঠাৎ করে বাস বন্ধ করে দিল, চাকরির এতোগুলা পরীক্ষা একদিনে। কিন্তু সরকারের কোনো মাথাব্যাথা নাই!”
মুনিয়ার মত অসংখ্য চাকরিপ্রত্যাশীকে শুক্রবার নাকাল হতে হয়েছে পরিবহন ধর্মঘট আর এক দিনে ১৯টি সরকারি দপ্তরের নিয়োগ পরীক্ষার তারিখ পড়ার কারণে।
মহামারীর কারণে দীর্ঘদিন নিয়োগ বন্ধ থাকায় এমনিতেই তাদের দুঃশ্চিন্তা আর সমস্যার শেষ নেই। এখন প্রতি শুক্র ও শনিবার জমে থাকা নিয়োগ পরীক্ষাগুলো সব একসঙ্গে হওয়ায় নতুন সমস্যায় পড়তে হয়েছে চাকরিপ্রত্যাশীদের। একই সময়ে পরীক্ষা পড়ায় আবেদন করেও তাদের পরীক্ষা দিতে হচ্ছে বেছে বেছে।
এর মধ্যে গোদের ওপর বিষ ফোঁড়া হয়ে এসেছে পরিবরহন ধর্মঘট। ডিজেলের দাম বাড়ানোর প্রতিবাদে শুক্রবার সকাল থেকে সারা দেশে বাস ও পণ্যবাহী ট্রাক চলাচল বন্ধ রেখেছেন পরিবহন মালিকরা।
সকালে বাস না পেয়ে যাত্রাপথের ভোগান্তি পোহানোর পাশাপাশি গুণতে হয়েছে বাড়তি ভাড়া। পরীক্ষা শেষে বাড়ি ফিরতেও একই যন্ত্রণা পোহাতে হয়েছে।
মিরপুর ১২ নম্বরে পল্লবী মহিলা ডিগ্রি কলেজে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর পরিসংখ্যান সহকারী পদে পরীক্ষা দিতে এসেছিলেন দেলোয়ার হোসেনের মেয়ে।
পরীক্ষা কেন্দ্রের সামনে অপেক্ষায় থাকা দেলোয়ার বললেন, “মতিঝিল থেকে দুইজন ৮০ টাকা বাস ভাড়ায় চলে আসতে পারতাম, কিন্তু ৪০০ টাকা ভাড়ায় সিএনজিতে আসতে হল। আমাদের মত নিম্ন মধ্যবিত্তদের অনেক হিসাবনিকাশ করে মাস চালাতে হয়।
“মেয়ের এক পরীক্ষার পিছনেই যদি এক হাজার টাকা শেষ হয়ে যায়, তাহলে বাকি দিন চলা কঠিন হয়ে যাবে। কয়দিন এ অবস্থা থাকে কে জানে! সরকারের উচিত দ্রুত এর সামাধান করা।”
সায়েদাবাদ থেকে এই কেন্দ্রে পরীক্ষা দিতে এসেছিলেন শাহাদাত হোসেন। তিনি বললেন, “রিকশা নিয়ে বাসস্ট্যান্ডে এসে নিলাম সিএনজি। আর পরীক্ষার সেন্টারটাও চিনি না। সিএনজিওয়ালা এসে এমন জায়গায় নামাল, পরে বিশ মিনিট হেঁটে তারপর সেন্টারে আসছি।”
পরিসংখ্যান সহকারী পদে ঢাকার ৩৯টি কেন্দ্রে শুক্রবারের পরীক্ষায় বসার কথা ছিল ৬১ হাজার ৯২৪ জনের। এর মধ্যে পল্লবী মহিলা ডিগ্রি কলেজ কেন্দ্রে আসন ছিল ১ হাজার পাঁচশ জনের। তবে উপস্থিতি দেখা গেল তুলনামূকভাবে কম।
মিরপুর ১১ নম্বরের কালশী ইসলামিয়া উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ৭৫০ জনের আসন ছিল। সেখানে কথা হল রংপুরের সেনপাড়া থেকে আসা জয়নাল আবেদিনের সঙ্গে। স্ত্রীর পরীক্ষার জন্য তিনি এসেছেন।
বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টায় রংপুর থেকে বাসে রওনা দিয়ে সকালে ঢাকায় আসেন তারা। তবে সকাল থেকে বাস চলাচল বন্ধ থাকায় এখন বাড়ি ফেরা নিয়ে তারা দুঃশ্চিন্তায় পড়েছেন।
দুই বছর আগেও সড়ক অবরোধের কারণে একটি নিয়োগ পরীক্ষার ভাইভায় তার স্ত্রী অংশ নিতে পারেননি জানিয়ে জয়নাল বলেন, “কষ্ট করে চান্স পেয়ে লাভ হয় নাই। এইসব করে লস হয় পাবলিকের। সরকারেরও কিছু না, পরিবহন মালিক-শ্রমিকদেরও কিছু না।”
নরসিংদীর মাধবদী থেকে মেয়ের পরীক্ষার জন্য এসেছিলেন মীর মজুমদার। বাস না থাকায় কয়েক দফা গাড়ি পরিবর্তন করে নানাভাবে তাদের পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছাতে হয়েছে।
ক্ষুব্দ এই ব্যবসায়ী বলেন, “আমাদের দেশে আসলে কোন সিস্টেম নাই। ইচ্ছা হলে গাড়ি চলবে, ইচ্ছা হল বন্ধ করে দিল। পাবলিকের কথা ভাবার সময় কারও নাই।
“বিকালেও পরীক্ষা আছে। পরীক্ষা দিয়ে আবার বাড়িতে যেতে হবে। তখন তো কষ্ট হয়ে যাবে।”
চাকরিপ্রত্যাশীদের এই ভোগান্তি এক শুক্রবারে শেষ হচ্ছে না। শনিবারও ব্যাংকার্স রিক্রুটমেন্টসহ বিভিন্ন দপ্তরের নিয়োগ পরীক্ষা আছে। আর পরিবহন মালিকদের দাবি পূরণের কোনো প্রতিশ্রুতি সরকারের তরফ থেকে না আসায় ধর্মঘট শনিবারও চলবে।