‘সর্বোচ্চ সতর্ক’ থাকার পরও ‘অপ্রীতিকর’ ঘটনা: পুলিশ

দুর্গাপূজার মধ্যে কুমিল্লায় পূজামণ্ডপে হামলার পর সারাদেশে পুলিশ ‘সর্বোচ্চ সতর্ক’ ছিল বলে বাহিনীর পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 Oct 2021, 03:10 PM
Updated : 20 Oct 2021, 03:13 PM

কিন্তু তারপরও আরও কয়েকটি জেলায় সহিংসতা ছড়িয়ে সাতজনের মৃত্যুর পর এবার পুলিশ পরিস্থিতির উন্নয়নে সাধারণ মানুষের সহায়তা চেয়েছে।

পুলিশ সদর দপ্তর বুধবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে কুমিল্লার হামলা, তার জেরে অন্য জেলায় সহিংসতা, পুলিশের পদক্ষেপ সবিস্তারে তুলে ধরা হয়।

কুমিল্লার একটি পূজামণ্ডপে কুরআন অবমাননার কথিত অভিযোগ তুলে ধরে গত ১৩ অক্টোবর ওই নগরীর অন্তত আটটি মন্দিরে হামলা, ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ হয়।

তার জের ধরে সেদিনই চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে মন্দিরে হামলা হয়, পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত হয় চারজন। এরপর চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, ফেনীতেও সহিংসতা ছড়ায়। নোয়াখালীতে নিহত হয় দুজন।

সবশেষ ১৭ অক্টোবর রাতে রংপুরের পীরগঞ্জের মাঝিপাড়ায় হিন্দুদের বাড়িতে আগুন দেওয়া হয় ফেইসবুকে এক তরুণের কথিত ধর্ম অবমাননার পোস্টকে কেন্দ্র করে। সেখানে জেলেপল্লীর ২৯টি বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়; ভাংচুর করা হয় মন্দির।

পুলিশ সদর দপ্তরের বিবৃতিতে বলা হয়, “কুমিল্লার ঘটনাকে কেন্দ্র করে যাতে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি না ঘটে, সেজন্য সারাদেশে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে, পুলিশ টহল জোরদার করা হয়েছে এবং গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে।

“পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সর্বোচ্চ সতর্কতা এবং প্রচেষ্টা সত্ত্বেও দেশের বিভিন্ন স্থানে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে।”

কুমিল্লার ঘটনায় ফেইসবুকে ভিডিও তোলার পর দ্রুত তা ছড়িয়ে পড়ে বলে স্থানীয়রা জানায়। সোশাল মিডিয়ায় নানা ‘অপপ্রচারের’ কথাও বলছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

গুজব ও উসকানি ঠেকাতে সোশাল মিডিয়ার নজরদারি রাখার কথা জানিয়ে পুলিশের বিবৃতিতে বলা হয়, “পরিস্থিতির অবনতি রোধকল্পে পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি এবং অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এবং সরকারের সকল গোয়েন্দা সংস্থা সার্বক্ষণিকভাবে কড়া নজরদারি অব্যাহত রেখেছে।

” যে কোনো বিভ্রান্তিকর তথ্য অথবা গুজব কিংবা উসকানিতে বিভ্রান্ত বা উত্তেজিত না হয়ে তাৎক্ষণিকভাবে নিকটস্থ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে অবহিত করা এবং পরিস্থিতির উন্নয়নে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে সহায়তা করার জন্য সকলেল প্রতি বিশেষ অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ।”

কুমিল্লার কাপড়িয়াপট্টি শ্রী শ্রী চান্দমনি রক্ষাকালী মন্দিরে প্রতিমার হাত ভেঙে দেয় হামলাকারীরা। ছবি: মাহমুদ জামান অভি

৭২ মামলা, আটক ৪৫০

পুলিশের বিবৃতিতে জানানো হয়, সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনায় সারাদেশে মোট ৭২টি মামলা হয়েছে এবং ঘটনার সঙ্গে জড়িত ৪৫০জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

“আরও মামলা রুজু প্রক্রিয়াধীন রয়েছে এবং দুষ্কৃতিকারীদের গ্রেপ্তার অভিযান অব্যাহত আছে।”

কুমিল্লা, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী, রংপুর ছাড়াও কক্সবাজারের পেকুয়া ও চকরিয়া, সিলেটের জকিগঞ্জ, মৌলভীবাজারের কুলাউড়া ও কমলগঞ্জ, হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ ও গাজীপুরের কাশিমপুরে হামলা-ভাংচুরের উল্লেখ রয়েছে পুলিশের বিবৃতিতে।

এই সহিংসতায় মোট সাতজন নিহত হয় বলে পুলিশ জানিয়েছে। এদের মধ্যে পাঁচজন হাজীগঞ্জের এবং দুজন নোয়াখালীর। পাঁচজন মুসলমান ও দুজন হিন্দু।

হাজীগঞ্জে নিহতদের বিষয়ে বলা হয়েছে, মন্দির ও পূজামণ্ডপে হামলাকারীদের নিবৃত্ত করতে গেলে তারা পুলিশের উপর হামলা চালায়। তখন ‘জানমাল রক্ষা ও আত্মরক্ষার্থে’ পুলিশ গুলি চালালে পাঁচজন নিহত হয়।  

এসব এলাকায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গিয়ে ৫০ পুলিশ সদস্য আহত হন বলে বিবৃতিতে জানানো হয়েছে।