বৃহস্পতিবার রাত ১০টার পর তাকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানিয়েছেন কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রফিকুল ইসলাম (ক্রাইম অ্যান্ড অ্যাডমিন)।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ইকবাল নামে ওই যুবককে আমরা সৈকত এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছি।”
সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে ঘোরাঘুরির সময় গ্রেপ্তার করা হয় এই যুবককে।
“কুমিল্লা জেলা পুলিশের একটি দল কক্সবাজারের উদ্দেশে রওনা হয়েছে। দলটি কক্সবাজার পৌঁছালে এই যুবককে তাদের কাছে হস্তান্তর করা হবে,” বলেন কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার।
কুমিল্লা পুলিশের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, শুক্রবার সকাল নাগাদ তারা ইকবালকে হাতে পাবেন বলে আশা করছেন।
কুমিল্লার পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ বলেন, কক্সবাজারে ইকবাল হোসেন নামে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, এটা প্রধান সন্দেহভাজন ইকবাল কি না, তা যাছাই করে দেখবেন তারা।
ইকবালকে জিজ্ঞাসাবাদে কুমিল্লার নানুয়া দীঘির পাড়ে পূজামণ্ডপে কুরআন রেখে সাম্প্রদায়িক উসকানি সৃষ্টির পেছনের ঘটনা জানা যাবে বলে মনে করছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ পুলিশ কর্মকর্তারা।
ইকবালের (৩৫) বাড়ি কুমিল্লা শহরেরই সুজানগরের খানকা মাজার এলাকায়। ওই এলাকার নূর মোহাম্মদ আলমের ছেলে ইকবাল পেশায় রঙমিস্ত্রি।
দুর্গাপূজার মধ্যে গত ১৩ অক্টোবর ভোরে নানুয়া দীঘির পাড়ে দর্পন সংঘের পূজামণ্ডপে হনুমানের মূর্তির কোলে মুসলমানদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কুরআন রাখা দেখে এলাকায় উত্তেজনা ছড়ায়। হামলা, ভাংচুর চালানো হয় অন্তত আটটি মন্দিরে।
তার জের ধরে সেদিনই চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে মন্দিরে হামলা হয়, পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত হয় পাঁচজন।
এর পরের কয়েকদিনে নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম, কক্সবাজারসহ কয়েকটি জেলায় হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর হামলা হয়। তাতে নোয়াখালীতে নিহত হয় দুজন।
এর মধ্যে কুমিল্লা পুলিশ বুধবার নানুয়া দীঘির পাড়ের দুটি সিসি ক্যামেরার ভিডিও বিশ্লেষণ করে ইকবাল নামে ওই যুবককে শনাক্তের কথা জানায়।
একটি সিসি ক্যামেরার ভিডিওতে এক যুবককে রাত ২টার পর স্থানীয় দারোগাবাড়ী শাহ আব্দুল্লাহ গাজীপুরী (রহ.) এর মাজার থেকে বেরিয়ে পূজামণ্ডপের দিকে যেতে দেখা যায়, তখন তার হাতে বই জাতীয় কিছু ছিল।
এরপর ৩টা ১২ মিনিটের দিকে তাকে পূজামণ্ডপের দিক থেকে ফিরে আসতে দেখা যায় আরেক ভিডিওতে, তখন তার হাতে ছিল একটি ‘গদা’।
স্থানীয়দের ভাষ্য অনুযায়ী, ১৩ অক্টোবর ভোরে নানুয়া দীঘির ওই পূজামণ্ডপে থাকা হনুমানের মূর্তির কোলে মুসলমানদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কুরআন রাখা ছিল। তখন হনুমানের মূর্তির হাতে থাকা গদাটি পাওয়া যায়নি।
ইকবালকে গ্রেপ্তারে অনেক প্রশ্নের উত্তর মেলার আশা পুলিশ কর্মকর্তারা করলেও তা নিয়ে সংশয়ী হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত।
তিনি বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামে সাংবাদিকদের বলেন, “কুমিল্লার ঘটনায় ইকবাল হোসেন নামে যাকে শনাক্ত করা হলো.. গতকাল টিভির মাধ্যমে দেখলাম তার নামের আগে একটা শব্দ জুড়ে দিল.. ‘ভবঘুরে’। কখনো কখনও এরকম যাদের ধরা হয়, কখনও বলে ‘পাগল‘, না হয় ‘ভবঘুরে‘।
“এ ভবঘুরে কী করে পবিত্র কুরআন শরিফ চিনল? যদি ভবঘুরে হয়ে থাকে নতুন বই কোত্থেকে আনল? কে দিল? আর হনুমানের গদাটা এমনভাবে সরাল, যাতে হাতের কিছু না হয়, সেখানে আবার পবিত্র কুরআন শরিফটা দিয়ে দিল?- এটা কোনো ভবঘুরের কাজ হতে পারে না।“
এই ঘটনাকে ‘পূর্ব পরিকল্পিত’ আখ্যা দিয়ে আইনজীবী রানা দাশগুপ্ত বলেন, “চক্রান্তকারীরা এর পেছনে আছে। তাদের বের করে আনার দায়িত্ব এখন রাষ্ট্র ও সরকারকে নিতে হবে।”