মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সহযোগী হিসেবে গণহত্যা, ধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগসহ মানবতাবিরোধী বিভিন্ন অভিযোগে দুটি মামলায় ১৭ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত শেষ করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা।
Published : 25 Oct 2021, 03:59 PM
এর মধ্যে কুড়িগ্রামের মামলায় আসামি ১৩ জন, যাদের দুই জন আবার পলাতক। সাতক্ষীরার মামলায় চার আসামির মধ্যে তিনজনই পলাতক।
তদন্ত প্রতিবেদন দুটি ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশনে শিগগিরই জমা দেওয়া হবে বলে সোমবার জানিয়েছেন তদন্ত সংস্থার সমন্বয়ক সানাউল হক।
ঢাকার ধানমণ্ডিতে সংস্থার কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, এ দুটি মামলা নিয়ে এখন পর্যন্ত ৮০টি মামলার তদন্ত শেষ হয়েছে।
আসামিদের পরিচিতি, অপরাধ ও মামলা বৃত্তান্ত
সাতক্ষীরার মামলাটিতে মোট চারজন আসামি। এর মধ্যে আকবর আলী শেখকে ২০১৯ সালের ১২ ডিসেম্বর গ্রেপ্তার করা হয়। বাকি তিন আসামি পলাতক। মুক্তিযুদ্ধের সময় আকবর আলী শেখ জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র সংঘের কর্মী ছিলেন।
মাদরাসায় লেখাপড়া করা আকবর আলী উর্দুতে কথা বলতে পারতেন। যে কারণে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সাথে তার সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে। স্বাধীনতার পর কোনো রাজনৈতিক দলে সক্রিয় না হলেও বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর রাজনৈতিক পট পরিবর্তন হলে ১৯৭৮ সালে জামায়াতে ইসলামীর সাংগঠনিক রোকন পদ পান।
এ মামলার অভিযোগে বলা হয়, আকবর আলী শেখসহ (৭০) আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যা, গণহত্যা, নির্যাতন, অগ্নিসংযোগ ও লুণ্ঠনের প্রমাণ পাওয়া গেছে।
আকবর আলী শেখসহ আসামিরা মুক্তিযুদ্ধের সময় সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ ও দেবহাটা এলাকায় সাতজন নিরস্ত্র মানুষকে হত্যা করে। তারা পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সহযোগী হিসেবে হিন্দু জনগেোষ্ঠীকে নিশ্চিহ্ন করতে দেবহাটা ধানার হাদিপুর ঘোষ বাড়িতে হামলা, নির্যাতন, লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগও করে।
পলাতক তিন আসামির পরিচয় প্রকাশ করেনি তদন্ত সংস্থা। এ মামলাটি তদন্ত সংস্থার ৭৯তম তদন্ত প্রতিবেদন।
এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শাহজাহান কবীর। তিনি ২০১৯ সালের ২৪ নভেম্বর তদন্ত শুরু করেন। এক বছর ১০ মাসের তদন্তে ৫০ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে ১৯ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে। এছাড়া ১১১ পাতার নথি সংগ্রহ করা হয়েছে। ১৭৫ পাতার তদন্ত প্রতিবেদনটি চার খণ্ডে প্রস্তুত করা হয়েছে।
কুড়িগ্রামের মামলাটির আসামি ১৩ জন। এর মধ্যে মো. নুরুল ইসলাম ওরফে নুর ইসলাম (৭১), মো. এছাহাক আলী ওরফে এছাহাক কাজী (৭৩),মো. ইসমাইল হোসেন (৭০), মো. ওছমান আলী (৭০), মো. আব্দুর রহমান (৬৫), মো. আব্দুর রহিম ওরফে রহিম মৌলানা (৬৫), মো. শেখ মফিজুল হক (৮১), মো. মকবুল হোসেন ওরফে দেওয়ানী মকবুল (৭২), মো. ছাইয়্যেদুর রহমান মিয়া ওরফে মো.সাইদুর রহমান ওরফে সৈয়দ মওলানা (৬৪), মো. শাহজাহান আলী (৬৪)ও মো. আব্দুল কাদের (৬৭)।
মুক্তিযুদ্ধের আগে মুসলীম লীগের সমর্থক আসামিরা মুক্তিযুদ্ধের পর কোনো রাজনৈতিক দলে সক্রিয় না হলেও তারা জামায়াতে ইসলামী, বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও চরমোনাই পীরের সংগঠন ইসলামী আন্দোলনের সমর্থক হিসেবে পরিচিত।
এই ১১ আসামিকে গত বছর ৯ মার্চ গ্রেপ্তার করা হয়। এরা সবাই কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার। পলাতক দুই আসামির পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি।
মুক্তিযুদ্ধের সময় আসামিরা উলিপুর ও রাজাহাট থানা এলাকায় অপরাধ সংঘটন করে। এসময় তারা মোট ৭৪৫ জনকে হত্যা করে। তাদের হামলা-আক্রমণে ৭০ থেকে ৭৫ জন আহত হয়। ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ২ জন। এছাড়া ২৬০ থেকে ২৭০টি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে, লুটপাট চালায় ৮০ থেকে ৯০টি বাড়িতে।
এ মামলাটি তদন্ত করেছেন মো. রুহুল আমিন। তিনি ২০১৮ সালের ৩০ জানুয়ারি মামলাটির তদন্ত শুরু করেন। তদন্তের সময় ১১১ জনের বক্তব্য শোনেন তদ্তকারী কর্মকর্তা। তার মধ্যে ৭ জনকে সাক্ষী করা হয়। ৩৭৫ পাতার প্রতিবেদনটি প্রস্তুত করা হয়েছে ৩ খণ্ডে। এ মামলাটি তদন্ত সংস্থার সর্বশেষ অর্থাৎ ৮০তম তদন্ত প্রতিবেদন।