কুমিল্লার ঘটনার কেন্দ্রে এখন সিসি ক্যামেরার ভিডিও

যে ঘটনা থেকে দুর্গাপূজার মধ্যে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ছড়িয়েছে বিভিন্ন স্থানে, কুমিল্লার সেই পূজামণ্ডপে ‘কুরআন রেখে আসা’ এক যুবককে সিসি ক্যামেরার ভিডিও দেখে চিহ্নিত করার কথা জানিয়েছে পুলিশ।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকও কুমিল্লা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 Oct 2021, 05:07 PM
Updated : 20 Oct 2021, 06:07 PM

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বুধবার রাতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে একথা নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কুমিল্লার ঘটনায় একটি ভিডিও পাওয়া গেছে এবং ওই ভিডিওতে একজনকে শনাক্ত করা হয়েছে।”

কুমিল্লা শহরের নানুয়া দীঘির পাড়ের দর্পন সংঘের অস্থায়ী ওই পূজামণ্ডপে কোনো সিসি ক্যামেরা ছিল না।

তবে কাছে বসানো দারোগাবাড়ী শাহ আব্দুল্লাহ গাজীপুরী (রহ.) এর মাজার এবং দীঘির পাড়ের একটি বাড়ির সিসি ক্যামেরার ভিডিও সংগ্রহ করেছে পুলিশ।

একটি সিসি ক্যামেরার ভিডিওতে এক যুবককে রাত ২টার পর মাজার থেকে বেরিয়ে মণ্ডপের দিকে যেতে দেখা যায়, তখন তার হাতে বই জাতীয় কিছু ছিল।

এরপর ৩টা ১২ মিনিটের দিকে তাকে পূজামণ্ডপের দিক থেকে ফিরে আসতে দেখা যায় আরেক ভিডিওতে, তখন তার হাতে ছিল একটি ‘গদা’।

স্থানীয়দের ভাষ্য অনুযায়ী, ১৩ অক্টোবর ভোরে ওই পূজামণ্ডপে থাকা হনুমানের মূর্তির কোলে মুসলমানদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কুরআন রাখা ছিল। তখন হনুমানের মূর্তির হাতে থাকা গদাটি পাওয়া যায়নি।

ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, ওই যুবক পূজামণ্ডপের দিক থেকে বেরিয়ে আসছেন।

এই যুবককে শনাক্ত করলেও তাকে এখনও গ্রেপ্তার করা যায়নি।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী একদিন আগেই বলেছিলেন, “কুমিল্লার অপরাধী স্থান পরিবর্তন করছে এবং এদিক ওদিক যাচ্ছে।”

কুমিল্লার পু‌লিশ সুপার ফারুক আহমেদ বুধবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ওই যুবকের নাম ইকবাল হোসেন বলে তারা ধারণা করছেন।

পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এই ইকবাল (৩৫) শহরের সুজানগরের খানকা মাজার এলাকার নূর মোহাম্মদ আলমের ছেলে। তিনি পেশায় রঙমিস্ত্রি।

এই যুবককে গ্রেপ্তার করতে পারলেই আসল ঘটনা বেরিয়ে আসবে বলে মনে করছে পুলিশ।

সেদিন সকালে ‘৯৯৯’ এ খবর পেয়ে নানুয়া দীঘির পাড়ের ওই মণ্ডপ গিয়ে কুমিল্লা কোতোয়ালি থানার ওসি কুরআন উদ্ধার করেছিলেন।

তখন ফেইসবুকে তা লাইভ করে ঘটনা বর্ণনা দিয়েছিলেন যিনি, সেই ফায়েজকে পুলিশ সেদিনই গ্রেপ্তারের কথা জানিয়েছে।

ফেইসবুকে ঘটনাটি ছড়িয়ে পড়ার পর উত্তেজনা দেখা দেয়, এরপর ওই পূজামণ্ডপ ভাংচুর হয়, পরে ভাংচুর হয় কুমিল্লা শহরে আরও অন্তত আটটি মন্দির।

ওসির কুরআন উদ্ধারের ভিডিও বিভিন্ন ফেইসবুক অ্যাকাউন্ট ও পেইজ থেকে ছড়াতে দেখা গেছে, যেখানে ছবি-ভিডিওর সঙ্গে ধর্মীয় বিদ্বেষমূলক বক্তব্যও ছিল।

কুমিল্লা মহানগর পূজা উদযাপন কমিটি সাধারণ সম্পাদক শিবু প্রসাদ দত্ত সেদিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, ভিডিও করে সকাল ৬টার মধ্যে সোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেওয়া হয়।

এই ঘটনাটি ‘পরিকল্পিত’ দাবি করে তার ব্যাখ্যায় তিনি বলেছিলেন, “কারণ ৭টার সময় অনেক লোক, ওই লোকগুলো আসল কোথা থেকে, আর ওসিকে ৯৯৯ এ কে টেলিফোন করল? ওসি সাহেব অনেক চেষ্টা করছে, তখন কে বা কারা এটা ভিডিও করে ভাইরাল করে দিয়েছে।”

দুর্গাপূজার মধ্যে কুমিল্লার এই ঘটনার পর চাঁদপুর, নোয়াখালী, কক্সবাজার, ফেনীসহ বিভিন্ন এলাকায় সহিংসতা ছড়ায়।

এসব ঘটনায় ৭২টি মামলা এবং ৪৫০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।