‘পূর্ব পরিকল্পিত’ এই ঘটনার পেছনের ‘চক্রান্তকারীদের’ খুঁজে বের করার জন্য জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানিয়েছেন তিনি।
বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নেতা এই আইনজীবী বৃহস্পতিবার নিজ বাসায় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ দাবি জানান।
রানা দাশগুপ্ত বলেন, “কুমিল্লার ঘটনায় ইকবাল হোসেন নামে যাকে শনাক্ত করা হলো.. গতকাল টিভির মাধ্যমে দেখলাম তার নামের আগে একটা শব্দ জুড়ে দিল.. ‘ভবঘুরে’। কখনো কখনও এরকম যাদের ধরা হয়, কখনও বলে ‘পাগল‘, না হয় ‘ভবঘুরে‘।
“এ ভবঘুরে কী করে পবিত্র কুরআন শরিফ চিনল? যদি ভবঘুরে হয়ে থাকে নতুন বই কোত্থেকে আনল? কে দিল? আর হনুমানের গদাটা এমনভাবে সরাল, যাতে হাতের কিছু না হয়, সেখানে আবার পবিত্র কুরআন শরিফটা দিয়ে দিল।- এটা কোনো ভবঘুরের কাজ হতে পারে না।“
এই ঘটনাকে ‘পূর্ব পরিকল্পিত’ আখ্যা দিয়ে আইনজীবী রানা দাশগুপ্ত বলেন, “চক্রান্তকারীরা এর পেছনে আছে। তাদের বের করে আনার দায়িত্ব এখন রাষ্ট্র ও সরকারকে নিতে হবে।”
এর মধ্যে বুধবার সিসি ক্যামেরার ভিডিও দেখে কুমিল্লার সেই পূজামণ্ডপে ‘কুরআন রেখে আসা’ এক যুবককে চিহ্নিত করার কথা জানিয়েছে পুলিশ।
একটি সিসি ক্যামেরার ভিডিওতে ওই যুবককে রাত ২টার পর মাজার থেকে বেরিয়ে মণ্ডপের দিকে যেতে দেখা যায়, তখন তার হাতে বই জাতীয় কিছু ছিল।
এরপর ৩টা ১২ মিনিটের দিকে তাকে পূজামণ্ডপের দিক থেকে ফিরে আসতে দেখা যায় আরেক ভিডিওতে, তখন তার হাতে ছিল একটি ‘গদা’।
ওই যুবককে শহরের সুজানগরের খানকা মাজার এলাকার নূর মোহাম্মদ আলমের ছেলে ইকবাল (৩৫) হিসেবে শনাক্ত করার কথা বরছে পুলিশ।
পেশায় রঙমিস্ত্রি ইকবালকে বিভিন্ন গণমাধ্যমে ‘ভবঘুরে’ ও ‘মাদকাসক্ত‘ বলেও তুলে ধরা হচ্ছে।
এর আগে চট্টগ্রাম-৯ আসনের সংসদ সদস্য ও শিক্ষা উপ-মন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বাসায় এসে রানা দাশগুপ্তর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
সাক্ষাতে বিষয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “ধর্মীয় সংখ্যালঘু বিশেষ করে সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় যারা ক্ষুব্ধ তাদের মনের কথাগুলো আমি তার কাছে ব্যক্ত করেছি।
“আমরা দুইজন মিলে করণীয় কী এবং কী হওয়া উচিত সেটা নিয়ে আলোচনা করেছি। ভবিষ্যতে বাংলাদেশে সবাই মিলে সুখে-শান্তিতে সম্প্রীতিতে কীভাবে ভাই-ভাই হিসেবে বসবাস নিশ্চিত করতে পারব সে বিষয় নিয়ে তার সাথে আমার কথা হয়েছে। আমি আমার কথা বলেছি, তিনিও তার কথা বলেছেন।”
সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে পরিকল্পিতভাবে কুমিল্লায় পূজামণ্ডপে কুরআন শরিফ রাখা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন শিক্ষা উপ-মন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।
নওফেল বলেন, “সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে সকল প্রচেষ্টা করা হচ্ছে বিভিন্ন পক্ষ থেকে। শুধু একটা রাজনৈতিক শক্তি আমি বলব না, অনেক জায়গা থেকে এটা করা হচ্ছে। যারা প্রকাশ্য রাজনীতিতে পরাজিত হয়েছে তারা গোপনে এ কাজটি করছে। এটাই হচ্ছে বাস্তবতা।”
তিনি আরও বলেন, “একটি রাজনৈতিক দলের সদর দপ্তরে কী নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল এবং ৪৮ ঘণ্টা আগে একজন পলাতক দাগি আসামি কি প্রস্তুতির কথা তাদেরকে বলেছে সেটা যদি খতিয়ে দেখা যায় আমরা মনে করি আরও কিছু তথ্য উপাত্ত পাব।”
রানা দাশ গুপ্ত সাংবাদিকদের বলেন, ধর্মীয় সংখ্যালঘু বিশেষ করে সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় যারা ক্ষুব্ধ তাদের ‘মনের কথাগুলো’ আমি তার কাছে ব্যক্ত করেছি।
“এ ক্ষোভ এবং দূরত্বটা যদি অব্যাহত থাকে এটা কারো জন্য শুভ হবে না। দেশের জন্যতো নয়ই… অতএব করণীয় কী?- রাষ্ট্রের রাজনৈতিক দল এবং সরকারের নির্ধারণ করা করা দরকার।”
নিজেদের আলোচনা প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করার জন্য নওফেলের কাছে অনুরোধ জানান রানা দাশ গুপ্ত।
সাম্প্রতিক সময়ের সাম্প্রদায়িক হামলায় প্রশাসনের ব্যর্থতা আছে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “আমি মাননীয় মন্ত্রীকে বলেছি…সর্বত্রই প্রশাসনের গাফিলতি আছে। রাজনৈতিক দলের গাফিলতি আছে। আইন শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর পাশে কোনো রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীকে দেখা যায়নি।”
তিনি বলেন, শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষা এবং সাম্প্রদায়িক হামলাকারীদের প্রতিরোধের বিষয়টি যদি শুধু পুলিশের ওপর ছেড়ে দেয়া হয় তাহলে এটা তাদের পক্ষে সম্ভব না। যদি না তাদের হাতিয়ারের সাথে জনগণ অবস্থান গ্রহণ না করে। এখন তা কীভাবে করবে রাষ্ট্রের সরকার এবং রাজনৈতিক দলকে নির্ধারণ করতে হবে।
শনিবার সাম্প্রদায়িক হামলার প্রতিবাদে দেশব্যাপী গণঅবস্থনের চট্টগ্রামের কর্মসুচিতে নওফেলকে সংহতি প্রকাশেরও অনুরোধ জানান রানা দাশ গুপ্ত।